তোপের মুখে যোগদান করতে পারেননি ববির নতুন ট্রেজারার

3 hours ago 2

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) যোগদান করতে পারেননি নবনিযুক্ত ট্রেজারার অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবু হেনা মোস্তফা কামাল। এসময় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে যোগদান না করেই ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) সকালেও তার যোগদান ঠেকাতে ক্যাম্পাসের গ্রাউন্ড ফ্লোরে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে নবনিযুক্ত এ ট্রেজারার যোগদান করতে গেলে তাতে বাধা দেন শিক্ষার্থীরা। 

শিক্ষার্থীরা বলেন, এই মোস্তফা কামাল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সীমাহীন দুর্নীতি করেছেন, যার তথ্য-প্রমাণ বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। এমন দুর্নীতিগ্রস্ত লোককে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার হিসেবে দেখতে চাই না। কোনোভাবেই এ ট্রেজারারের যোগদান মেনে নেবেন না শিক্ষার্থীরা। 

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে রসায়ন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাকিব আহমেদ বলেন, একটি সূত্র পরিকল্পনার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব জায়গায় স্বৈরাচারের পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। আমাদের সদ্য নিয়োগ পাওয়া ট্রেজারার আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্বৈরাচারের দোসর কলিমুল্লাহর সহযোগী। মূলত কলিমুল্লাহর ব্যক্তি স্বার্থ বাস্তবায়নের জন্যই তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ববি শিক্ষার্থীরা কোনো স্বৈরাচারের দোসরকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেবে না। এর ব্যত্যয় ঘটলে আমরা বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলব। 

শিক্ষার্থীরা জানান, আওয়ামী দোসর ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার পদে যেন যোগদান করতে না পারে সেই দাবি তোলার পর মধ্যরাতে সহকারী রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) ট্রেজারারের কার্যালয়ে জনবল দিয়ে একটি অফিস আদেশ জারি করেন। এর প্রতিবাদ জানানো হয়েছে, ওই সময় সহকারী রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) ড. মোছা. সানজিদা সুলতানা জানিয়েছেন, অফিস আদেশটি উপাচার্যর নির্দেশে করেছেন, এখানে তার নিজের কোনো উদ্যোগ নেই। তার এ দাবির বিষয়টি প্রেস ব্রিফ করে প্রকাশ্যে জানানোর কথা বলা হয়েছে এবং এজন্য তাকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে সহকারী রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) ড. মোছা. সানজিদা সুলতানা কালবেলাকে বলেন, শিক্ষার্থীরা আমার কাছে এসে ট্রেজারারের কার্যালয়ে জনবল সংযুক্ত করার অফিস আদেশের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমি তাদের জানিয়েছি- বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে হয়েছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তিনি যা বলবেন ছোট পদে চাকরি করে তাই বাস্তবায়ন করা আমার কাজ। এখানে আমার নিজের মতামতের কোনো বিষয় নেই।

তিনি বলেন, গত রাতে উপাচার্য ডেকে যখন আমাকে এ আদেশটি জারি করতে বলেছিলেন, তখন আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি তাকে বোঝাতে এবং রেজিস্ট্রার স্যারের মাধ্যমে বিষয়টি করার জন্য। কিন্তু মৌখিকভাবে তিনি আমাকে বলেছেন, এতে আমার কোনো সমস্যা হবে না। আমাকেই এই আদেশটিতে স্বাক্ষর করতে হবে। ফলে আমার কিছু করার ছিল না। এখন শিক্ষার্থীরা আমাকে ভুল বুঝছে।

তিনি বলেন, সকালে শিক্ষার্থীরা আসার পরই রেজিস্ট্রার স্যারকে বিষয়টি অবহিত করেছি। শিক্ষার্থীরা বলেছে আমি যেন সংবাদ সম্মেলন করে আমার অবস্থান পরিষ্কার করি। কিন্তু চাকরিবিধি অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া সেটি আমি করতে পারি না। বাকি বিষয় এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক রাহাত হোসাইন ফয়সাল বলেন, নবনিযুক্ত ট্রেজারার এসেছিলেন যোগদান করতে কিন্তু শিক্ষার্থীরা বাধা দেওয়ায় তিনি চলে গেছেন।

এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য ড. শুচিতা শারমিনের কার্যালয়ে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, অফিস আদেশটি যেহেতু আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গতরাতে হয়েছে, তাই তিনিই এ বিষয়ে বলতে পারবেন। তিনি মিটিংয়ের জন্য ঢাকায় রয়েছেন। এখন শিক্ষার্থীরা আমাদের চাপ দিচ্ছে বিষয়টি সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করার জন্য। তারা সময় দিয়েছে, আমরা আলোচনা কতরছি এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

Read Entire Article