থানা হাজতে যুবকের মৃত্যু, এএসআইসহ ৩ পুলিশ প্রত্যাহার

8 hours ago 5
কক্সবাজারের চকরিয়া থানা হাজতে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম দুর্জয় চৌধুরী (২৭)। তিনি চকরিয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড ভরামুহুরী হিন্দুপাড়ার কমল চৌধুরীর ছেলে।  পুলিশের দাবি, দুর্জয় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে দুর্জয়ের পরিবারের দাবি, তাকে হত্যা করা হয়েছে।  এ ঘটনায় থানার এক সহকারী উপপরিদর্শকসহ তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এদিকে, থানা হাজতে দুর্জয়ের মৃত্যুর প্রতিবাদে চকরিয়া থানার সামনে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী। থানা সূত্রে জানা যায়, দুর্জয় চৌধুরী চকরিয়া সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতি করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করেন তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাতে তাকে হেফাজতে নেয় চকরিয়া থানা পুলিশ।  এরপর বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) গভীর রাতে থানা হাজতের ভেতরে ঝুলন্ত অবস্থায় দুর্জয়ের মরদেহ পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ।  পরে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রূপায়ণ দেবের উপস্থিতিতে মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নামিয়ে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, দুর্জয়ের বিরুদ্ধে একটি চেক প্রতারণার অভিযোগ করেন তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া বেগম। যেহেতু বিষয়টি দুদকের শিডিউলভুক্ত; তাই আমরা মামলা না নিয়ে জিডি হিসেবে ট্রিট করে তাকে হেফাজতে নিয়ে থানা হাজতে রাখি বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায়। অন্য আসামি রাখতে গিয়ে রাত ৪টার দিকে দেখা যায় নিজের শার্ট দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন দুর্জয়। পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও জানান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশের সুরতহাল করা হয়েছে। দায়িত্বরত কারও গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। কারও গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় এএসআই হানিফ মিয়াসহ তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, এ ঘটনায় প্রশাসনিক কারণে এএসআই হানিফ মিয়াসহ তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এদিকে থানা হেফাজতে নির্যাতনে দুর্জয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে তার পরিবার।  দুর্জয়ের বাবা কমল চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া বেগম দুটি চেকে মোট ৪০ হাজার টাকা অনিয়মের কথা বললে আমি তাকে ৭৬ হাজার ৬০০ টাকা প্রদান করি। এরপর প্রধান শিক্ষক কিছুদিন পর আবার ২ লাখ টাকার চেকের কথা বলেন। বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান শিক্ষকসহ আরও কয়েকজন সহকারে আমি এবং আমার ছেলে দুর্জয় থানায় যাই। পরে প্রধান শিক্ষকের কথায় আমার ছেলেকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। থানায় নির্যাতনের কারণেই আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে, থানা হাজতে দুর্জয় চোধুরীর মৃত্যুর প্রতিবাদে এলাকাবাসী চকরিয়া থানার সামনে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে মানববন্ধন করেন তারা। দুর্জয় চৌধুরীকে থানা হাজতে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে বিক্ষোভকারীরা বলেন, হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
Read Entire Article