দখল-দূষণে দামোদর খালের দম যায় যায়
পিরোজপুর শহরের উপকণ্ঠ দিয়ে প্রবাহিত ঐতিহ্যবাহী খালের নাম ‘দামোদর’। জনগুরুত্বপূর্ণ এই খালটি বলেশ্বর নদী থেকে সৃষ্টি হয়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে কচা নদীতে মিলিত হয়েছে। দুই নদীর সংযোগ সৃষ্টিকারী খালটি পৌরসভার ২, ৩, ৪, ৫, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে খালটির দুপাশ দখলে নিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এ কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে খালটি। ঐতিহ্যবাহী দামোদর খাল একসময় একটি নদী ছিল, যা কালের পরিক্রমায় খালে পরিণত হয়েছে। পিরোজপুরবাসীর কাছে ‘ছোট নদী’ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো এই দামোদর খাল। মালবোঝাই কার্গো, ট্রলারসহ নানারকম নৌযান এ খাল দিয়ে চলাচল করতো। খুব সহজেই এ খালের মাধ্যমে ট্রলারযোগে এক নদী থেকে অন্য নদীতে গিয়ে মাছ ধরতেন জেলেরা। বর্তমানে নাব্য সংকট এবং দখল ও দূষণের কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী এই খাল। সরেজমিনে দেখা যায়, উৎস মুখসহ খালের দুপাশে অনেক স্থানে পাকা-আধাপাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ির বর্ধিতাংশ গড়ে তোলা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে দখল ও ভরাটের ফলে খালটি সরু হয়ে নৌ-চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভাটার সময় প্রায় পানিশূন্য হয়ে পড়ে। বড়
পিরোজপুর শহরের উপকণ্ঠ দিয়ে প্রবাহিত ঐতিহ্যবাহী খালের নাম ‘দামোদর’। জনগুরুত্বপূর্ণ এই খালটি বলেশ্বর নদী থেকে সৃষ্টি হয়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে কচা নদীতে মিলিত হয়েছে। দুই নদীর সংযোগ সৃষ্টিকারী খালটি পৌরসভার ২, ৩, ৪, ৫, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে খালটির দুপাশ দখলে নিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এ কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে খালটি।
ঐতিহ্যবাহী দামোদর খাল একসময় একটি নদী ছিল, যা কালের পরিক্রমায় খালে পরিণত হয়েছে। পিরোজপুরবাসীর কাছে ‘ছোট নদী’ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো এই দামোদর খাল। মালবোঝাই কার্গো, ট্রলারসহ নানারকম নৌযান এ খাল দিয়ে চলাচল করতো। খুব সহজেই এ খালের মাধ্যমে ট্রলারযোগে এক নদী থেকে অন্য নদীতে গিয়ে মাছ ধরতেন জেলেরা। বর্তমানে নাব্য সংকট এবং দখল ও দূষণের কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী এই খাল।
সরেজমিনে দেখা যায়, উৎস মুখসহ খালের দুপাশে অনেক স্থানে পাকা-আধাপাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ির বর্ধিতাংশ গড়ে তোলা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে দখল ও ভরাটের ফলে খালটি সরু হয়ে নৌ-চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভাটার সময় প্রায় পানিশূন্য হয়ে পড়ে। বড় ট্রলার ও নৌকা খালে প্রবেশ করতে পারে না।
দোকান ও বাসাবাড়ির বর্জ্যে ভরা খালপাড়। পৌরসভার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত শাখা খাল ও ড্রেনেজের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পৌরবর্জ্য খালের পানিতে পড়ে খালের পানিকে দূষণ করছে। পৌর কাঁচাবাজার ও মাছের বাজারের বেশিরভাগ ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয় এই খালে। ফলে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে খালটি। এক সময়ের খরস্রোতা খালটি বর্তমানে দূষণ ও নাব্য সংকটে পড়েছে।
খালপাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, খালটির পানি এখনো মানুষ তাদের গোসলসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করছে। আশপাশের ময়লা-আবর্জনা ও পৌরসভার ড্রেনেজের পানি এ খালের পানিকে দূষিত করছে, যা সাধারণত মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলছে। মূল খাল দখলের সঙ্গে সঙ্গে এ খালের সঙ্গে সংযুক্ত আরও ৮-১০টি শাখা খালও পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। দখলদাররা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে কেউ কোনো ধরনের প্রতিবাদ করেন না।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ২০২১ সালে ৪৫ লাখ টাকায় খালটি খনন করা হলেও নাব্য সংকট, দখলদারিত্ব ও দূষণের খুব বেশি একটা প্রতিকার হয়নি। এক বছর যেতে না যেতেই ২০২৩ সালে খালটি পুনরায় খননের জন্য ৯০ লাখ টাকার টেন্ডার দেওয়া হয়। কিন্তু দুপাশের অবৈধ দখলদারিত্বের কারণে খালটি পুরোপুরি খনন করা সম্ভব হয়নি। ১৬ কিলোমিটার খালের মধ্যে চার কিলোমিটার খননের কথা থাকলেও মাত্র দুই কিলোমিটার খাল খননের পর কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়া অবৈধ দখলদারের ১১৫ জনের একটি তালিকা করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মনিরুজ্জামান নাসিম আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘দামোদর খালটি একসময় দামোদর নদ ছিল। একসময় এখানে স্টিমার চলতো। এই খাল এই শহরের প্রাণ। এখান থেকে ৩২টি ছোট ছোট খাল ঢুকে গেছে শহরের দুই পাড়ে। শহর এলাকার কৃষিজমির সেচ ব্যবস্থা এই খাল থেকেই হয়। অথচ দূষণ ও দখলে অনেকটা মৃতপ্রায় খালটি।’
পিরোজপুর জেলা নাগরিক উন্নয়ন কমিটির সদস্য সচিব মাইনু আহসান মুন্না বলেন, ‘এটি ক্রমান্বয়ে পরিকল্পিতভাবে দখল ও ভরাটের ফলে মৃত খালে পরিণত হয়েছে।’
উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি খালিদ আবু জাগো নিউজকে বলেন, ‘একসময় এখানে ইস্টিমার চলতো, এখন একটি নৌকাও চলতে পারে না। ছোটবেলায় এখানে গয়না নৌকায় লোকজন চলাচল করতো। আমরা সেই নৌকায় মঠবাড়িয়া, ভান্ডারিয়া, তুষখালী যেতাম। এখন আর সেই আগের দামোদর নদ নেই। এর একমাত্র কারণ দখল ও দূষণ।’
পৌর নাগরিক জিয়াউল আহসান বলেন, ‘প্রশাসনের কার্যকরী উদ্যোগ ও খননের অভাবেই খালটির আজ এই দশা। পিরোজপুরবাসীর স্বার্থেই খালটি রক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (পাউবো) নুসাইর হোসেন বলেন, ‘দামোদর খালের দখলদারদের একটি তালিকা ডিসি অফিসে পাঠিয়েছে। খালটি ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত। খালের মালিক জেলা প্রশাসক। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। তখন আমরা জেলা প্রশাসনকে সহায়তা করতে পারবো।’
পিরোজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আলাউদ্দিন ভূঞা জননী বলেন, বরাদ্দ চেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাবর পত্র লেখা হচ্ছে। আমরা আশা করছি সুফল পাবো।
এসআর/জেআইএম
What's Your Reaction?