দপ্তরি দিয়ে চলছে সেন্টমার্টিনের একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

2 months ago 7

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের জিনজিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটে নিয়মিত পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা। বিদ্যালয়ে মাত্র ৩ জন শিক্ষক থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে যেতে না পেরে বিদ্যালয়টি এখন শিক্ষকবিহীন হয়ে পড়েছে। কাজ চলছে দপ্তরি দিয়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের একমাত্র সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জিনজিরা প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ৭ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও ৩ জন শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। প্রধান শিক্ষক না থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও একজন সহকারী শিক্ষক ও একজন প্যারা শিক্ষক রয়েছেন। বিদ্যালয়ে ২০২ জন ছাত্র-ছাত্রী থাকলেও নিয়মিত একশ-দেড়শ জন ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত থাকে।

অপরদিকে উক্ত দুইজন শিক্ষকের বাড়ি টেকনাফে। তারা সরকারি ছুটি কাটিয়ে গত ২৪ জুন থেকে বৈরী আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল থাকায় বাড়ি থেকে সেন্টমার্টিনে তাদের কর্মস্থলে যেতে পারছেন না।

স্থানীয় শিক্ষক যিনি রয়েছেন তিনিও চিকিৎসার কারণে ছুটিতে। বর্তমানে শিক্ষক ছাড়াই দপ্তরি দিয়ে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি ছুটি শেষে গত ২৪ জুন বিদ্যালয় খোলা হলেও ২৯ জুন পর্যন্ত কোনো শিক্ষক সেন্টমার্টিনে পৌঁছাতে পারেননি। এ কারণে জিনজিরা সরকারি বিদ্যালয়ের ক্লাসরুম, শিক্ষকদের অফিস কক্ষ খালি। শিক্ষক না থাকার কারণে বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতিও কমে গেছে। তবুও কিছু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী স্কুলে আসা-যাওয়া করছে, তবে পড়াশোনা বা ক্লাস হচ্ছে না।

এ বিষয়ে জিনজিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আবু তাহের বলেন, ঈদের ছুটি কাটিয়ে বাড়ি থেকে সেন্টমার্টিনে যেতে পারছি না, আমিসহ আমার আরেক সহকর্মী যিনি রয়েছেন দুজনের বাড়ি টেকনাফে। বর্তমানে বৈরী আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল। বেশ কয়েকবার ট্রলার নিয়ে সেন্টমার্টিনে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু সাগর উত্তাল থাকায় মাঝপথ থেকে ফেরত আসতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জিনজিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ৭ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও আমি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও একজন সহকারী শিক্ষক ও আরেকজন প্যারা শিক্ষক দিয়ে স্কুলের পাঠদান করতে হচ্ছে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, দ্বীপের শিক্ষার মান আরও উন্নত করতে হবে। ছেলে-মেয়েরা শুরু থেকে যদি প্রাথমিক শিক্ষা ভালোভাবে না পায়, তাহলে তারা উচ্চ মাধ্যমিকে গিয়ে ভালো শিক্ষা অর্জন করতে পারবে না। ফলে শিশুরা পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়বে।

তিনি আরও বলেন, জিনজিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে যে শিক্ষক সংকট দেখা দিয়েছে, যত দ্রুত বিদ্যালয়ের শূন্যস্থান পূরণ করা দরকার।

এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান আরজু বলেন, ঈদের ছুটির পর গত মঙ্গলবার ২৪ জুন বিদ্যালয় খুলেছে। বিদ্যালয়ে প্যারা শিক্ষক ছাড়া বাকি শিক্ষকদের বাড়ি টেকনাফে। ছুটি শেষে তারা বৈরী আবহাওয়ায় টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে যেতে পারছেন না।

তিনি আরও বলেন, সেন্টমার্টিনে যেতে সাগর পথে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে জিনজিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা সেন্টমার্টিনে যেতে চান না। উক্ত বিদ্যালয়ে শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহেসান উদ্দিন বলেন, জিনজিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট ও বর্তমান সমস্যার বিষয়টিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে।

এফএ/জেআইএম

Read Entire Article