দশ বছর পর সিজিপিএ-৪ পেয়ে মাস্টার্স শেষ করলেন রাবির সেই রফিকুল
দীর্ঘ এক দশক ভোগান্তি ও জটিলতা পেরিয়ে অবশেষে মাস্টার্সের ফলাফল পেলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফলিত গণিত বিভাগের ২০০৭-০৮ সেশনের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের রিভিউ তদন্ত শেষে বুধবার (২৬ নভেম্বর) সিজিপিএ-৪ পেয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি। শিবির সন্দেহে এবং বিভাগের শিক্ষকদের অন্তঃকোন্দলে মাস্টার্সের থিসিস জালিয়াতির অভিযোগে এনে তার ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়। ফলে গত ১০ বছরেও প্রকাশ করা হয়নি রফিকুলের মাস্টার্সের ফলাফল। ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর ‘শিবির সন্দেহে’ আজও মাস্টার্সের সনদ পাননি রফিকুল ইসলাম শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাগো নিউজ। এরপরই বিষয়টি হল প্রশাসনের নজরে আসে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৬তম সিন্ডিকেট সভায় এ ঘটনায় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল হককে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্রত্ব বাতিল বিষয়ে গঠিত রিভিউ কমিটির সদস্যদের প্রতিবেদনের আলোকে রফিকুল ইসলামের ছাত্রত্ব পুনর্বহাল ও তার পরীক্ষার অপ্রকাশিত ফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রফিকুল ২০০৭-২০০৮ সেশ
দীর্ঘ এক দশক ভোগান্তি ও জটিলতা পেরিয়ে অবশেষে মাস্টার্সের ফলাফল পেলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফলিত গণিত বিভাগের ২০০৭-০৮ সেশনের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের রিভিউ তদন্ত শেষে বুধবার (২৬ নভেম্বর) সিজিপিএ-৪ পেয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি।
শিবির সন্দেহে এবং বিভাগের শিক্ষকদের অন্তঃকোন্দলে মাস্টার্সের থিসিস জালিয়াতির অভিযোগে এনে তার ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়। ফলে গত ১০ বছরেও প্রকাশ করা হয়নি রফিকুলের মাস্টার্সের ফলাফল।
২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর ‘শিবির সন্দেহে’ আজও মাস্টার্সের সনদ পাননি রফিকুল ইসলাম শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাগো নিউজ। এরপরই বিষয়টি হল প্রশাসনের নজরে আসে।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৬তম সিন্ডিকেট সভায় এ ঘটনায় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল হককে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্রত্ব বাতিল বিষয়ে গঠিত রিভিউ কমিটির সদস্যদের প্রতিবেদনের আলোকে রফিকুল ইসলামের ছাত্রত্ব পুনর্বহাল ও তার পরীক্ষার অপ্রকাশিত ফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রফিকুল ২০০৭-২০০৮ সেশনে ফলিত গণিত বিভাগে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষেই তিনি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। পরের বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সরকার গঠন করে। তারপর থেকে শুরু হয় বিরোধীদের দমন-পীড়ন। তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাবে তাকে শিবির ট্যাগ দিয়ে গ্রেফতার করা হয় এবং কারাগারে পাঠানো হয়। তবে জেল থেকেই পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আবারও প্রথম হন তিনি। অনার্সে ৩.৮০ সিজিপিএ পেয়ে প্রথম স্থান লাভ করেন। অর্জন করেন গোল্ড মেডেল।
২০১৪ সালে বিভাগে ২ জন প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে রফিকুল অ্যাপিয়ার্ড সনদ দিয়ে আবেদন করেন। এরপরই শুরু হয় নতুন জটিলতা। একই বছর বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর শামসুল আলম সরকারের বিরুদ্ধে নম্বরপত্র টেম্পারিংয়ের অভিযোগ তোলা হয়, যার সঙ্গে রফিকুলকেও জড়ানো হয়। যদিও পরবর্তীতে তদন্তে এর সত্যতা মেলেনি।
পরে বিভাগের আরেক শিক্ষক প্রফেসর আশরাফুজ্জামান খান আকাশ তৎকালীন উপাচার্যের কাছে রফিকুলের ব্যাপারে থিসিস জালিয়াতির অভিযোগ করেন এবং বিভাগের কিছু শিক্ষার্থীকে দিয়ে মানববন্ধনও করান। রাজনৈতিক চাপ ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের ফলে শেষ পর্যন্ত সুপারভাইজার কর্তৃক থিসিস জালিয়াতির অভিযোগে রফিকুলের ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর রেজিস্ট্রেশন পুনর্বহালের আবেদন করেন রফিকুল। আবেদনের প্রেক্ষিতে রিভিউ কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তার ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিয়ে সনদ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।
ফল প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় রফিকুল বলেন, আল্লাহর কাছে শুধু চেয়েছিলাম, মৃত্যুর আগে যেন সম্মানটা ফিরে পাই। আজ সেই দোয়া কবুল হয়েছে। এ সম্মান ফিরে পেতে অনেকের ত্যাগ রয়েছে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, একজন সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নষ্ট করার পেছনে যেসব শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জড়িত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কী ব্যবস্থা নেবে?
মনির হোসেন মাহিন/এফএ/এমএস
What's Your Reaction?