দানের ৭ উপকার

3 hours ago 5

‘সবার সুখে হাসব আমি/কাঁদব সবার দুখে/নিজের খাবার বিলিয়ে দেব/অনাহারীর মুখে’ কবিতার মতো ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে খাবার দেবে মানুষ, বিপদে পাশে দাঁড়াবে, এটাই চেয়েছিলেন কবি। অসহায় মানুষ পাবে সেবা ও সাহস। এভাবেই সমাজ এগিয়ে যাবে। আর এভাবে মানুষের উপকার করতে হলে একটি সুন্দর ও মানবিক মন দরকার। কারো পর্যাপ্ত অর্থ নেই, তবে দেওয়ার মতো সময় আছে, শ্রমের জন্য শরীরে বল আছে, মনন আছে। এসব দিয়েও মানুষের সেবা করা যায়। কারো সময়, কায়িক পরিশ্রম বা মেধা আরেকজনের জন্য হতে পারে ভালো থাকার উপলক্ষ্য।

হঠাৎ কেন দান বা পরোপকার নিয়ে কথা? আজ (৫ সেপ্টেম্বর), বিশ্ব দাতব্য দিবস। প্রতি বছরের এই দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হয় দিবসটি। বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যদিয়ে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য কাজ করে দাতব্য সংস্থাগুলো। জানলে অবাক হবেন যে, নিয়মিত দান করার অভ্যাস মানসিক চাপ কমায়। তাই অনেক তারকা ও শিল্পপতির পরিবারের রয়েছে দাতব্য প্রতিষ্ঠান যেগুলো ট্রাস্ট নামে পরিচিতি পেয়েছে। দাতব্য কাজ তাদের জন্য মানসিক শান্তি নিয়ে আসে, সেইসঙ্গে সমাজেরও ব্যাপক উপকার করে।

কেন দাতব্য কাজ করা উচিত

দাতব্য কাজ করার বেশ কিছু উপকারিতা আছে। এটি করলে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতার সুযোগ তৈরি হয়। নিজের ভেতরে আনন্দের অনুভূতি হয়। নিয়মিত দান করলে নিম্ন রক্তচাপ, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা দূর হয়। ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষক ড. পেগি থয়েটস্‌ এবং ড. লিন্ডি হিউইট তাদের এক গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে সুস্থ বা ভালো থাকার বিষয়গুলো যেমন, খুশি বা আনন্দ, সন্তুষ্টি, আত্ম-নির্ভরতা এবং দৈহিক স্বাস্থ্যের সবলতা একজন পূর্ণবয়স্ক দাতব্য কাজ করা মানুষের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে থাকে।

দানের ৭ উপকার

১. মানসিক প্রশান্তি
দান বা সাহায্য করার সময় মস্তিষ্কে সেরোটোনিন, ডোপামিন, অক্সিটোসিন রসে মুক্তি পায় — যা তৎক্ষনাত আনন্দের অনুভূতি এবং শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বাড়িয়ে দেয়।

২. চাপমুক্তি, দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের উন্নতি
দান কর্টিসল (সংশ্লেষণ হরমোন) নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, চাপ ও উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে বিপাকীয় ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। পাশাপাশি এটি আয়ু বাড়াতেও সহায়ক।

৩. দীর্ঘজীবন ও মৃত্যুহার হ্রাস
স্বেচ্ছাসেবায় নিয়মিত যুক্ত থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ বেশি দিন বাঁচে এবং আকস্মিক মৃত্যুর ঝুঁকি কমে যায়।

৪. অবসাদ মোকাবেলা ও মানসিক স্থিতিশীলতা
দান বা স্বেচ্ছাসেবা অবসাদ, উদ্বেগ কমাতে পারে এবং মানসিক প্রগাঢ়তা ও জীবনসন্তুষ্টির অনুভূতি এনে দেয়।

৫. সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করা
গণ-মানুষের জন্য কাজ বা স্বেচ্ছাসেবা মানুষকে পরস্পরের কাছাকাছি নিয়ে আসে, সামাজিক সম্পর্ক শক্তিশালী করে। এটি সামাজিক সংহতি তৈরি করে। বহু উন্নত দেশে দেখা যায়, মানুষ দলবেঁধে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে অংশ নিচ্ছেন। শুধু তাইই নয়, এসব কাজের কথা সিভিতে লিখলে চাকরির বাজারে বাড়তি সমাদর পাওয়া যায়।

৬. আত্মসম্মান বৃদ্ধি
নিজেকে অন্যের কাজে লাগাতে পারলে আত্মসম্মান বৃদ্ধির অনুভূতি তৈরি হয়। জীবনের গভীর উদ্দেশ্য ও আত্ম-পরিপূর্ণতার পথে এটি পথপ্রদর্শক হচ্ছে এই সেবা বা দান।

৭. আধ্যাত্মিক উন্নতি
ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে দান হলো নিঃস্বার্থ সেবা, যাকে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কর্তব্য হিসেবে দেখা হয়। অবলা প্রাণী বা অসহায় মানুষের সেবা করাকে সৃষ্টিকর্তার সেবা করার সমান মনে করা হয়। এসব কাজ অভিমান, লালসা দূর করে হৃদয়কে নির্মল ও আলোকিত করে এবং আধ্যাত্মিক গভীরতা আনে।

সূত্র: মাইন্ড, মেন্টাল হেলথ ও অন্যান্য

এসএকেওয়াই/আরএমডি/এমএস

Read Entire Article