দালালের দেওয়া পাসপোর্টের আবেদন ফরমে গোপন সংকেত থাকে
পরিবর্তিত সময়েও থেমে নেই লক্ষ্মীপুরের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনিয়ম ও দুর্নীতি। প্রয়োজনীয় কাগজ থাকার পরও সঠিক সময়ে পাসপোর্ট না পাওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে অহরহ। উপরন্তু সেবাপ্রার্থীদের নানা হয়রানিসহ বিভিন্ন বাধা-বিপত্তির কবলে পড়তে হয়।
দালাল ছাড়া কোনোভাবেই ব্যক্তি উদ্যোগে পাসপোর্ট করা যায় না এ অফিসে। অসম্পূর্ণ তথ্য ও ফরম কাটাছেঁড়া এমন অজুহাত দেখিয়ে ব্যক্তি উদ্যোগে আসা পাসপোর্টগ্রহীতাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে নিয়মিত। এতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন পাসপোর্ট সংক্রান্ত সেবা নিতে আসা গ্রহীতারা। বিশেষ করে বৈদেশিক রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের পাসপোর্ট রিনিউতেও পোহাতে হচ্ছে নানা দুর্ভোগ। দিনের পর দিন ধরনা দিয়েও কাজ হচ্ছে না এসব রেমিটেন্স যোদ্ধাদের। সকালে গিয়ে সারাদিন পাসপোর্ট অফিসে আবেদন নিয়ে এক রুম থেকে অন্য রুমে গিয়ে অপেক্ষা করে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরতে হয় তাদের। লক্ষ্মীপুরের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে নৈশপ্রহরী থেকে শুরু করে আনসার পর্যন্ত পাসপোর্ট দালালিতে সক্রিয়।
জানা গেছে, সহকারী পরিচালক এ কে এম আবু সাইদ নিজেই টাকা ছাড়া আবেদন ফরমে স্বাক্ষর করেন না। যেসব দালালের কাছ থেকে এ কর্মকর্তা উপঢৌকন গ্রহণ করেন, সেসব দালালের মাধ্যমে আসা আবেদন ফরমে গোপন সংকেত দেওয়া থাকে। সেগুলোতে তিনি নির্দ্বিধায় স্বাক্ষর করেন।
দালাল বেষ্টিত আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস লক্ষ্মীপুরের সহকারী পরিচালক আবু সাইদ যেসব দালালের আবেদন ফরম নির্দ্বিধায় স্বাক্ষর করেন তারা হলেন, পাসপোর্ট অফিসের একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও একজন আনসার সদস্য।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নির্দিষ্ট দালালরা লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে কাজ করে থাকেন। এর মধ্যে জেলার রায়পুরের হিমাংশু, সোহেল ও কালা অহিদ। রামগঞ্জের সাইফুল, রাব্বানী, বিল্লাল, গৌতম, মোহাম্মদ। কমলনগরের অনিমেষ ও আজাদ। চন্দ্রগঞ্জের ফয়েজ, মান্দারীর হারুন, দিঘলির আনোয়ার এবং লক্ষ্মীপুর সদরের কাশেম, আরিফ ও আবদুল খালেক দীর্ঘদিন থেকে পাসপোর্ট অফিসে দালালির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা বিভিন্ন স্থান থেকে পাসপোর্টপ্রত্যাশীদের আবেদন সংগ্রহ করে নির্ধারিত ফির চেয়ে দুই-তিনগুণ বেশি টাকা হাতিয়ে নেয়। পাসপোর্টপ্রত্যাশীরা ঝামেলামুক্ত নির্দ্বিধায় সহজে পাসপোর্ট পাওয়ার আশায় দালালের খপ্পরে পা দেয়।
এক দালাল বলেন, আমরা বিভিন্ন রেটে পাসপোর্ট করি। এতে নির্ধারিত ফির বাইরেও টাকা নিতে হয় গ্রাহকের কাছ থেকে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাড়ে ৫ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৯ হাজার, ১০ হাজার সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকি। গ্রাহক দ্রুত চাইলে আমরাও খরচ সেভাবেই চাই।
পাসপোর্টপ্রত্যাশী আলমগীর হোসেন বলেন, কয়েক মাস আগে আমি পাসপোর্ট আবেদন জমা দিয়েছি এখনো পাইনি। এর মাঝে বহুবার অফিসে এসেছি। কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি।
শহরের এক সিএনজি অটোরিকশা চালক আবুল হোসেন বলেন, আমার ছেলের জন্য ১৫ হাজার টাকায় এক আনসারকে দিয়ে পাসপোর্ট করিয়েছি।
স্থানীয় এক সংবাদকর্মী জানান, আঞ্চলিক এ পাসপোর্ট অফিসে দালাল ভরা। তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করলেই অল্প সময়ে পাসপোর্ট পাওয়া যায়। এতে কোনো হয়রানি হতে হয় না, লাগে না লাইনে ধরার ঝক্কি-ঝামেলা। তবে এ জন্য অতিরিক্ত খরচ করতে হয়।
সাধারণ পাসপোর্ট গ্রহীতাদের দাবি, দালাল নামক অসাধুদের কারণেই লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সরাসরি পাসপোর্ট করা কষ্টসাধ্য। তারা বেশি অর্থের লোভে অফিসের ভেতরকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সিন্ডিকেট গড়েছেন। যে কারণে কারও কারও সবগুলো সঠিক কাগজপত্র থাকলেও হয়রানির শিকার হতে হয়।
সাধারণরা দালাল নিয়ে অভিযোগ করলেও লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক এ কে এম আবু সাইদ বলছেন উল্টো কথা। তার দাবি, এ অফিসে কোনো দালাল নেই। কেউ হয়রানিরও শিকার হচ্ছেন না।
তিনি বলেন, আমি ও আমার অফিস দালালমুক্ত। আমার অফিসে দালালের প্রবেশ কড়াকড়িভাবে নিষিদ্ধ। আরেক প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, অফিসে কোনো টাকা পয়সা লেনদেন হয় না। এটা আমি বিলবোর্ড আকারে তৈরি করে ঝুলিয়ে রেখেছি।
এ সময় তিনি আরও বলেন, দালাল বা বহিরাগত কোনো লোক আমাদের অফিসে ঢুকতে পারেন না। অফিসের বাইরে যদি কিছু হয় সেটার দায়দায়িত্ব আমাদের না। বাইরের কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই। সাধারণরা দালাল নিয়ে অভিযোগ করলেও লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক এ কে এম আবু সাইদ বলছেন এ অফিসে কোনো দালাল নেই। কেউ হয়রানিরও শিকার হচ্ছেন না।
তিনি বলেন, আমি ও আমার অফিস দালালমুক্ত। আমার অফিসে দালালের প্রবেশ কড়াকড়িভাবে নিষিদ্ধ। আরেক প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, অফিসে কোনো টাকা পয়সা লেনদেন হয় না। এটা আমি বিলবোর্ড আকারে তৈরি করে ঝুলিয়ে রেখেছি।
এসময় তিনি আরও বলেন, দালাল বা বহিরাগত কোনো লোক আমাদের অফিসে ঢুকতে পারেন না। অফিসের বাইরে যদি কিছু হয় সেটার দায়দায়িত্ব আমাদের নয়। বাইরের কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই।