পশ্চিমাঞ্চলের পাকশী রেল বিভাগে এক বছরে ৯ কোটি টাকা আয় কমেছে। ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আয়ের তুলনামূলক বিশ্লেষণ থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে। আয় কমে যাওয়ার পেছনে চব্বিশের আন্দোলন চলাকালে ট্রেন বন্ধ থাকা ও ভারতীয় মালবাহী ট্রেন চলাচল কমে যাওয়াকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে যাত্রী পরিবহন, পার্সেল-লাগেজ ভ্যান, মালবাহী ট্রেনে মালামাল পরিবহন ও বিবিধ খাতে রেলের আয় হয়েছিল ৪৭৩ কোটি ৪৫ লাখ ২৫ হাজার ৫৪ টাকা। একই খাতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আয় হয়েছে ৪৬৪ কোটি ২৩ লাখ ৫৫ হাজার ১৩৪ টাকা। হিসেব অনুযায়ী এক বছরে রেলের আয় কমেছে ৯ কোটি ২১ লাখ ৬৯ হাজার ৯২০ টাকা ।
রেলের আয়ের তথ্য বিবরণীতে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে যাত্রী পরিবহন খাতে ট্রেনের আয় হয়েছিল ৩৭৬ কোটি ১৫ লাখ ১২ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে একই খাতে আয় ৩৮৯ কোটি ১৬ লাখ ২৮ হাজার ৯৯৯ টাকা। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে মালবাহী ট্রেনে মালামাল পরিবহন খাতে আয় হয় ৮৩ কোটি ৫৫ লাখ ৭১ হাজার ৭৯৬ টাকা। একই খাতে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে আয় হয় ৬৪ কোটি ৯ লাখ ৫৫ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা। লাগেজ ও পার্সেল খাতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে আয় হয় ৪ কোটি ৮৭ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৫ টাকা। একই খাতে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে আয় হয় ৪ কোটি ৭৮ লাখ ১৫ হাজার ৩৬৬ টাকা। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বিবিধ খাতে (দোকান ভাড়া, ঠিকাদার বিল, ভূমি রাজস্ব) আয় হয় ৮ কোটি ৮৬ লাখ ৮৭ হাজার ৭৪২ টাকা। একই খাতে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে আয় হয় ৬ কোটি ১৯ লাখ ৫৬ হাজার ১৩৮ টাকা।
আরও পড়ুন:
- উপজেলার অর্থনীতির চাকা ঘোরাচ্ছে ৭৩ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
- অকেজো সব স্লুইস গেট, চুরি হয়ে গেছে যন্ত্রপাতি
রেল কর্মকর্তারা জানান, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে পাকশী রেল বিভাগের আয় কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো ২০২৪ সালে জুলাই-আগস্ট মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতায় ২৮ দিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকা। এই ২৮ দিনে যাত্রী ও মালবাহী কোনো ট্রেন চলাচল করেনি। এছাড়াও ২০২৪ সালে জুলাই মাসে বাংলাদেশ-ভারত আন্তঃদেশীয় বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। যা এখনো চালু হয়নি। এছাড়াও ২০২৪ সালের আগস্টের পর বাংলাদেশ-ভারত মালবাহী ট্রেন চলাচল কমে যায়। যার প্রভাব পড়ে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে রেলের আয়ের ওপর।
কর্মকর্তারা জানান, রেলের আয় ওই অর্থ বছরে আরও কমে যেতো যদি নতুন দুই জোড়া ট্রেন উদ্বোধন ও যমুনা রেল সেতু উদ্বোধনের পর ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধি করা না হতো।
জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর পাকশী রেল বিভাগের অধীনে খুলনা-ঢাকা-খুলনা রুটে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ও বেনাপোল-ঢাকা-বেনাপোল রুটে রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হয়। ২০২৫ সালের ১৮ মার্চ যমুনা রেল সেতু উদ্বোধনের পর ট্রেনের প্রতিটি আসনের শ্রেণি অনুযায়ী ৪৫ থেকে ১৪৫ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। নতুন দুই জোড়া ট্রেন উদ্বোধন ও যমুনা রেল সেতু উদ্বোধনের পর পাকশী রেল বিভাগের আয় অনেকটা বেড়েছে। যদি ২৮ দিন ট্রেন বন্ধ ও ভারতীয় মালবাহী ট্রেন চলাচল কমে না যেতো তাহলে অন্য যে কোনো অর্থ বছরের চেয়ে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে পাকশী রেল বিভাগের আয় বেশি হতো বলে দাবি কর্মকর্তাদের।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) গৌতম কুমার কুন্ডু জাগো নিউজকে বলেন, ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের আয় কমে যাওয়ার প্রধান দুটি কারণ হলো ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল কমে যাওয়া ও ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ২৮ দিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকা। ভারতীয় মালবাহী ট্রেন চলাচল কিছুটা বেড়েছে। আশা করছি আগামী অর্থ বছরে পাকশী রেল বিভাগের আয় বেড়ে যাবে।
আরও পড়ুন:
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার (সিসিএম) সুজিত কুমার বিশ্বাস জাগো নিউজকে জানান, ২৮ দিন সব ট্রেন বন্ধ, ভারতীয় মালামালবাহী ট্রেন চলাচল অর্ধেকের নিচে নেমে আসা ও আন্তঃদেশীয় (বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলাচলকারী) বন্ধন এক্সপ্রেস চলাচল বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে পাকশী রেল বিভাগে ট্রেনের আয় কমেছে। এত সংকটের মধ্যেও যাত্রী পরিবহন খাতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের চেয়ে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে পাকশী রেল বিভাগের আয় বেশি ছিল। শুধুমাত্র ভারতীয় মালামালবাহী ট্রেন চলাচল কমে যাওয়ায় আয় কমে যায়।
তিনি আরও বলেন, আগে যেখানে এক মাসে ১০০টি ভারতীয় মালামালবাহী ট্রেন আসতো এখন সেটা কমে ২০ এ এসে দাঁড়িয়েছে। যাত্রী পরিবহন খাতে রেলের লোকসান নেই, শুধুমাত্র ভারতীয় পণ্য পরিবহণ কমে যাওয়ায় রেলের আয় কমে গেছে।
এমএন/এমএস