দুই পাঠাগারে তালা, একটির নেই অস্তিত্ব

3 hours ago 4

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের নিবন্ধনভুক্তির সনদপ্রাপ্ত হলেও অর্ধযুগ ধরে বন্ধ পটুয়াখালীর বাউফলের ফজলুল হক স্মৃতি পাঠাগার। সুনসান নিরবতা গ্রামীণ নারী উন্নয়ন গ্রন্থাগারেও। আর অস্তিত্ব নেই মনোয়ারা বেগম সাধারণ নামের পাঠাগারটির।

কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা, বই না থাকা, সরকারি বরাদ্দ না পাওয়া ও পাঠক উদাসীনতায় অস্তিত্ব হারাচ্ছে উপজেলার এই পাঠাগার ৩টি। জাতীয় দিবস পালন, বার্ষিক রিপোর্ট, হিসাব নিরীক্ষা, কার্যনির্বাহী পরিষদের পরিবর্তনসহ সরকারি অনুদানের যথাযথ ব্যবহারের নিশ্চয়তাসহ নিবন্ধনের কোনো শর্তই পালন করা হয় না এসব পাঠাগারে।   

জানা গেছে, উপজেলার আলগী নদী পাড়ে কেশবপুর ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন দুই কক্ষের আধাপাকা ভবনে ২০১৫ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ ইউসুফ ‘ফজলুল হক স্মৃতি পাঠাগার’র উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর থেকে সেখানে মিলনমেলা বসতো বই প্রেমীদের। সেই পাঠাগার এখন নিষ্প্রাণ। পাঠাগারের একটি কক্ষে পোস্ট অফিসের কার্যক্রম চললেও নিয়মিত খোলা হয় না। অপর কক্ষে ছোট্ট টেবিলের সামনে স্টিলের আলমারিতে বিভিন্ন লেখকের প্রায় শ’খানেক গল্প উপন্যাসের বই সাজানো থাকলেও তাতে ধুলো জমে আছে। অব্যবস্থাপনা আর জনবলের অভাবে চালু নেই পাঠাগারটি। 

ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কেশবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মুজাম্মেল হক বলেন, ২০১৪ সালের ১৩ জানুয়ারি জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র পাঠাগারটির নিবন্ধনভূকিকরণ সনদ প্রদান করে। ২০১৬ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়। তবে পর্যাপ্ত সরকারি বরাদ্দ, বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি আর লোকজন নিয়োগ করা না গেলে পাঠাগারটি পুনরায় চালু করা সম্ভব নয়। 

পাঠাগারের এক কক্ষে পোস্ট অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করার বিষয়ে পোস্ট মাস্টার ফারুক আহম্মেদ তালুকদার বলেন, পাঠাগারের কার্যক্রম চলে, তবে আগে যারা ছিল তারা অনেকেই কাজকর্মে এলাকার বাইরে চলে যাওয়াতে পাঠাগারের ওপর প্রভাব পড়েছে। শিগগিরই পাঠাগার পুরোদমে চালুর উদ্যোগ নেবেন তারা। 

এদিকে পৌর শহরের কলেজ পাড়ায় আকন বাড়ি সংলগ্ন পরিত্যক্ত টিনসেড তালাবদ্ধ ঘরের সঙ্গে ‘গ্রামীণ নারী উন্নয়ন গ্রন্থাগার’ নামে একটি সাইনবোর্ড ঝোলানো রয়েছে। এই গ্রন্থাগারের ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন রেজাউল করিম (রফিক) নামে একজন। তিনি জানান, গ্রামীণ নারী উন্নয়ন নামে একটি এনজিও পরিচালনা করতেন তিনি। সেখানেই এনজিওর কর্মচারীদের দিয়ে গ্রন্থাগারটি পরিচালনা করাতেন। ২০১৩ সালে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের নিবন্ধনভূক্তিকরণ নিবন্ধন পান। তবে সরকারি কোনো অনুদান পাননি এই গ্রন্থাগারের জন্য। 

গ্রন্থাগারে গরু-ছাগল, মৎস্য ও হাঁস-মুরগি পালনসহ এনজিও সংশ্লিষ্ট বই রাখা হতো। করোনাকালিন আর্থিক সংকটে এনজিও কার্যক্রমের সঙ্গে গ্রন্থাগারটির কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়। তিনি সেখানে ১৫শ’ বই থাকার কথা উল্লেখ করলেও পরিত্যক্ত ওই ঘরের ফাঁকফোকর গলিয়ে ভেতরে  এতগুলো বই থাকারমতো কোন আলামত মেলেনি। রেজাউল করিম জানায়, করোনা মহামারির পূর্বে এনজিওর কার্যক্রম চলাকালে প্রশিক্ষণে এসে কেউ কেউ বই পড়তেন।

অপরদিকে কাগজে কলমে থাকলেও উপজেলায় ‘মনোয়ারা বেগম সাধারণ’ নামে কোনো পাঠাগারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবে এই নামে পাঠাগারের ব্যবস্থাপনায় থাকা মনোয়ারা বেগম গৃহিণী। তার টিনসেড দোতলা বসত ঘরের ওপরের তলায় একটি কাঠের সেলফে বিভিন্ন লেখকের ৫০-৬০ খানা গল্প উপন্যাস বই দেখা গেছে। যা পাঠাগারের বই হিসেবে দেখান তিনি। 

এ সময় তিনি বাড়ির সামনে স্তূপ করা ইট ও সবজি ক্ষেত দেখিয়ে বলেন, সেখানে পাঠাগার নির্মাণ করা হবে। 

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী জানান, বাথরুম তৈরিতে ওই ইট এনে স্তূপ করা হয়েছে। ওই গৃহিনীর ছেলে পটুয়াখালী জেলা এলজিইআরডি অফিসের সুপারভিষন ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহিন জানান, মনোয়ারা বেগম সাধারণ নামে ২০১৯ সালে একটি পাঠাগার জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের নিবন্ধনভূক্তিকরণ (নিবন্ধন নম্বর: ২০২১) সনদ পায়। সেখানে ১২শ-১৩শ বই ছিল। সাবেক এমপির বরাদ্দ হিসেবে তিন বার কিছু সংখ্যক বই পাওয়া গেলেও সরকারি আর্থিক কোনো অনুদান পাওয়া যায়নি। 

এ ব্যাপারে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বই বিতরণের কাজে জড়িত মুহাম্মদ ইব্রাহিম সোহেল জানান, আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্ম তখনই প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠবে যখন তার মধ্যে মানবীয় মূল্যবোধ সম্পন্ন গুণাবলি তৈরি হবে। দেশ প্রেমী উন্নত মানসিকতার মানুষ তৈরি করতে হলে সর্বপ্রথম তাদের বই মুখী করতে হবে। 

আর বই তৈরি করতে শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার পাশাপাশি স্কুল কলেজের বাইরে পাঠাগারগুলোর সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। বিশ্ব জগতকে জানতে পাঠাগারের বিকল্প নেই। তাই প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনুপোযোগী পাঠাগারগুলোতে আবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রচুর বই সরবরাহ করে সেগুলোর প্রাণ ফিরিয়ে তরুণ প্রজন্মের জন্য ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে হবে। এজন্য  সরকার ও সমাজের সবার এগিয়ে আসা উচিত।

Read Entire Article