দুই ভাগে বিভক্ত বিএনপি, এক প্রার্থীতেই ভরসা জামায়াতের

1 month ago 10

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) জেলার সব চেয়ে বড় আসন। এ আসনে অন্য আসনগুলোর চেয়ে ভোটার বেশি। জেলার বিভিন্ন আন্দোলনও হয় এ আসন কেন্দ্র করেই। অনেকে এ আসনকে বিএনপি-জামায়াতের ঘাঁটিও বলেন।

দেশ এখন নির্বাচনী ট্রেনে; তাই জেলাজুড়ে আলোচনা হচ্ছে কে হবেন এ আসনের সংসদ সদস্য। বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও মাঠে নেমেছেন এ আসন ছিনিয়ে নিতে। করছেন পথসভা, গণসংযোগ ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে কুশলবিনিময়। তবে এই আসনে দুভাগে বিভক্ত বিএনপি নেতাকর্মীরা।

বিশেষ করে এ আসনে প্রার্থী হতে চান বিএনপির দুই হেভিওয়েট নেতা। আলোচনায় রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া। তবে অন্য নেতারাও বসে নেই। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ শাহীন শওকতও তাৎপরতা চালাচ্ছেন। এতে স্থানীয় বিএনপি নেতারা দুভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন। কেউ কাজ করছেন অধ্যাপক শাহজাহান মিয়ার হয়ে কেউ কাজ করছেন সৈয়দ শাহীন শওকতের হয়ে। এতে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধরেছে ফাটল।

আরও পড়ুন

এদিকে এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে দলটির রাজশাহী মহানগর আমির ড. কেরামত আলীকে। তিনিও সারাক্ষণ নেতাকর্মীদের সঙ্গে উঠোন বৈঠক করছেন। নেতাকর্মীরাও ভরসা রেখেছেন এক প্রার্থীর ওপরই।

রানিহাটি ইউনিয়নের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা সাধারণ মানুষ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কোনোদিন হইনি। তবে কোন দল কীভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে দেখতে পাচ্ছি। মাঠের প্রচারণা দেখে মনে হচ্ছে জামায়াত-বিএনপির এবার লড়াই হবে। কারণ এই দুই দলের ভোট শিবগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি।

আমি বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। আমার কাজ দল সংগঠিত করা। সে কাজটি আমি করে যাচ্ছি। তবে শিবগঞ্জ বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত নয়। যেহেতু এমপি প্রার্থী দুজন তাই নেতাকর্মীরা দুভাগে হয়ে কাজ করছে।

শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নে চায়ের দোকানে বসে গল্প হচ্ছিল নির্বাচন নিয়ে। এসময় শাহীন আলী নামের এক তরুণ জানান, নির্বাচন নিয়ে তাদের তেমন মাথা ব্যথা নেই। কারণ গত ১৫ বছর ভোট দিতে পারেননি তারা। তবে এখন থেকেই বিএনপি-জামায়াত নেতা বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। মাঠের প্রচারণায় বেশি দেখা যাচ্ছে বিএনপি নেতাদের। দুই প্রার্থীর হয়ে কাজ করতে গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা দুভাগে বিভক্ত। এতে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে।

আরও পড়ুন

উপজেলা বিএনপির একাংশের আহ্বায়ক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল হক বলেন, শিবগঞ্জে সব সময় বিএনপির ভোট বেশি। তবে আওয়ামী লীগের দোসররা ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ক্ষমতায় ছিল। এ আসনে কোনোদিনও আওয়ামী লীগ জয়লাভ করতে পারেনি। আমরা বিএনপি করি, দল যে ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেবে তার হয়েই কাজ করবো।

জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী রাজশাহী মহানগর আমির ড. কেরামত আলী বলেন, শিবগঞ্জে গত ১৭ বছরে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এতে স্থানীয় পর্যায়ে আমাদের জনপ্রিয়তা বেড়েছে।

দুই ভাগে বিভক্ত বিএনপি, এক প্রার্থীতেই ভরসা জামায়াতের

শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নে চায়ের দোকানে ভোটের গল্প-ছবি জাগো নিউজ

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক শাহজাহান মিয়াকে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি তিনি।

আরও পড়ুন

আমরা সাধারণ মানুষ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কোনোদিন হইনি। তবে কোন দল কীভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে দেখতে পাচ্ছি। মাঠের প্রচারণা দেখে মনে হচ্ছে এবার লড়াই হবে জামায়াত-বিএনপির। কারণ এই দুই দলের ভোট শিবগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি।

রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ শাহীন শওকত বলেন, ‘আমি দলের কাছে মনোনয়ন চাইবো। কারণ শিবগঞ্জ এলাকার মানুষ আমাকে পছন্দ করে। তারা আমাকে এমপি হিসেবে দেখতে চান। এলাকার মানুষকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবো। আমি বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমার কাজ হচ্ছে দল সংগঠিত করা। সে কাজটি আমি করে যাচ্ছি। তবে শিবগঞ্জ বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত নয়। যেহেতু এমপি প্রার্থী দুজন তাই নেতাকর্মীরা দুভাগে কাজ করছে।’

তিনি আরও বলেন, এ আসনে টানা ১৭ বছর আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের অন্যায়-অত্যাচারে নেতাকর্মীরা মামলা-মোকদ্দমার শিকার হয়েছেন। আমি সব সময় তাদের পাশে ছিলাম। এখনো আছি। সব সময় থাকবো।

শেখ হাসিনার পতনের পর এ আসনে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের এখন সরব উপস্থিতি। করছেন গণসংযোগ, সভা-সেমিনার, উঠোন বৈঠক।

শিবগঞ্জে গত ১৭ বছরে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এতে স্থানীয় পর্যায়ে আমাদের জনপ্রিয়তা বেড়েছে।

আরও পড়ুন

এই আসনের বিগত সংসদ নির্বাচনের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মইন উদ্দীন আহমদ, ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাহবুবুল আলম, ১৯৯১ থেকে ২০০১ এর পঞ্চম থেকে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চারবার বিএনপির শাহজাহান মিয়া জয়লাভ করেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মিয়া ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তৎকালীন রাজশাহী-১ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে হিসেবে তিনি ছিলেন পাঁচবারের সংসদ সদস্য।

এরপর ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মুহাম্মদ এনামুল হক নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের গোলাম রাব্বানী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ ও ২০২৪ সালের একাদশ ও দ্বাদশ সংসদের দুটি বিতর্কিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল নির্বাচিত হন। এখন দড়জায় কড়া নাড়ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭২ হাজার ২৮২। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪১ হাজার ৮৫৯ ও নারী ভোটার ২ লাখ ৩০ হাজার ৪২৩।

এসওএম/এসএইচএস/এমএফএ/এমএস

Read Entire Article