দুই মেয়ের চিকিৎসায় কিডনি বিক্রি চান হতভাগা বাবা

3 weeks ago 10

ফুলের মতো সুন্দর দুটি শিশু। হাসলে মনে হয় পৃথিবী হাসছে। দেখে কে বলবে হাসির আড়ালে লুকিয়ে আছে পাহাড়সম কষ্ট। ১২ বছর বয়সী যমজ দুই বোনের স্বপ্ন একটিই। হাঁটতে চায় তারা, যেতে চায় বিদ্যালয়ে।

বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার চন্দ্রপাড়া গ্রামের মিজান মল্লিক (৪০) ও চায়না বেগম (৩৪) দম্পতির দুই মেয়ে নাইমা আক্তার তানিশা ও সাইমা আক্তার তাহিরা। জন্মের কিছুদিন পর দুই বোনই আক্রান্ত হন সেরিব্রাল পালসি (Cerebral Palsy) নামক দুরারোগ্য ব্যাধিতে। রাজমিস্ত্রি বাবা নিজের সবটুকু আয় ও জমিজমা বিক্রি করেও সন্তানদের সুস্থ করতে পারেননি। নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে এবার কিডনি বিক্রি করে দুই মেয়ের চিকিৎসা চালানোর কথা জানিয়েছেন তিনি।

প্রত্যন্ত চন্দ্রপাড়া এলাকায় শিশু দুটির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা ছোট ঘরের বারান্দায় খেলছে দুজনই। তানিশা হামাগুড়ি দিয়ে চলছে, তাহিরা সেটুকুও পারে না। কী চায় জানতে চাইলে তানিশা বলে, ‘আমি হাঁটতে চাই, স্কুলে যেতে চাই, অনেক কষ্ট হয় আমার।’

শত প্রতিকূলতার মাঝেও তানিশা স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। কখনো হামাগুড়ি দিয়ে, কখনো বা হুইল চেয়ারে করে বিদ্যালয়ে যায় সে। তানিশা কোনো রকমে বিদ্যালয়ে যেতে পারলেও তাহিরার অবস্থা আরও করুণ। কথাও বলতে পারে না সে।

দুই মেয়ের চিকিৎসায় কিডনি বিক্রি চান হতভাগা বাবা

কাঁদতে কাঁদতে তাদের মা চায়না বেগম বলেন, মাঝে মাঝে পায়ে যখন ওদের ব্যথা ওঠে তখন ছটফট করতে থাকে। তখন যে বুকটার ভেতরে কেমন লাগে! মা হয়ে না পারছি সইতে, না পারছি চিকিৎসা করাতে। ওদের সামনে কাঁদলে ওরা আরও বেশি কষ্ট পায়। তাই আড়ালে চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে দোয়া করি।

বাবা মিজান মল্লিক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমার বাচ্চা দুটো অসুস্থ। ১২ বছর ধরে ঢাকা, খুলনা, বাগেরহাটের বিভিন্ন হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়েছি। জমানো অর্থ, ধারদেনা ও জায়গা জমি বিক্রি করে এখন আমি নিঃস্ব। অবশিষ্ট আছে শুধু বাড়ির ভিটে। প্রয়োজনে সেটুকুও বিক্রি করবো। দিন দিন বাচ্চা দুটো আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ডাক্তার বলেছে অপারেশন করলে সুস্থ হয়ে উঠবে। এতে ৬ লাখ টাকার প্রয়োজন, এত টাকা আমি কোথায় পাবো?

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, যদি কোনো লোক আমার কিডনি কিনতে চান, আমি মেয়েদের জন্য সেটাও বিক্রি করতে রাজি।

প্রতিবেশী মাহমুদ শেখ বলেন, মিজান ভাই মেয়ে দুটো নিয়ে অনেক সমস্যার মধ্যে আছেন। আমরাও গরিব মানুষ, তাকে সাহায্য করার মতো টাকা পয়সা আমাদের নেই। সামর্থ্যবানরা এগিয়ে এলে ওরা হয়ত আবার হাঁটতে পারবে।

স্থানীয় চন্দ্রপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মুক্তি রাণী চক্রবর্তী বলেন, তানিশা আমাদের ছাত্রী। শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ। হাঁটাচলা করতে পারে না। শারীরিকভাবে অক্ষম হলেও বেশ মেধাবী সে। তানিশার চিকিৎসার জন্য সরকার ও সমাজের বিত্তবান লোকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনিও।

চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সেরিব্রাল পালসি (Cerebral Palsy) হলো মস্তিষ্কের এমন একটি অবস্থা যা নড়াচড়া এবং অঙ্গবিন্যাসে সমস্যা সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত জন্মগত বা জীবনের প্রথম দিকে মস্তিষ্কের ক্ষতির কারণে হয়ে থাকে। দুর্বল সমন্বয়, শক্ত বা দুর্বল পেশি, কম্পন এবং কথা বলতে বা দেখতে সমস্যা হওয়া এ রোগের উপসর্গ হিসেবে বিবেচিত।

নাহিদ ফরাজী/এফএ/এএসএম

Read Entire Article