দুদকের কাঠামো ও কার্যপরিধি নিয়ে যা বলা আছে

4 weeks ago 17

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে জুলাই সনদের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাঠামো ও কার্যপরিধিতে বড় ধরনের সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে।

সনদে দুর্নীতি দমন বিষয়ক ১৭টি ও দুদকে নিয়োগের বিষয়ে ৬টি প্রস্তাব করা হয়েছে।

খসড়া অনুযায়ী, দুদককে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা, কমিশনারের সংখ্যা তিন থেকে পাঁচে উন্নীত করা (যার মধ্যে একজন নারী থাকবেন), কমিশনারদের মেয়াদ চার বছর নির্ধারণ করা, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার জন্য ‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’ গঠন করা এবং বেসরকারি খাতের দুর্নীতিকে শাস্তির আওতায় আনার মতো প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর থেকে দ্রুত মতামত চাওয়া হয়েছে। এটি চূড়ান্ত হওয়ার পর জুলাই সনদকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। এর কার্যকারিতা নিয়ে একমাত্র এখতিয়ার থাকবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের হাতে।

খসড়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন ও আইন সংস্কারে যেসব মূল প্রস্তাব এসেছে তার মধ্যে রয়েছে-

-দুদককে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা।

- ‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’ গঠন করে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কমিশনার নিয়োগ।

-কমিশনার সংখ্যা ৩ থেকে ৫ করা, যার মধ্যে অন্তত একজন নারী।

-কমিশনারের মেয়াদ ৫ বছরের বদলে ৪ বছর।

-দুদককে মামলা করার ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমোদনের বাধ্যবাধকতা (আইন ২০০৪-এর ধারা ৩২ক) বাতিল করা।

-বেসরকারি খাতের দুর্নীতিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে সংযোজন।

-বৈধ উৎসবিহীন আয়কে বৈধতা দেওয়ার রাষ্ট্রীয় চর্চা বন্ধে আইন প্রণয়ন।

-নির্বাচনী অর্থায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ ও রাজনৈতিক দলে দুর্নীতিবাজদের মনোনয়ন না দেওয়া।

-সরকারি সেবাখাত ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের অটোমেশন।

-উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতি ও অর্থ পাচার ঠেকাতে প্রকৃত মালিকানার তথ্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা।

প্রস্তাবে দলগুলোর ঐকমত্যের চিত্র কেমন?

বৈধ উৎসবিহীন আয়কে বৈধতার চর্চা বন্ধ করার বিষয়ে ৩২টি দল ও জোট একমত ও রাষ্ট্রীয় ও আইনি ক্ষমতার অপব্যবহাররোধে সুবিধাভোগী মালিকানা (সংক্রান্ত আইন প্রণয়নে ৩১টি দল ও জোট একমত হয়েছে।

নির্বাচনে প্রার্থীদের আয়, ব্যয় ও সম্পদবিবরণী প্রকাশে একমত হয়েছে ২৫টি দল, বেসরকারি খাতের দুর্নীতিকে শাস্তির আওতায় আনা ও কমিশনারদের মেয়াদ বাড়ানোর ব্যাপারে ৩১টি দল একমত হয়েছে।

এছাড়া কমিশনারের সংখ্যা বাড়ানো প্রস্তাবে ২৯টি দল ও সেবা প্রদানকারী সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ও তথ্য-ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ (এন্ড-টু-এন্ড) অটোমেশনের আওতায় আনার প্রস্তাবে ২৯টি দল ও জোট একমত হয়েছে।

খসড়ায় পটভূমি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে- ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, পিলখানা ট্র্যাজেডি, শাপলা চত্বরের ঘটনা, কোটা আন্দোলন এবং বিগত সরকারের গুম-খুন-নির্যাতনের প্রেক্ষাপট।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদ ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের দলিল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন স্পষ্ট করেছে, রাজনৈতিক দলগুলো যেসব বিষয়ে একমত হবে, তা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে এবং অন্য যে কোনো আইনের চেয়ে জুলাই সনদের বিধান প্রাধান্য পাবে।

গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত বছরের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। ওই বছরের ৭ অক্টোবর সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন হয়। চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের প্রেক্ষাপটও বর্ণনা করা হয় সনদের খসড়ায়।

প্রধান উপদেষ্টাকে সভাপতি, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধানকে সহ-সভাপতি এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন ও দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধানদের সদস্য করে গঠিত হয় এই ঐকমত্য কমিশন। পরে এই কমিশন কিছুটা পুনর্গঠন করা হয়।

কমিশনের দায়িত্ব ছিল-আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলোর সুপারিশ বিবেচনা ও গ্রহণের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও শক্তিসমূহের সঙ্গে আলোচনা করা এবং এ মর্মে পদক্ষেপ সুপারিশ করা।

কমিশনের মেয়াদ ছিল কার্যক্রম শুরুর তারিখ থেকে ছয় মাস। তবে পরে এর মেয়াদ আরও একমাস বাড়িয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নেওয়া হয়। গত ৫ মার্চ পাঁচটি কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়।

এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার বিষয়ক ৭০টি, নির্বাচন সংস্কার বিষয়ক ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত ২৬টি ও দুর্নীতি দমন বিষয়ক ২৭টি সুপারিশ ছিল। মোট ৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোট তাদের মতামত কমিশনের কাছে পাঠায়।

মতামত গ্রহণের পাশাপাশি প্রথম পর্যায়ে গত ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩২টি দল ও জোটের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মোট ৪৭টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ করে কমিশন অগ্রাধিকার ও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় মোট ২০টি বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনায় মিলিত হয়।

এসএম/এনএইচআর/জেআইএম

Read Entire Article