কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. রুহুল আমিন, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মো. সাদিকুল ইসলাম তালুকদারসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মিজানুর রহমান। জালিয়াতির অভিযোগে দায়ের করা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক মামলায় এ আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকালে শুনানি শেষে এ আদেশ দেওয়া হয়। মামলার অন্য আসামিরা হলেন, কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাজির স্বপন কান্তি পাল এবং আদালতের স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদ। অভিযোগ গঠন শুনানিকালে পাঁচ আসামিই আদালতে হাজির ছিলেন।
আদালতে দুদকের আইনজীবী কাজী ছানোয়ার আহমদ লাভলু জাগো নিউজকে বলেন, মাতারবাড়িতে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের ২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলার অভিযোগপত্র থেকে জেলা প্রশাসকের নাম বাদ দিতে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়। পরে দুদকের তদন্তে জালিয়াতির বিষয় প্রমাণ হলে তাদের বিরুদ্ধে আরেক মামলা হয়। পরে দুদক অভিযোগপত্র দেন আদালতে। অভিযোগপত্রে পাঁচজনকে আসামি করা হয়। আজ মঙ্গলবার অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য ছিল। আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে অভিযোগ গঠন থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন আদালতে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত অভিযোগ গঠন করেন। আগামী ৩ আগস্ট থেকে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।
দুদকের আইনজীবী আরও বলেন, কক্সবাজারের সাবেক ডিসি রুহুল আমিন ২০১৭ সালে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে যান। পরে তিনি জামিনে বের হন। এর আগে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম বর্তমানে অবসরে রয়েছেন। শুনানির সময় আদালতের কাঠগড়ায় পাঁচ আসামি উপস্থিত ছিলেন।
- আরও পড়ুন
- সাবেক ডিসি-জেলা জজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
- সারজিস-হাসনাতকে ১০০ বার কল দিলেও রিসিভ করেন না
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মাতারবাড়িতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনকে প্রধান আসামি করে ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মাতারবাড়ির বাসিন্দা এ কে এম কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী। দুদক আইনে ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে এ মামলা করা হয়। আদালত মামলা আমলে নিয়ে দুদককে তদন্তের নির্দেশ দেন।
তবে মামলার পরপরই তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো কাগজপত্র থেকে ১ নম্বর আসামি রুহুল আমিনের নাম বাদ দিয়ে তা পাঠান। বিষয়টি জানাজানির পর বাদী কায়সারুল একই আদালতে রুহুল আমিন, সাদিকুল ইসলামসহ সাতজনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগে আরেক মামলা করেন। সেই মামলার তদন্ত শেষে দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রিয়াজউদ্দিন গত বছরের ১ জুলাই পাঁচজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর বাদীপক্ষের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী মামলার সব নথিপত্র আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফরিদ আহমদের কাছে দাখিল করেন। পরদিন (২০ নভেম্বর) সকালে আদালতের কর্মচারী সৈয়দ আকবর নথিপত্র কক্সবাজার ডাকঘরে জমা দেওয়ার জন্য রওনা দিলে তাকে আবার আদালতে ফিরিয়ে এনে খামটি স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদের মাধ্যমে জেলা ও দায়রা জজের কাছে পাঠানো হয়। পরে নানান কৌশলে আবেদন থেকে জেলা প্রশাসকের নাম বাদ দেওয়া হয়।
তদন্তে আরও উঠে আসে, ফৌজদারি দরখাস্ত রেজিস্ট্রারে ২৮ আসামির নাম থাকলেও পরে ৩টি পৃষ্ঠা পাল্টে এক নম্বর আসামি হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জাফর আলমের নাম বসানো হয়। বাদীর সই জাল করে ২৮ জনের জায়গায় ২৭ জনকে আসামি দেখিয়ে দুদকে নথি পাঠানো হয়। এই জাল সইয়ের বিষয়টি সিআইডির হস্তলিপি বিশারদের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
দুদক ও আদালত সূত্র জানায়, মাতারবাড়ি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য এক হাজার ৪১৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দ ছিল ২৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে চিংড়িঘের বাবদ ৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। ওই অর্থের মধ্যে মনগড়া ২৫টি ঘের দেখিয়ে ১৯ কোটি ৮২ লাখ টাকার বেশি তুলে আত্মসাৎ করা হয়। আরও বিভিন্ন উপায়ে আত্মসাৎ করা হয় ভূমি অধিগ্রহণের টাকা।
এমডিআইএইচ/কেএসআর/এএসএম