দুর্নীতির দায়ে চাকরিচ্যুত ফরহাত নূর, বহাল হলেন ফের

3 months ago 45

সাড়ে ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ফরহাত নূরকে গুরুদণ্ড হিসেবে চাকরিচ্যুত করা হয়। কিছুদিনের মধ্যেই তার সেই গুরুদণ্ড বাতিল হয়। শুধু তাই নয়, রাতারাতি পদায়নও পান তিনি।

ফরহাত নূর সর্বশেষ মাগুরা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকার যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে উপ-পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ছিলেন।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে থাকার সময় ফরহাত নূরের বিরুদ্ধে ১১ কোটি ৫২ লাখ ৬ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ১২ ফেব্রুয়ারি তাকে চাকরিচ্যুত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। পরে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ দণ্ড বাতিল করেন প্রধানমন্ত্রী। গত ৫ জুন দণ্ড বাতিল করে তাকে পুনর্বহাল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। একই দিন তাকে মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ে পদায়নও করে মন্ত্রণালয়।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি তাকে চাকরিচ্যুত করে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ফরহাত নূর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে সংযুক্ত থাকাকালে ১১ কোটি ৫২ লাখ ৬ হাজার টাকা অবৈধভাবে বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় জড়িত থেকে ওই টাকা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাৎ এবং আত্মসাতে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করার অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৫ মে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ ও ‘দুর্নীতিপরায়ণ’ এর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়।

এতে বলা হয়, ব্যক্তিগত শুনানি শেষে ন্যায়বিচার নিশ্চিত ও প্রকৃত তথ্য উদঘাটনে বিভাগীয় মামলাটি তদন্ত করার জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত বোর্ড নিয়োগ করে। তদন্ত বোর্ড বিভাগীয় মামলাটি তদন্ত করে গত বছরের ১৩ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করে। তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর অনুযায়ী ‘চাকরি থেকে বরখাস্তকরণ (ডিসমিসাল অব সার্ভিস)’ গুরুদণ্ড আরোপের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর জবাব, তদন্ত প্রতিবেদন, সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান ও সার্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ‘চাকরি থেকে বরখাস্তকরণ’ গুরুদণ্ডটি চূড়ান্তভাবে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের পরামর্শ চাওয়া হলে কমিশন ফরহাত নূরকে প্রস্তাবিত গুরুদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত পোষণ করে। তাই তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় বলে প্রজ্ঞাপনে জানায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।

পরে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দণ্ড মওকুফের আবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী তার দণ্ড মওকুফ করে দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ জুন তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করে আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। ওই প্রজ্ঞাপনে গত ১২ ফেব্রুয়ারির চাকরিচ্যুত করার প্রজ্ঞাপনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ফরহাত নূরকে বিভাগীয় মামলায় ‘চাকরি থেকে বরখাস্তকরণ’ সূচক গুরুদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি ওই আদেশের বিরুদ্ধে দণ্ড মার্জনা প্রার্থনা করে ১৮ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কাছে আপিল আবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী সদয় হয়ে আপিল আবেদন মঞ্জুর করে দণ্ডাদেশ বাতিলের আদেশ দেন।

তাই তার চাকরি থেকে বরখাস্ত সূচক দণ্ডাদেশ বাতিল করে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হলো। তিনি বিধিমতে বকেয়া বেতন-ভাতাদি প্রাপ্য হবেন বলে ওই প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।

একই দিন (৫ জুন) তাকে পদায়ন করেও প্রজ্ঞাপন জারি করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফরহাত নূরকে মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ে পদায়ন করা হলো।

আরএমএম/এমআরএম/এএসএম

Read Entire Article