দেবী আবাহনে শুরু দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা 

1 hour ago 4

মহালয়ার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজার। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) মহালয়ায় দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আবাহন জানানোর মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসবের শুভ সূচনা হলো। ভোর থেকে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ সারা দেশে মণ্ডপে-মণ্ডপে চণ্ডীপাঠ, মঙ্গলঘট স্থাপন, ঢাক-কাঁসা ও শঙ্খ বাজিয়ে দেবীকে মর্ত্যে আহ্বান জানান ভক্তরা।

ঢাকেশ্বরী ছাড়াও রাজধানীর গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশন, শ্রী রমনা কালী মন্দির ও শ্রীমা আনন্দময়ী আশ্রমসহ রাজধানীর ছোট-বড় অনেক মন্দির-মণ্ডপেই মহালয়ার অনুষ্ঠান হয়েছে। সকাল ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত মহালয়া অনুষ্ঠিত হয়। মহালয়া হিন্দু ধর্মের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। এটি সাধারণত আশ্বিন মাসের (সেপ্টেম্বর–অক্টোবর) কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিতে পালিত হয়। এর মধ্য দিয়ে সূচনা হয়েছে দেবীপক্ষের। শ্রীশ্রী চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে কৈলাস থেকে মর্ত্যে আগমনের আবাহনই ‘মহালয়া’ হিসেবে পরিচিত। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মহালয়ার প্রাক সন্ধ্যায় ‘কাত্যায়নী মুনির কন্যা’ রূপে মহিষাসুর বধের জন্য দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে।

শাস্ত্র মতে, মহালয়ার আগের ১৪ দিন ধরে পিতৃপক্ষ পালিত হয়, যেখানে পূর্বপুরুষদের শ্রাদ্ধ ও পিণ্ডদান করা হয়। আর মহালয়ার দিনে পিতৃপক্ষের অবসান ঘটে এবং দেবীপক্ষ শুরু হয়, যা দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিক ভূমিকা। 

ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে গতকাল ভোরে ঢাকের বোলে চণ্ডীপাঠে শুরু হয় সেই মহালয়ার পর্ব। প্রথমে চণ্ডীপাঠ করে দেবীকে আহ্বান জানানো হয়। এ সময় মঙ্গলঘট স্থাপন করে তাতে ফুল, তুলসী ও বেলপাতা দিয়ে করা হয় পূজা। আগমনী গানের মাধ্যমে শুরু হয় আড়ম্বরপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় ‘দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধ’ দেখানো হয়। শিল্পীদের এই পরিবেশনা মন্দিরে বসে উপভোগ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, ভারতীয় হাইকমিশনের প্রথম সচিব (রাজনৈতিক) গোকুল ভি কে, ভুটানের রাষ্ট্রদূত দাশো কারমা হামু দর্জি, নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, সাধারণ সম্পাদক ড. তাপস চন্দ্র পাল, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিচালনা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ। এর আগে প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে মহালয়ার অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতার শুভ সূচনা করেন তারা। 

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে মহালয়ার দ্বিতীয় পর্বের মূল আচার অনুষ্ঠান শুরু হয় সকাল সাড়ে ৭টায়। এই পর্বে ভক্তরা পূর্বপুরুষের আত্মার শান্তি কামনায় তিল তর্পণ করেন, যেটি মন্দিরের পুকুর ঘাটে সম্পন্ন হয়। পরে মহালয়ার ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। মহালয়ার অন্যতম অনুষঙ্গ হলো তর্পণ শ্রাদ্ধ। বিশ্বাস করা হয়, এই দিনে তর্পণ বা জলাঞ্জলি দিলে পূর্বপুরুষরা তৃপ্ত হন এবং আশীর্বাদ করেন।

সনাতন বিশ্বাস ও পঞ্জিকামতে, দেবী দুর্গা এবার গজ বা হাতিতে চড়ে স্বর্গলোক থেকে মর্ত্যলোক বা পৃথিবীতে আসছেন। আর দেবী স্বর্গলোকে বিদায় নেবেন দোলা বা পালকিতে চড়ে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠীপূজার মধ্যদিয়ে এবার দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটবে। ওই দিন মহাষষ্ঠী। পরদিন মহাসপ্তমী। ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে দুর্গোৎসব।

ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের উপদেষ্টা পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী বলেন, দেবীর গজে আগমনের বিশেষত্ব হলো শস্যপূর্ণ পৃথিবী হবে। আমরা প্রত্যাশা করি, আমাদের প্রিয় বাংলাদেশও শস্যময় শ্যামল হয়ে ভরে উঠবে এবং মানুষের মনে শান্তি ও স্বস্তি প্রবাহমান থাকবে।

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর কালবেলাকে জানান, এ বছর সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীর ২৫৮টি মণ্ডপ ও মন্দিরে পূজা আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দুর্গাপূজায় সারাদেশে কঠোর নিরাপত্তা থাকবে, সরকার আমাদের এই নিশ্চয়তা দিয়েছে। সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে। তারপরও প্রতিটি মন্দিরে আমাদের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীও থাকবে। 

এদিকে মহালয়ার অনুষ্ঠান ঘিরে এ দিন সকাল থেকেই ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তৎপর ছিলেন তারা। অন্য মন্দিরেও সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ছিল।

Read Entire Article