দেবী দুর্গার বোধনের মধ্য দিয়ে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সায়ংকাল তথা সন্ধ্যায় ঢাকাসহ সারা দেশের মন্দির-মণ্ডপ সংলগ্ন বিল্ববৃক্ষের (বেলগাছ) তলে এই বোধন তথা বন্দনা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই আরাধনার মধ্য দিয়ে নিদ্রা তাড়িয়ে দেবীকে মর্ত্যলোকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণে বেলগাছের তলায় দেবীর বোধনের নিয়মাবলি যথাযথভাবে অনুসরণ করে এই বন্দনা পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনজন পুরোহিত এই বোধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। তারা হলেন, মন্দিরের উপদেষ্টা পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী এবং অন্যতম পুরোহিত বরুণ চক্রবর্তী ও ধর্মদাস মুখোপাধ্যায়।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের উপদেষ্টা পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী কালবেলাকে বলেন, দেবীর বোধন হয় ষষ্ঠীতে সায়ংকালে অর্থাৎ সূর্যাস্তের পরে, এটাই নিয়ম। আজ (শনিবার) সকাল ৯টা ১৮ মিনিট পর্যন্ত পঞ্চমী ছিল। এরপর থেকে ষষ্ঠী শুরু হয়েছে এবং সায়ংকালং আছে। তা ছাড়া আগামীকাল (রোববার) ষষ্ঠী শেষ হয়ে যাবে বেলা ১১টা ১২ মিনিটে। তারপর সপ্তমী শুরু হয়ে যাবে। ফলে রোববার সন্ধ্যাকালে আর ষষ্ঠী পাওয়া যাবে না। সেজন্যই আজকে (শনিবার) দেবীর বোধন সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি জানান, তিথি অনুযায়ী রোববার বেলা ১১টা ১২ মিনিটের মধ্যে ষষ্ঠী পূজা সম্পন্ন করতে হবে।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের এই উপদেষ্টা পুরোহিত আরও বলেন, বোধনের নিয়মটা হচ্ছে—বিল্ববৃক্ষ (বেলগাছ) তলে পূজাটা হয়। কারণ, বিল্ববৃক্ষে মা ভগবতী অর্থাৎ দেবী দুর্গা ছোট্ট শিশু কুমারীরূপে অবস্থান করেন। দক্ষিণায়নের কারণে দেবী যেহেতু নিদ্রিত থাকেন, তা থেকে তাকে জাগরিত করার জন্য এই বন্দনা পূজা করা হয়। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণে বেলগাছের তলে দুর্গাপূজার বোধনের নিয়মাবলি অনুসরণ করে এই পূজাটা করা হয়েছে। পূজার শেষে যথারীতি আরতি অনুষ্ঠিত হয়।
‘বোধন’ শব্দের অর্থই হলো জাগরণ বা চৈতন্যপ্রাপ্তি। পুরাণ মতে, দক্ষিণায়নে নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙানোর জন্য এই বোধনের মাধ্যমে বন্দনা পূজা করা হয়। দেবীর বোধনের পর এবার মূল পূজার কার্যক্রম শুরু হবে আজ মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে। এদিন দুর্গা দেবীর ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পাঁচ দিনের এই উৎসব শেষ হবে আগামী ২ অক্টোবর বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে।
এবার ঢাকায় গতবারের তুলনায় ৭টি বেড়ে মোট ২৫৯টি মন্দির-মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর সারা দেশে মোট মন্দির-মণ্ডপের সংখ্যা ৩৩ হাজার ৩৫৫টি, যা গতবারের তুলনায় হাজারখানেকের বেশি।