দেশজুড়ে সংঘাত-সংঘর্ষ: নিহত ৬৭

2 months ago 23

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষিত সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন রোববার (৪ আগস্ট) রাত ১০টা পর্যন্ত অন্তত ৬৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

জাগো নিউজের ঢাকা অফিসে কর্মরত নিজস্ব প্রতিবেদক এবং বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে এ সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিস্তারিত:

ঢাকা মহানগর
রোববার রাত ১০টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর এলাকায় ৮ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজন আওয়ামী লীগের নেতা। তার নাম আনোয়ারুল ইসলাম। আনোয়ারুল ইসলাম ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। তিনি উত্তরায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে নিহত হন। অন্য সাতজনের মরদেহ রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশ সদস্য নিহত
সারাদেশে ১৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এরমধ্যে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে ১৩ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জে নিহত হয়েছেন একজন।

বগুড়া
বগুড়ায় রোববার অসহযোগ কর্মসূচিতে কমপক্ষে ৪ জন নিহত এবং শতাধিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, মোট ৪ জনের মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২ জন গুলিবিদ্ধ।

রংপুর
রংপুরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়েছে। এতে রংপুর সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারাধন রায় হারাসহ চারজন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাহমুদুর রহমান টিটু এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সর্দার রুমের দায়িত্বে থাকা মিজানুর রহমান চারজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নরসিংদী
নরসিংদীতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়েছেন। আন্দোলনকারীদের পিটুনিতে নরসিংদী-১ আসনের এমপি নজরুল ইসলাম হিরুর (বীর প্রতিক) নাতীসহ ৬ জন নিহত হন। মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ৬ আওয়ামী লীগ নেতা নিহতের খবর পেয়েছি। তাদের স্বজনরা মরদেহ বাড়িতে নিয়ে গেছেন। আমরা তাদের অনুরোধ করেছিলাম মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য থানায় নিয়ে যেতে। কিন্তু তারা বাড়িতে নিয়ে যায়।

শেরপুর
শেরপুর জেলা শহরে আজ একাধিক স্থানে আন্দোলনকারী এবং আওয়ামী লীগ ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শহরের তিনআনী বাজার মোড়ে আন্দোলনকারীদের ওপর প্রশাসনের টহল গাড়ির চাপায় বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের শেরপুর জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তিনজন মারা যান। নিহতরা হলেন, আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষের ছাত্র ও জেলা শহরের বাগরাকশা মহল্লার বাসিন্দা তুষার (২৪), আইটি উদ্যোক্তা জেলা সদরের পাকুড়িয়া চৈতনখিলার মাহবুব (৩০)। অন্যজনের নাম জানা যায়নি।

হবিগঞ্জ
হবিগঞ্জে অসহযোগ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় লিটন শীল (২৭) নামে এক সেলুন কর্মচারী নিহত হয়েছেন। তিনি শহরের অনন্তপুর এলাকার বাসিন্দা রতন শীলের ছেলে। এ ঘটনায় ২ শতাধিক লোক আহত হয়েছেন।

কুমিল্লা
কুমিল্লার দাউদকান্দিতে থানায় ঢুকে মো. এরশাদ (২৯) নামে এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল আলম জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে রুবেল (৩৩) নামের একজন নিহত হয়েছেন। দুপুর পৌনে ২টার দিকে দেবীদ্বার পৌরসভার বানিয়াপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

বরিশাল
বরিশালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় এক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হয়েছেন। তার নাম টুটুল চৌধুরী (৬০)। তিনি বরিশাল মহানগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। দুপুরে বরিশাল নগরের বটতলা এলাকার করিম কুটিরের সামনে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সজিব আহমেদ।

ফেনী
ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এছাড়াও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, পথচারী ও সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক ব্যক্তি।

লক্ষ্মীপুর
লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এরমধ্যে তিনজনের মরদেহ সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. অরুপ পাল চারজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সিলেট
সিলেটের গোলাপগঞ্জে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। দুপুর ১টার দিকে গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুদর্শন সেন জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

ভোলা
ভোলায় সহিংসতার ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে জসিম উদ্দিন (৪৫) নামের এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তিনি ভোলা পৌর নবীপুর এলাকার আবু তাহেরের ছেলে ও ভোলার শহরের নতুন বাজার এলাকায় ছাতা ব্যবসায়ী। ভোলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রিপন কুমার সরকার জানান, তিনি লোকমুখে শুনেছেন একজন মারা গেছে।

কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জে ত্রিমুখী সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেলে একজন ও সদর হাসপাতালে দুজনের মরদেহ রয়েছে। শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. হেলাল উদ্দিন ও সদর হাসপাতালের পরিচালক ডা. আকরাম উল্লাহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মুন্সিগঞ্জ
মুন্সিগঞ্জে সংঘর্ষে নিহত বেড়ে তিনজনে দাঁড়িয়েছে। নিহতরা হলেন রিয়াজুল ফরাজী (৩৫), মো. সজল (৩০) ও ডিপজল (১৯)। মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল ও সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

মাগুরা
মাগুরা সদর ও মহম্মদপুর উপজেলায় বিক্ষোভকারী, বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষে এক ছাত্রদল নেতা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হচ্ছেন জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী (২৫), মহম্মদপুরের বালিদিয়া গ্রামের পান্নু শেখের ছেলে সুমন শেখ (১৯), একই উপজেলা সদরের ইউনুস মিয়ার ছেলে আহাদ (১৮) ও শ্রীপুরের রায়নগর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ইতিহাসের ছাত্র মোহাম্মদ ফরহাদ (২২)। আহত হয়েছেন তিন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন।

পাবনা
পাবনায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি চলাকালে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৪০ জন। নিহতরা হলেন সদর উপজেলার বলরামপুর গ্রামের দুলাল উদ্দিনের ছেলে জাহিদুল (১৮), দোগাছি গ্রামের কালামের ছেলে মো. মাহাবুল (২০) ও ফাহিম (১৭)। পাবনা জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. জাহিদুল ইসলাম তিনজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেন।

এমএইচআর/কেএসআর/এএসএ

Read Entire Article