দেশে গণতন্ত্র হাঁটাই শেখেনি, সেখানে পিআর পদ্ধতি হবে ধ্বংসাত্মক

4 days ago 4

বাংলাদেশের গণতন্ত্র যেখানে হাঁটেতই শেখেনি সেখানে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ধ্বংসাত্মক এবং মানুষের জন্য তা বিভ্রান্তিমূলক হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমাদের দেশের গণতন্ত্র এখনো হাঁটাই শেখেনি। যখনই গণতান্ত্রিক আন্দোলন হয়েছে, আমরা গণতন্ত্র পেয়েছি বা হাঁটা শুরু করেছি সেই সময়ই বাকশাল-শেখ হাসিনার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসহ বিভিন্ন ন্যারেটিভ তৈরি করে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে।

পিআর পদ্ধতি নিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, যেখানে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পরিপক্ব রূপই লাভ করেনি সেখানে পিআর পদ্ধতি নির্বাচন হবে ধ্বংসাত্মক এবং মানুষের জন্য বিভ্রান্তিমূলক। হয়তো কিছু স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক দল বা মহল নিজেদের সুবিধার জন্য এই বিষয়টিকে এখন প্রাধান্য দিতে চাচ্ছে। পিআর পদ্ধতি ইসরায়েল এবং নেপালে চালু আছে।

রিজভী বলেন, আমরা আগেও বলেছি- কোন রাজনৈতিক দল বা জোট তারা তাদের নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করতে পারে, নিজস্ব কর্মসূচি পালন করতে পারে, দাবিসহ আলোচনাও করতে পারে। আমরা যে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি, সে গণতন্ত্র হলো ভিন্নমতকে প্রশ্রয় দেয়া, ভিন্নমতকে সম্মান করা।

বিএনপি বাংলাদেশে একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দল উল্লেখ করে রিজভী বলেন, আমরা আমাদের বক্তব্য রাখবো। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও তাদের কথা বলবে। এতে কোনো বাধা নেই, প্রতিবন্ধকতা নেই। অন্যান্য দল তাদের দাবি করতেই পারে কিন্তু এখানে দেখতে হবে সেই দাবি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিনা।

বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৬ বছর আন্দোলন হয়েছে। জোরালো দাবি করেছি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সরকারের জন্য, একটি ইনক্লুসিভ নির্বাচনের জন্য।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছিলেন, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, তারা এখন যে পিআর পদ্ধতির কথা বলেছেন, সেটি আগে কেন বলেননি? পিআরকে সামনে কেন আনা হচ্ছে?

তিনি বলেন, পিআর নিয়ে একটা দুটো রাজনৈতিক দল জোরালো কর্মসূচির কথা বলছে। তারা বলছে, পিআর ছাড়া হবে না, এটা ছাড়া নির্বাচন করবে না। এই কথাটাই হচ্ছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

বিএনপি এই নেতা আরও বলেন, এ দাবিতে আন্দোলন করছে দলগুলো। এটা তো কখনোই নৈতিক আন্দোলন হতে পারে না। জনগণ সঙ্গে এটির কোনো সম্পর্ক নেই, সাধারণ মানুষের এ বিষয়ে কোনো আগ্রহ নেই। এইজন্য জনগণ এই বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে ওয়াকিবল নয়। অনেক মানুষ জানে না পিআর পদ্ধতি কী? কিভাবে এখানে নির্বাচন হয় এবং এই নির্বাচনের কাঠামো বা পদ্ধতি কেমন হবে।

যারা পিআর পদ্ধতি জানে না, তাদের রাজনীতি করা উচিত নয় এমন মন্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, যদি কেউ এতই জানতেন, তাহলে এতদিন এ বিষয়ে কথা বলেননি কেন? যখন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল সেই সময় কেন আপনারা বলেননি?

বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, রাজনৈতিক দলের দাবি থাকতে পারে, মতামত রাখতে পারে কিন্তু এটা যদি নির্বাচন যাওয়া, না যাওয়া এবং নির্বাচনকে প্রতিহত করার মত কিছু হয় তাহলে এতদিন ধরে মানুষের যে প্রত্যাশা করেছে সেই প্রত্যাশার প্রতি মোনাফেকি করা।

তিনি বলেন, পিআর এদেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। মানুষ এটাকে পছন্দ করছে না। মানুষ এটাকে পছন্দ করবে না। গায়ের জোরে যদি কেউ কিছু করতে চায়, সেটা জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে।

বিএনপি একটি জনসমর্থিত বৃহত্তম রাজনৈতিক দল উল্লেখ করে রিজভী বলেন, জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এই দল কাজ করে। অস্থিরতার মোকাবেলা সরকার করবেন। আশা করি যারা পিআরের কথা বলেছেন তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। সবাই মিলে ইনক্লুসিভ নির্বাচনে আসবেন, মতামত দেবেন। তা না হলে এইরকম যদি বিষয়টি পয়েন্ট অফ নো রিটার্নে চলে যায়, তাহলে যেটি হবে সেটা শেখ হাসিনার লাভ।

তিনি বলেন, গণমাধ্যম থেকে জেনেছি ৮০ শতাংশ ঐক্যমত্য হয়েছে। এখন ২০ শতাংশ হয়নি। কমিশন মেয়াদের মধ্যে বাকি কাজটা সম্পূর্ণ করতে পারবে। এটা একটা ভালো দিক বলে আমি মনে করি। যেখানে ৮০ শতাংশ ঐক্যমত্যে আমরা আসতে পারি, আর ২০ শতাংশ জন্য কোন কিছু আটকে থাকবে বলে আমার মনে হয় না।

নয়া পল্টনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সহদপ্তর সম্পাদক মনির হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি ডা. জাহিদুল কবির, ছাত্রদলের সহসভাপতি ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়াল প্রমুখ।

কেএইচ/এনএইচআর/জেআইএম

Read Entire Article