দেশে হবে আরও ৫১৬ কমিউনিটি ক্লিনিক
দেশে নতুন করে আরও ৫১৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান।
বুধবার (২০ আগস্ট) রাজধানীর মহাখালীতে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট কার্যালয়ে আয়োজিত প্রান্তিক স্বাস্থ্যসেবায় গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সারা দেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা ৫ হাজার ৮০টি কমিউনিটি ক্লিনিক মেরামত ও পুনঃস্থাপন করা হবে। নতুন কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো করা হবে জাইকার অর্থায়নে। আর মেরামত ও পুনঃস্থাপনের কাজে অর্থায়ন করবে ওপেক।
আক্তারুজ্জামান বলেন, সরকার যখন কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের পরিকল্পনা করে, তখন ছয় হাজার মানুষের জন্য অথবা ৩০ মিনিট হাঁটার দূরত্বের মধ্যে একটি করে ক্লিনিক থাকার কথা ছিল। তবে দেশের বাস্তবতায় সেটা সব জায়গায় সম্ভব হয়নি। পাহাড়ি এলাকা, হাওর কিংবা চরাঞ্চলে কোনো কোনো জায়গায় দশ হাজার থেকে পনেরো হাজার মানুষের জন্য একটি ক্লিনিক রয়েছে। ফলে সেখানকার কর্মীরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। এই ঘাটতি পূরণেই আমরা নতুন করে কমিউনিটি ক্লিনিক বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য আবেদন নেওয়া হচ্ছে। যারা জমি দিতে আগ্রহী, তারা যদি নোটারি করা ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে আন্ডারটেকিং দেন, আমরা তাদের আবেদনকে অগ্রাধিকার দিয়ে লিস্ট করছি। জমি পাওয়া গেলে দ্রুত সেই এলাকায় নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলা হবে। সব মিলিয়ে আমাদের সামনে একটা বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে, যার মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও স্বাস্থ্যসেবার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। নতুন করে আরও ৫১৬ কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া হবে ১৩ হাজার ৯৮৯ জনবল। তাদের জন্য রাজস্ব বাজেট থেকে ৪২০ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
আক্তারুজ্জামান বলেন, এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) থেকে ইতোমধ্যে ১২০ কোটি টাকার ওষুধ কেনা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই সব কমিউনিটি ক্লিনিকে ওষুধ পৌঁছে যাবে। এ ছাড়া আরও ২০০ কোটি টাকার ওষুধ কেনার প্রক্রিয়া চলছে।
কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের পরিচালক (মাঠ প্রশাসন) ডা. আসিফ মাহমুদ বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট এখন শুধু সেবা দেওয়ার জন্য সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না, বরং একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্য অবকাঠামো গড়ে তুলতে চায়। এজন্য আমরা নিজস্ব ভবন নির্মাণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছি। এর ফলে সিএইচসিপি ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা আধুনিক ও উন্নত প্রশিক্ষণ পাবেন। একইসঙ্গে সারাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো পুনর্নির্মাণ ও মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি ডিজিটাল রেফারেল সিস্টেম চালু করা হবে, যাতে একজন সেবাগ্রহীতা কোথায়, কী ধরনের চিকিৎসা পেয়েছেন তা সহজে ট্র্যাক করা যায় এবং সঠিক সময়ে সঠিক সেবা নিশ্চিত করা যায়।
সভায় জানানো হয়, সারা দেশে ১৪ হাজার ৪৬৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। প্রতিটি ক্লিনিকে একজন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের (সিএইচসিপি) পাশাপাশি স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা সহকারী সপ্তাহে দুই দিন সেবা দিয়ে থাকেন। প্রতিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম পরিচালিত হয় ১৩ থেকে ১৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিউনিটি গ্রুপের মাধ্যমে। বর্তমানে দেশে সিএইচসিপির সংখ্যা ১৩ হাজার ৯২৩ জন।
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের পরিচালক মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।