দেশের উন্নয়নে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিকল্প নেই

4 hours ago 6

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেছেন, দেশের উন্নয়নে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিকল্প নেই। আর বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো উৎসাহিত করাসহ হুন্ডি প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যম পালন করতে পারে ব্যাপক ‍ভূমিকা।

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) বন্দরনগরীর লালখানবাজারে ‘রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে মিডিয়ার ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র শাহাদাত এসব কথা বলেন।

আন্তর্জাতিক ফিনটেক কোম্পানি ও রেমিট্যান্স অ্যাপ ‘না’লা’ (NALA) এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। এতে মূলপ্রবন্ধ পাঠ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। স্বাগত বক্তব্য দেন না’লা বাংলাদেশের হেড অব গ্রোথ মাহমুদুল হাসান ও সাংবাদিক আরিচ আহমেদ শাহ। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

মেয়র শাহাদাত জানান, প্রবাসী আয়ের বড় একটি অংশ এখনো হুন্ডির মাধ্যমে দেশে আসছে, যা অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। হুন্ডি ও দুর্নীতি রোধে সবাইকে বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠাতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর ধরে অন্যায়, দুর্নীতি ও অসত্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। অনেকেই জীবন দিয়েছেন। এ অবস্থায় এসে যদি এখনো হুন্ডি ব্যবসায়ীরা আমাদের প্রবাসী আয়ের সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করে, তবে তা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

অনেক প্রবাসী শ্রমিক দ্রুত অর্থ পাঠানোর সুবিধার জন্য হুন্ডির পথ বেছে নেন উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ‘অথচ বৈধ পথে অর্থ পাঠালে সরকার থেকে অতিরিক্ত প্রণোদনা মেলে, যা হুন্ডির চেয়ে লাভজনক। কিন্তু এ বিষয়টি যথাযথভাবে প্রবাসীদের বোঝানো যাচ্ছে না। এ জন্য গণমাধ্যমকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করার আহ্বান করছি। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। কিন্তু দিন দিন বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা কমছে আর শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারতের শ্রমিকেরা তাদের জায়গা দখল করছেন। আমাদের দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলো যদি শ্রমিকদের সমস্যাগুলো ঠিকভাবে খতিয়ে দেখত, তবে রেমিটেন্স প্রবাহ কমত না।’

শাহাদাত হোসেন জানান, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে দেশে ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার বৃদ্ধি করতে হবে। বিশেষ করে নার্সিং ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিপুল চাহিদা রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ দিয়ে নার্স ও স্বাস্থ্য সহকারী তৈরি করা গেলে কানাডাসহ উন্নত দেশে তাদের সহজে কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।

মেয়র বলেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য শুধু অর্থনৈতিক উদ্যোগ নয়, নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধও জরুরি। রাষ্ট্রীয়ভাবে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। একইসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আরও গতিশীল ও সক্রিয় হতে হবে। তাহলেই দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে।

অনুষ্ঠানে না’লা বাংলাদেশের হেড অব গ্রোথ মাহমুদুল হাসান বলেন, গণমাধ্যম হলো জনসচেতনতা সৃষ্টির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠালে শুধু প্রবাসীর পরিবারই নয়, গোটা দেশ উপকৃত হয়। ব্যাংকিং চ্যানেল বা অনুমোদিত মানি ট্রান্সফার সার্ভিস ব্যবহার করলে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়, দ্রুত অর্থ পৌঁছে যায় এবং খরচও কম হয়। সাংবাদিকেরা এ বার্তাগুলো মানুষের কাছে খুব সহজেই পৌঁছে দিতে পারেন। বিভিন্ন প্রচারণা, সফলতার গল্প এবং তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে মানুষকে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করলে মূলত দেশেরই লাভ।

মূলপ্রবন্ধে অধ্যাপক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। প্রতি বছর কোটি কোটি ডলার দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয় এ রেমিট্যান্সের মাধ্যমে। এটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি পরিবার ও সমাজের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও বিশেষ ভূমিকা রাখে। তবে এ প্রবাহ বাড়াতে প্রবাসীদের সচেতনতা, আস্থা এবং ইতিবাচক আচরণ গড়ে তোলা জরুরি। আর এখানেই গণমাধ্যমের ভূমিকা হয়ে ওঠে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

না’লার পক্ষ থেকে জানানো হয়, বর্তমানে অ্যাপটি ব্যবহার করে প্রবাসীরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ মিলিয়ে মোট ২১টি দেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠাতে পারেন। ২০২১ সালে চালু হওয়া অ্যাপটির ব্যবহারকারীর সংখ্যা বর্তমানে ৫ লাখেরও বেশি।

এমআরএএইচ/একিউএফ

Read Entire Article