ভারতকে উদ্দেশ করে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে বলে দিতে চাই আপনারা শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর যে খেলা শুরু করেছেন, সেটা বন্ধ করুন। অন্যথায় আপনাদের জন্য সেটা শুভ হবে না।
অপর দিকে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানাব সীমান্তবর্তী মানুষকে সামরিক ট্রেনিং দিয়ে প্রয়োজনে বিজিবির সঙ্গে তারাও কাজ করবে। তবুও ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের দেশের একটা লাশ পড়লে ওপারের দুইটা লাশ ফেলতে হবে।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা মাল্টিপারপাস অডিটরিয়াম হলরুমে ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণে এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় নুরুল হক নুর বলেন, আওয়ামী লীগ এখন একটা মরা লাশ। এই লাশকে টানাটানি করে সান্ত্বনা ছাড়া আর কিছু নাই। কোনোভাবেই এই আওয়ামী লীগকে আর রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া যাবে না। কারণ আওয়ামী লীগ যদি আবার কোনোভাবে ফিরে, তাহলে তারা আবার ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যে নারকীয় তাণ্ডব করেছে শেখ হাসিনাবাদ কায়েম হয়েছে এর চেয়েও ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য ছিল, এই ঐক্যে ফাটল ধরেছে। দলগুলোর মধ্যে যত ফাটল ধরবে ফ্যাসিবাদ তত তাড়াতাড়ি ফিরে আসার সুযোগ পাবে।
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আজকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের সঙ্গে গোলাগুলি হয়েছে। আমাদের বিভিন্ন সীমান্তে তারা কাটা তারের বেড়া দেওয়ার অপচেষ্টা করেছে। আমাদের কিছু ভূমি দখলের পাঁয়তারা করছে তারা। কারণ শেখ হাসিনা সরকার অনেক ক্ষেত্রে তাদের সুযোগ করে দিয়েছিল। কিন্তু আমাদের পরিষ্কার বার্তা, আমরা বেঁচে থাকতে, এই দেশের ১৮ কোটি মানুষ এই দেশের ১ ইঞ্চি জমিও ভারতকে দখল করতে দেবে না।
মতবিনিময় সভায় নুরুল হক বলেন, সরকার শতাধিক পণ্যে কর এবং শুল্ক বাড়িয়েছে। টিস্যুতে, ওষুধ, রেস্টুরেন্টে, মোবাইলের কথা বলবেন সেখানেও ভ্যাট ট্যাক্স বাড়িয়ে দিয়েছে। শুল্ক ও কর বাড়ার এই গণবিরোধী সিদ্ধান্ত মানুষের জন্য আরও ভোগান্তি হবে। এমনিতে মানুষের হাতে টাকা নেই, দেশের বিনিয়োগ নেই, নতুন কর্মসংস্থান নেই, এই আন্দোলন সংগ্রামে বিভিন্ন শিল্প খাতে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন সরকার মানুষকে কীভাবে স্বস্তি দেবে, কীভাবে মানুষের এই কষ্টে আগুন নিভানোর জন্য পানি ঢেলে দেবে, সেইটা না করে সরকার পেট্রোল ঢেলে দিয়েছে। যে পেট্রোলে এখন টের পাচ্ছেন না, কয়েকদিন পরে ঠিকই মানুষ প্রতিক্রিয়া দেখাবে। মানুষ এখন আন্দোলন করছে না কারণ মানুষ মনে করেছে কয়েকদিন আগে আন্দোলন করে এই সরকারকে বসিয়েছি। এখনই যদি সরকারের বিরুদ্ধে নামি শুধু এই সেন্স থেকে সরকারের বিরোধিতা করছে না। তাই বলে সরকার যা ইচ্ছা তাই করবে গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নেবে আমরা সেটাকে সমর্থন দেব না।
স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে নুর বলেন, আজ একটা প্রথম সারির পত্রিকায় পড়লাম দেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন চায়। আমরাও দলের পক্ষ থেকে বলেছি জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি স্থানীয় নির্বাচন দেওয়া হয় তাহলে মানুষের মাঝে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে। মানুষের রাজনৈতিক সম্পর্কে একটা ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। কিন্তু নির্বাচিত রাজনৈতিক দল এককভাবে সরকার গঠন করে তখন তারা স্থানীয় নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করবে।
এসময় গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র সহসভাপতি ও মুখপাত্র ফারুক হাসান রংপুর-১ আসনে গণঅধিকার কেন্দ্রীয় কমিটির উচ্চতর পরিষদ ও রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সমন্বয়ক হানিফ খান সজিবকে আগামী নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করেন।
গণঅধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির উচ্চতর পরিষদ ও রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সমন্বয়ক হানিফ খান সজিবের সভাপতিত্বে ও গণঅধিকার পরিষদ রংপুর জেলার সাবেক ভারপ্রাপ্ত শেরে খোদা আসাদুল্লাহর সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন গণঅধিকার পরিষদ রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা মোন্নাফ, রংপুর বিভাগীয় সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক ইব্রাহিম খোকন, কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য হাজি মো. কামাল হোসেন, আমিনুল ইসলাম, ছাত্র অধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, যুব অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এরশাদুল হক, ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মামুনুর রশিদ, ছাত্র অধিকার পরিষদের রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম শিশির প্রমুখ।