দেশের সাধারণ মানুষ ভালো নেই : সেলিমা রহমান

1 day ago 4
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, নির্বাচনের রোডম্যাপ এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি এই সমস্ত কারণে বাংলাদেশে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষ কেউ ভালো নেই।  বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বরিশাল নগরীর ফজলুল হক অ্যাভিনিউ সড়কে নগর ভবনের সামনে বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা, নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা, পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্ত মোকাবিলার দাবিতে এ সমাবেশ আয়োজন করা হয়। এসময় তিনি বলেন, আমরা অনেক আশা নিয়ে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে ছাত্র-জনতার আগস্ট বিপ্লবের পরে একটি অন্তর্বর্তী সরকার দিয়েছি। আমরা ভেবেছিলাম তারা হয়ত দেশে সুন্দর একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে নির্বাচন দেবে। কিন্তু আজকে দেখতে পাচ্ছি, ফ্যাসিস্ট সরকার, দেশ থেকে চলে গেছে, যে পালিয়ে গেছে, যাকে বিতাড়িত করা হয়েছে। যাকে ঘৃণা ভরে সব জনগণ আজকে একভাবে ধিক্কার দিচ্ছে, তার দোসররা রয়েছে গেছে। তারা রয়ে যাওয়ার কারণে আজকে বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন পরিস্থিতি, বিভিন্ন উৎশৃঙ্খলতা সৃষ্টি করছে। আমরা দেখেছি সেখানে সরকার কিছু করতে পারছে না। আজ দরকার ঐক্যবদ্ধ সরকার, যে ঐক্যবদ্ধতা আমরা করতে না পারলে আগামী নির্বাচনকে নানা উছিলায় পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। তবে মানুষের পাশে থেকে আমরা যদি সুন্দর নির্বাচন করতে পারি তাহলে বুঝবো যে স্বপ্ন আশা নিয়ে শহীদ হয়েছেন, তাদের সেই স্বপ্ন-আশা পূরণ করতে পারব। সমাবেশে সেলিমা রহমান আরও বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ১৭ বছর আমরা আন্দোলন করেছি। আমরা সরকারকে বার বার বলছি জবাবদিহিতামূলক সরকার না হলে কোনোদিন জনগণের আস্থা ফিরে আসে না। কেউ বলছেন সংস্কারের পর নির্বাচন, আবার বলছেন স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হবে। কিন্তু আপনার (বর্তমান সরকারের) তো স্থানীয় নির্বাচন করার কোনো দায়িত্ব নেই এবং কোনোদিন এটা করতে পারেনও না। আপনাকে (ড. ইউনূস) সংসদ নির্বাচন দিতে হবে এবং তার রোডম্যাপও ঘোষণা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের এখনো স্যালুট করি। তবে আপনাদের বলি আপনারা দল করলে সরকার থেকে বের হয়ে দল করুন। নির্বাচনে আসুন নিশ্চয়ই জনগণ আপনাদের ভালোবাসবেন, কারণ আপনারা বুকের রক্ত দিয়েছেন এই আন্দোলনে। এই জনগণ নিশ্চয়ই ভালোবাসবেন এবং হয়ত নির্বাচিতও করবেন। কাকে নির্বাচিত করল সেটি বিএনপির দেখার বিষয় নয়, বিএনপির দেখার বিষয় জনগণ যথা মৌলিক অধিকার ফিরে পেয়েছে কিনা। তিনি বলেন, দুঃশাসনের বাংলাদেশে আইয়ামে জাহিলাতের সরকার পরিণত হয়েছিল। দুঃশাসনে আইয়ামে জাহেলিয়াতের মতো মানুষকে জিন্দা কবর দেওয়া হতো। ১৫টি বছর শেখ হাসিনা এ দেশের মানুষের বুকের ওপর পারা দিয়ে রক্ত চুষে খেয়েছে। তাই হাসিনার কোনো দোসরকে দেশে রাখা চলবে না। যারা বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছে তাদের বিচার হতে হবে। তিনি বলেন, এত কিছুর পরেও হাসিনা কোনো অনুতাপ করেনি, বরং তিনি উলটো কথা বলছেন। পার্শ্ববর্তী দেশে বসে তিনি ষড়যন্ত্র করছেন, আর সমানে উসকানি দিচ্ছেন। আমরা এটি মানবো না। সেলিমা রহমান বলেন, সংস্কার আমরাও চাই, সংস্কার একটি চলমান জিনিস। আজ যেটা ঠিক কাল সেটা বেঠিক হতে পারে। সংস্কার সবসময় পরিবর্তন হয়। সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছিলেন আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব। তিনি ৩১ দফা দিয়েছেন, যার মধ্যে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। যে চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আগামী দিনের পরিচ্ছন্ন রাজনীতি গড়ে উঠবে। যে রাজনীতি হবে সাধারণ মানুষের, যে রাজনীতি হবে জনগণের মৌলিক অধিকারের। সেই রাজনীতি ৩১ দফার মধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। সভার শেষে মুক্তিযোদ্ধা, ভাষাসৈনিকসহ বিএনপি নেতাকর্মীসহ জুলাই বিপ্লবের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বেগম সেলিমা রহমান। বিকেল ৪টায় শুরু হওয়া সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও বরিশাল সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবর রহমান সরোয়ার।  বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহীনের সঞ্চালনায় এসময় অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন- চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মাসুদ আহমেদ তালুকদার, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বরিশাল বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, মাহাবুবুল হক নান্নু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মাদ রহমাতুল্লাহ, এবায়দুল হক চাঁন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক, সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার প্রমুখ।
Read Entire Article