দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে: সাকি

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, আমাদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা হলো বাংলাদেশে একটা উৎপাদনশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করা, যেটার মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে সুযোগের সমতা তৈরি হবে, সম্পদের বন্টনের অধিকতর ন্যায্যতা তৈরি হবে এবং আরো অধিকতর সমতাভিত্তিক সমাজের পথ তৈরি হবে। এই পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটা শিক্ষার পুনর্বাসনের পরিকল্পনা আমরা হাজির করতে চাই। আমরা মনে করি, বাংলাদেশে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। সোমবার (২৪ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে গণসংহতি আন্দোলন-জিএসএর উদ্যোগে ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে শিক্ষা সংস্কার ভাবনা’ শীর্ষক সভার আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।  গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে ‘আপনার মতামত, আমাদের ইশতেহার’ শীর্ষক উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভার শুরুতেই গণসংহতি আন্দোলনের শিক্ষা সংস্কার ভাবনা তুলে ধরেন দলের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্য সচিব আতিকুল বারী চৌধুরী।  সভায় জোনায়েদ সাকি বলেন, একদিকে মানবিক জনগোষ্ঠী তৈরি করা ও অন্যদিকে দক্ষ

দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে: সাকি

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, আমাদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা হলো বাংলাদেশে একটা উৎপাদনশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করা, যেটার মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে সুযোগের সমতা তৈরি হবে, সম্পদের বন্টনের অধিকতর ন্যায্যতা তৈরি হবে এবং আরো অধিকতর সমতাভিত্তিক সমাজের পথ তৈরি হবে। এই পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটা শিক্ষার পুনর্বাসনের পরিকল্পনা আমরা হাজির করতে চাই। আমরা মনে করি, বাংলাদেশে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে।

সোমবার (২৪ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে গণসংহতি আন্দোলন-জিএসএর উদ্যোগে ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে শিক্ষা সংস্কার ভাবনা’ শীর্ষক সভার আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি। 

গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে ‘আপনার মতামত, আমাদের ইশতেহার’ শীর্ষক উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভার শুরুতেই গণসংহতি আন্দোলনের শিক্ষা সংস্কার ভাবনা তুলে ধরেন দলের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্য সচিব আতিকুল বারী চৌধুরী। 

সভায় জোনায়েদ সাকি বলেন, একদিকে মানবিক জনগোষ্ঠী তৈরি করা ও অন্যদিকে দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি করা, দুটো কাজই খুব জরুরি এবং দুটোই বর্তমানের চাহিদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে আমাদের করতে হবে।

তিনি বলেন, দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সমস্ত শিশুর শিক্ষাকে রাষ্ট্রের খাতে আনতে হলে একদিকে যেমন বাজেটের প্রয়োজন আছে, অন্যদিকে শিক্ষাব্যবস্থার নীতি-কাঠামোতেও পরিবর্তন আনতে হবে।

জোনায়েদ সাকি বলেন, শিক্ষকদের বেতন, সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদাকে একটা সুনির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড় করাতে হবে। শিক্ষকদের জন্য একটা স্বতন্ত্র বেতন স্কেল হওয়া দরকার। একেবারে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেল এবং তাদের মর্যাদার কাঠামো তৈরি করতে হবে।

জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, শিক্ষকদের মর্যাদা এবং তাদের কাজের মূল্যায়ন- এই দুটো জিনিসকে একসাথে করে আমাদের বাজেট পরিকল্পনা করতে হবে। এর সাথে যুক্ত হবে অবকাঠামো ও তথ্যপ্রযুক্তিগত সব ধরনের আধুনিক ব্যবস্থাবলী। এই তিনটি বিষয়কে গুরুত্বের সাথে নিলে বাংলাদেশে রাষ্ট্রের দায়িত্বে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা দেওয়া অবশ্যই সম্ভব। 

লেখক ও চিন্তক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, গণশিক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করা যাবে। তিনি বলেন, দেশের সব মানুষকে যদি মৌলিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা যায়, তাহলে দেশের উন্নয়নের কাজ কঠিন হবে না। কারণ মানুষ জানবে কী করলে কী হয়, সে কী করতে পারে এবং সে তার দক্ষতাকে কোথায় ব্যবহার করতে পারে।

ড. মাহবুব উল্লাহ আরও বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার মান যদি খারাপ হয়, তাহলে মাধ্যমিক শিক্ষার মান খারাপ হতে বাধ্য। মাধ্যমিক শিক্ষার মান খারাপ হলে পরবর্তী পর্যায়ের শিক্ষার মান খারাপ হতে বাধ্য। এভাবে মানের অভাব এবং মানের আরও অবনতি ঘটে। তিনি বলেন, জাতি হিসেবে আমাদের মনস্তত্ত্বের মধ্যে যেটা ঢুকেছে সেটা হলো, আমাদের সার্টিফিকেট চাই। সাসেক্সের পণ্ডিতরা এটাকে বলেছেন ডিপ্লোমা ডিজিন। আমরা প্রায় সবাই এই ডিপ্লোমা ডিজিজে আক্রান্ত। এই অবস্থা থেকে কীভাবে বের হওয়া যাবে এবং সমগ্র জাতিকে কীভাবে বোঝাতে পারবো যে শিক্ষাটা আসলে অর্জন করার বিষয়, সেটাই মূল প্রশ্ন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা বলেন, শিক্ষার সাথে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় সংঘর্ষ ও সংযোগ তৈরি হয়েছে রাজনীতির। ৫ই আগস্টের ঘটনার পর বিষয়টি এখন শিক্ষাকেন্দ্রিক না হয়ে রাজনীতিকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। অর্থাৎ শিক্ষা দিয়ে আপনি আসলে কী মাত্রার রাজনীতিটা করতে পারবেন। শিক্ষার সাথে যুক্ত হয়েছে বাণিজ্য। তিনি বলেন, আমার বলতে এতটুকু দ্বিধা নেই, এই দেশে শিক্ষা মানে হচ্ছে বাণিজ্য, ব্যবসা। আপনি সার্টিফিকেটের জন্য পড়াশোনা করতে চান। কিন্তু শিক্ষার উদ্দেশ্য এটা ছিল না। শিক্ষার উদ্দেশ্য ছিল সত্য অন্বেষণ করা, ট্রুথ রিভিল করা। 

তিনি আরও বলেন, যাদের সাথে আপনারা প্রতিযোগিতার চিন্তা করছেন, সেই দেশগুলো শিক্ষা নিয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। তারা এখন আর শুধু ডিজিটালাইজেশন নিয়ে বসে নেই, তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে ভাবছে। আমাদের এমন মানুষ তৈরি করতে হবে যারা চিন্তা করতে পারে, সৃষ্টি করতে পারে এবং সৃষ্টিশীল হতে পারে। সবাইকে এমএ পাস করানোর প্রয়োজন নেই, বরং স্কুল-কলেজ থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কার দক্ষতা কোন দিকে। কেউ কোনো কাজে দক্ষ হওয়া মানেই সে কম মেধাবী, এই ভাবনাটা ভুল।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে জিএসএর নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, গণসংহতি আন্দোলনের ইশতেহার প্রণয়নের অংশ হিসেবে এই আলোচনাগুলো আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের আলোচনা এবং জনগণের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে দলের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করা হবে। 

আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন লেখক ও মানবাধিকারকর্মী ইলিরা দেওয়ান, শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠক আবুল হাসনাত কবির, প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক মনযূরুল হক, লেখক ও শিক্ষক সফিক ইসলাম এবং আমাদের পাঠশালার প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন৷

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow