দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ‘চাঁদাবাজ’ আখ্যা প্রধান শিক্ষকের, তদন্তে কমিটি

5 hours ago 4
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে হাতের লেখা খারাপ হওয়ায় দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযোগের দায় এড়াতে ওই শিশু শিক্ষার্থীকে উল্টো ‘চাঁদাবাজ’ আখ্যা দিয়ে অভিভাবককে গাল-মন্দ করেছেন বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা ও এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে গত রোববার (১৭ আগস্ট) ওই শিক্ষার্থীর মা এবং ওই বিদ্যালয়ের ২৫ জন অভিভাবক স্বাক্ষর করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। এরই প্রেক্ষিতে ইউএনও মনজুরুল আলম উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মীর মোহাম্মদ আলীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম উপজেলার অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিভাবক, শিক্ষক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী তাছিন তালহা (৭) প্রতিদিনের মতো স্কুলে যায়। ওই দিন প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম ক্লাসে গিয়ে ক্লাস টেস্ট অনুশীলনের অংশ হিসাবে সবাইকে ‘আমাদের ছোট নদী’ ছড়া লিখতে দেন। ছড়া লেখায় ছাত্র তালহা বেশ কয়েকটি বর্ণ ছোট-বড় করে লিখে শিক্ষককে জমা দেন। কিছু লেখা ছোট বড় এবং ক্লাসে বিশৃঙ্খলা করায় তাকে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বেধরক মারধর করেন। এ সময় ছাত্রটির পিঠ এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারের দাগ দেখা যায়।  পরে দৈনিক সমাবেশ চলাকালীন লাইন বাঁকা হওয়াই আবারও তালহাসহ আরও বেশ কিছু শিক্ষার্থীর হাতে কঞ্চি দিয়ে মারেন ওই প্রধান শিক্ষক। বিষয়টি সে বাড়িতে এসে মাকে জানালে তার মা মারধরের কারণ জানতে স্কুলের ওই শিক্ষকের কাছে যান। এ সময় গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে তাকে ও তার ছেলেকে ‘চাঁদাবাজ’ আখ্যা দিয়ে গালাগাল করেন ওই শিক্ষক। এরপর থেকে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা। ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে তিনি শিশু ছাত্রকে চাঁদাবাজ বানানোর চেষ্টা করছেন বলে স্থানীয়রা জানান। শিশুটির মা তাসলিমা আকতার শাপলা বলেন, ‘ওই শিক্ষকের কাছে মারধরের কারণ জানতে গেলে তিনি আমাকে বলেন, আপনার ছেলে আমার কাছে এক মাস আগে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। তার উপর লেখা খারাপ করেছে বলে, আমাকে ও আমার ছেলেকে চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে গালাগাল করেছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’ স্থানীয় বাসিন্দা মো. জালাল মন্ডল বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম সবসময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। সামান্য ভুলেও বাচ্চাদের পেটান, সমাবেশে লাইন বাঁকা হলেও ছাড় দেন না। এমনকি প্রশংসাপত্র দিতে নিয়মবহির্ভূতভাবে টাকা নেন। তার এই আচরণে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে।’ ওই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী অথৈ বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক কারণে-অকারণে আমাদের মারধর করেন। সেদিন দৈনিক সমাবেশে জাতীয় সঙ্গীত পাঠের সময় এক শিক্ষার্থী আটকে গিয়েছিল সেজন্য সকল শিক্ষার্থীকে মারধর করেছেন।’ অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মাস খানেক আগে ওই ছাত্র আমার কাছে এসে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দাবি করেছিল। সেদিন ক্লাসে হট্টোগোল করায় ক্লাস নিয়ন্ত্রণ করতে মেরেছি। এটা আমার ঠিক হয়নি। প্রশংসাপত্র কম্পিউটার থেকে তৈরি করতে খরচ হয়। তাই অল্প পরিমাণে আদায় করি। কিন্তু এর কোন রসিদ দেওয়া হয় না। তবে সবার কাছে নেই না।’  দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র চাঁদা চেয়েছে বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘৫০ হাজার টাকা জরিমানা দাবি করে। টাকা না দিলে এই স্কুলে চাকরি করতে পারবেন না।’ এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আমরা অবগত হয়েছি। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা একটি অভিযোগ দিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা  হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুরুল আলম বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারি। দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রকে মারধরের ঘটনায় ছাত্রটির মা একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। একজন দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী চাঁদা দাবি করতে পারে এটা আমার বোধগম্য নয়। মারধর ও চাঁদার বিষয়টি আমলে নিয়ে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মীর মোহাম্মদ আলীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে এবং সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
Read Entire Article