দ্রুত খাবার ও গরম কাপড় চান আগুনে ক্ষতিগ্রস্তরা

‘সারারাত বাচ্চা দুইটা নিয়ে খোলা আকাশের নিচে ছিলাম। মাঝরাত থেকে ভোর পর্যন্ত শীতে জবুথবু অবস্থায় ছিলাম। গায়ে দেওয়ার মতো একটা কাঁথা বা বিছানাও ছিল না। সকালে রোদ ওঠার পর শরীরটা গরম হয়েছে। কিন্তু বাচ্চা দুইটার সর্দি লেগে গেছে। ওষুধ কিনবো কী করে, পকেটে টাকা নেই। আগুনে বসতঘর পুড়ে ছাই হয়েছে। এখন নতুন করে ঘর কীভাবে বানাবো, তা ভেবে দিশাহারা হয়ে গেছি।’ বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকালে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর কড়াইল বস্তির বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন। তিনি পেশায় একজন ভ্যানচালক। পরিবারের চার সদস্য নিয়ে থাকতেন কড়াইল বস্তিতে। কিন্তু মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) লাগা আগুনে তার ঘরসহ প্রায় ১৫০০ ঘর পুড়ে গেছে। দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিটের সদস্যরা। এ আগুনে বস্তির প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কড়াইল বস্তির একটি ভাড়া বাসায় সাত বছর ধরে বাস করতেন বনানীর একটি বিপণিবিতানের কর্মী আবুল খায়ের। যেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, ঠিক পাশে তার বাসা ছিল। আগুনে তার বাসার কোনো চিহ্ন নেই। ঘরের সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। শিশুসন্তান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন অসহায় বাবা-ছবি জাগো নিউজ পুড়ে য

দ্রুত খাবার ও গরম কাপড় চান আগুনে ক্ষতিগ্রস্তরা

‘সারারাত বাচ্চা দুইটা নিয়ে খোলা আকাশের নিচে ছিলাম। মাঝরাত থেকে ভোর পর্যন্ত শীতে জবুথবু অবস্থায় ছিলাম। গায়ে দেওয়ার মতো একটা কাঁথা বা বিছানাও ছিল না। সকালে রোদ ওঠার পর শরীরটা গরম হয়েছে। কিন্তু বাচ্চা দুইটার সর্দি লেগে গেছে। ওষুধ কিনবো কী করে, পকেটে টাকা নেই। আগুনে বসতঘর পুড়ে ছাই হয়েছে। এখন নতুন করে ঘর কীভাবে বানাবো, তা ভেবে দিশাহারা হয়ে গেছি।’

বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকালে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর কড়াইল বস্তির বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন। তিনি পেশায় একজন ভ্যানচালক। পরিবারের চার সদস্য নিয়ে থাকতেন কড়াইল বস্তিতে। কিন্তু মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) লাগা আগুনে তার ঘরসহ প্রায় ১৫০০ ঘর পুড়ে গেছে। দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিটের সদস্যরা। এ আগুনে বস্তির প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

কড়াইল বস্তির একটি ভাড়া বাসায় সাত বছর ধরে বাস করতেন বনানীর একটি বিপণিবিতানের কর্মী আবুল খায়ের। যেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, ঠিক পাশে তার বাসা ছিল। আগুনে তার বাসার কোনো চিহ্ন নেই। ঘরের সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

দ্রুত খাবার ও গরম কাপড় চান আগুনে ক্ষতিগ্রস্তরা

শিশুসন্তান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন অসহায় বাবা-ছবি জাগো নিউজ

পুড়ে যাওয়া ঘরের এক কোণে মন খারাপ করে বসে আছেন আবুল খায়ের। সঙ্গে তার স্ত্রী নাসরিন দাঁড়িয়ে আছেন। কারও সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না তারা। এক পর্যায়ে আবুল খায়ের বলেন, গতকাল যখন আগুন লাগে, আমি বনানীতে ছিলাম। স্ত্রীও বনানীর একটি বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে। সে কাজ শেষ করে বিকেল চারটায় বাসায় যায়। এর কিছু সময় পর বস্তিতে আগুন লাগে। তখন স্ত্রী মুঠোফোনে কল দিয়ে আমাকে বিষয়টি জানায়। ছুটে গিয়ে দেখি, আমার ঘরেও আগুন জ্বলছে। ঘর থেকে কোনো মালামাল বের করতে পারিনি। আমার সাজানো সংসার এক মুহূর্তে ছাই হয়ে গেল।

আরও পড়ুন
শুধু পরনের পোশাকটাই আছে, বাকি সব পুড়ে ছাই: মমতাজ
৫ ঘণ্টা পর নিভলো কড়াইল বস্তির আগুন
‘রাতে কী খাবো, কোথায় যাবো জানি না’

এ সময় পাশে থাকা নাসরিন বলেন, আগুন লাগার পর দেখি, বস্তির সবাই চারদিকে দৌড়ঝাঁপ করছে। বাচ্চাগুলো চিৎকার করছে। আগুন নেভাতে কোথাও পানির ব্যবস্থা নেই। এমন দৃশ্য দেখে আমি কী করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ঘর থেকে আসবাবপত্র বের করে কোথায়, কীভাবে নেবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। কোনো রকমে মোবাইলটা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছি। পরে স্বামী এলেও আগুনের কারণে ঘরে ঢুকতে পারেনি। চোখের সামনে সব পুড়ে গেল।

দ্রুত খাবার ও গরম কাপড় চান আগুনে ক্ষতিগ্রস্তরা

অসহায় বস্তিবাসী-ছবি জাগো নিউজ

কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগার প্রায় ৪০ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে জানিয়ে নিলুফা আক্তার নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, বস্তিতে কী কারণে আগুন লেগেছে, তা স্পষ্ট নয়। তবে আগুন মুহূর্তেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সবাই নিজের জীবন বাঁচাতেই দৌড়ে চলে যান। কিন্তু আগুন নেভাতে কেউ এগিয়ে আসেনি। আবার আগুন নেভাতে পানির ব্যবস্থাও ছিল না।

রাতে আগুন লাগার পর ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারিনি। রাতের খাবারটা বিকেলেই রান্না করে রাখা হয়েছিল। সে খাবারটাও ছাই হয়ে গেছে। পকেটে টাকা না থাকায় রাতে খাবারও কিনতে পারিনি। তবে মধ্যরাতে বস্তিবাসীর মাঝে খাবার বিতরণ করেছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তখন তিন প্যাকেট খিচুড়ি পেয়েছি। এগুলোই আমরা পাঁচজনে খেয়ে রাত পার করেছি। এখন কী খাবো তা বুঝে উঠতে পারছি না। রাস্তায় কারও কাছে সাহায্যও চাইতে পারছি না। অথচ পাশেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নগর ভবন। তারা তেমন কোনো সহযোগিতা করছে না।

তিনি বলেন, ঘটনার পরপরই অনেকে ফায়ার সার্ভিসের টেলিফোন নম্বরে কল দিয়েছে। কিন্তু তারা প্রায় ৪০ মিনিট পর বস্তিতে এসেছে। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। মহাখালী এলাকায় কড়াইলসহ বেশ কয়েকটি বস্তি আছে। অথচ এখানে কোনো ফায়ার স্টেশন নেই।

যদিও গতকাল ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে যেতে দেরি হওয়ার কারণ জানিয়েছে সংস্থাটি। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম গতকাল রাতে কড়াইল বস্তিতে গিয়ে বলেছেন, দ্রুত পৌঁছাতে পারলে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যেত। কিন্তু সড়কে যানজটের কারণে আমাদের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে ৩৫ মিনিটের বেশি সময় লাগে। এরপর একে একে ইউনিট আসতে আরও সময় লাগে। ফায়ার সার্ভিসের বড় গাড়িগুলো শুরুতে আগুনের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। আমরা এসে দেখি আগুন প্রায় ডেভেলপ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আগুনের স্তর যখন তৃতীয় পর্যায়ে চলে আসে তখন নিয়ন্ত্রণ করতে কিছুটা সময় লাগে। আবার এ বস্তিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে একটু সময় লেগেছে, কারণ এখানে আগুন নেভানোর সীমাবদ্ধতা প্রচুর।

দ্রুত খাবার ও গরম কাপড় চান আগুনে ক্ষতিগ্রস্তরা

বস্তিবাসীর সর্বশেষ অবস্থা-ছবি জাগো নিউজ

কড়াইল বস্তিতে দুই রুমের একটি টিনশেড বাসায় পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে বাস করতেন বিল্লাল হোসেন। আগুনে তার ঘরটিও পুড়ে গেছে। রাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বনানী ১১ নম্বর রোডের ফুটপাতে পলিথিন বিছিয়ে ঘুমিয়েছেন। সকালে নিজ বাসায় গিয়ে কোনো কিছুই অবশিষ্ট পাননি।

আরও পড়ুন
‘আগুন দেখে শুধু বাচ্চাগুলোরে নিয়ে ঘর থেকে বের হতে পারছি’
‘স্বপ্ন আগুনে পুড়ে ছাই’, কান্না আর আহাজারি বস্তিবাসীর
কড়াইল বস্তির ১৫০০ ঘর-বাড়ি আগুনে পুড়েছে: ফায়ার সার্ভিস

আলাপকাল বিল্লাল হোসেন বলেন, গতকাল রাতে আগুন লাগার পর ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারিনি। রাতের খাবারটা বিকেলেই রান্না করে রাখা হয়েছিল। সে খাবারটাও ছাই হয়ে গেছে। পকেটে টাকা না থাকায় রাতে খাবারও কিনতে পারিনি। তবে মধ্যরাতে বস্তিবাসীর মাঝে খাবার বিতরণ করেছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তখন তিন প্যাকেট খিচুড়ি পেয়েছি। এগুলোই আমরা পাঁচজনে খেয়ে রাত পার করেছি। এখন কী খাবো তা বুঝে উঠতে পারছি না। রাস্তায় কারও কাছে সাহায্যও চাইতে পারছি না। অথচ পাশেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নগর ভবন। তারা তেমন কোনো সহযোগিতা করছে না।

দ্রুত খাবার ও গরম কাপড় চান আগুনে ক্ষতিগ্রস্তরা

রাতে কড়াইল বস্তিতে খাবার বিতরণ করেন জামায়াত আমির-ছবি সংগৃহীত

জানতে চাইলে ডিএনসিসির বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির খান বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর গতকাল রাতে ডিএনসিসি প্রশাসক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। সে অনুযায়ী ঢাকা জেলা প্রশাসন, ডিএনসিসি, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন এনজিওর সমন্বয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

অগ্নিকাণ্ডের পর গতকাল রাতে ডিএনসিসি প্রশাসক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। সে অনুযায়ী ঢাকা জেলা প্রশাসন, ডিএনসিসি, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন এনজিও এর সমন্বয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বিকেলে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে সমন্বয় সভা করা হবে। এ সভায় মন্ত্রণালয়কে তাৎক্ষণিক খাবার ও গরম জামা সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানাবো।

অগ্নিকাণ্ডের পর অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা খাবার কিনে খেতে পারছেন না। আবার শীতে তাদের গরম জামাও নেই। এমন অবস্থায় কবে নাগাদ সহায়তা মিলবে তা জানতে চাইলে ডিএনসিসির বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা বলেন, বিকেলে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে সমন্বয় সভা করা হবে। এ সভায় মন্ত্রণালয়কে তাৎক্ষণিক খাবার ও গরম জামা সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানাবো।

এদিকে কড়াইল বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে গৃহহীন হয়ে পড়া অসংখ্য পরিবারের প্রতি গভীর উদ্বেগ ও সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার মধ্যরাতে এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, কড়াইল বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের কারণে বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এটি আমাদের সকলের জন্য গভীর দুঃখের বিষয়। সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল সহায়তা প্রদান করবে। এ ঘটনায় আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন প্রধান উপদেষ্টা। পাশাপাশি তিনি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে অবিলম্বে উদ্ধার, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন।

এমএমএ/এসএইচএস/এমএস

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow