ধর্ম ত্যাগ করে বিয়ে করেছিলেন। বনশ্রীকে ভালোবেসে সংসার পেতেছিলেন। কিন্তু জীবনের কি করুণ পরিহাস, একদিন সেই স্বামীও ছেড়ে গিয়েছিলেন নায়িকা বনশ্রীকে। এরপর থেকেই মূলত কঠিন এক সংগ্রামের জীবনের মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে। দীর্ঘদিনের সেই সংগ্রাম থামিয়ে বনশ্রী এখন জীবনের ওপারে পাড়ি জমিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) মৃত্যু বরণ করেছেন তিনি।
তার জীবনের পরতে পরতে গল্পের ছড়াছড়ি। সেইসব গল্প যেমন মনকে খারাপ করে দেয় তেমনি রোমাঞ্চকরও। জানা যায়, বনশ্রীর পরিবারিক নাম সাহিনা আকতার। তিনি সুশ্রী ছিলেন কৈশোর থেকেই। মাদারিপুর থেকে বাবার সঙ্গে ঢাকায় এসে মোহাম্মদপুরে পরিবারসহ থাকতে শুরু করেন বনশ্রী। এখানে তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কত ছেলে যে প্রেমে পড়েছে সেই হিসেব নেই। তবে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন শ্যামল নামের একজন। ৯২ বা ৯৩ সালের ঘটনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির এক ছাত্র বনশ্রীদের পাশের বাড়িতে থাকতেন। তার নাম ছিল শ্যামল কুমার কণ্ঠ। তিনি বনশ্রীকে ভালোবাসতেন। রোজ লিখতেন চিঠি। বনশ্রীর পাত্তা না পেয়ে গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করতে চাচ্ছিলেন। পরে সব জেনে শ্যামলের মা বনশ্রীর বাড়িতে গিয়ে তার বাবার হাতে ছেলেকে তুলে দেন ‘ছেলের মৃত্যুর চেয়ে মুসলমান ছেলে অনেক ভালো’ এই দাবি করে। সেদিনই শ্যামলের সঙ্গে বনশ্রীর বিয়ে হয়ে গেল। শ্যামল কুমার কণ্ঠ ধর্ম ও নাম বদলে হয়ে গেলেন মাসুদ চৌধুরী।
এত রোমান্টিক গল্পটাও এক সময় বিষাদের হয়ে গেল। যে মানুষ বনশ্রীকে পাওয়ার জন্য গায়ে আগুন দিয়ে মরতে চেয়েছিলেন সেই মাসুদ একদিন বনশ্রীকে ফেলে চলে গেলেন। সঙ্গে নিয়ে গেলেন একমাত্র কন্যা শ্রাবন্তীকেও। কিন্তু কেন?
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিয়ের পর বনশ্রী নায়িকা হতে চাইলে স্বামী আপত্তি করেননি। বনশ্রীও সুযোগ পেয়ে যান। পেটে বাচ্চা নিয়ে শুটিং করেছেন। সবকিছুই ঠিক ছিল। কিন্তু তার প্রথম সিনেমা ‘সোহরাব রুস্তম’-এর প্রযোজক মোহাম্মদ ফারুক ঠাকুরের পাগলামির খেসারত দিতে হয়েছে বনশ্রীকে। তিনি বনশ্রীর প্রতি অতিরিক্ত আগ্রহী ছিলেন। একসময় ফারুক জড়িয়ে যান খুনের মামলায়। গ্রেফতারও হন তিনি। আর তারপর থেকেই বনশ্রীর জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। খুনি প্রযোজকের বান্ধবী হিসেবে বনশ্রীর নাম আলোচনায় এলে তাকে ছেড়ে যান স্বামী মাসুদ।
এরপর একাকীত্ব আর অভাবের তাড়নায় করুণ জীবন কাটিয়ে গেছেন বনশ্রী। পরবর্তীতে আরেকটি বিয়ে করেছিলেন তিনি। সেই স্বামীও ছেড়ে যান তাকে। তবে রেখে যান একমাত্র পুত্র মেহেদি হাসানকে। বনশ্রীর বড় পরম সৌভাগ্য - বাবা-মা, ভাই-বোন, সিনেমার শত প্রিয়জন, দুই স্বামী, একমাত্র কন্যা তাকে এড়িয়ে গেলেও মৃত্যুকালে অন্তত পুত্রের মতো একজন প্রিয়জনকে আঁকড়ে ধরতে পেরেছিলেন।
এলআইএ/এএসএম