ধর্ষণসহ হত্যায় ফুফাতো ভাইয়ের যাবজ্জীবন
১০ বছর আগে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী হাবিবা খাতুন ওরফে ফাতেমাকে অপহরণের পর ধর্ষণ করে হত্যার দায়ে ফুফাতো ভাই সুমন মিঝিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। অপহরণের দায়ে তাকে আরও ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক গোলাম কবীর এ রায় দেন।
সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. সাজ্জাদ হোসেন সবুজ জানান, ‘ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি সুমনকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৬ মাস তাকে কারাভোগ করতে হবে। অপহরণের দায়ে দেওয়া ১৪ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরও ৬ মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’
সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারি রাশেদুল ইসলাম সাজার তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ‘মামলার শুরু থেকে এ আসামি কারাগারে আছে। আজ রায় ঘোষণার আগে তাকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় শেষে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হয়।’
মামলার বিবরণী থেকে, যাত্রাবাড়ীতে সবুজ বিদ্যাপিঠ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল ফাতেমা। ২০১৫ সালের ২৭ জানুয়ারি বিকেল ৩ টার দিকে স্কুলের সামনে কোচিংয়ে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়। পরে সুমন ফাতেমার পরিবারের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। নাম্বার দেখে তারা জানতে পারেন এটা সুমনের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর।
এ ঘটনায় ফাতেমার মা রোকেয়া বেগম ৮ ফেব্রুয়ারি যাত্রাবাড়ী থানায় অপহরণের মামলা করেন। ফাতেমার লাশ পাওয়ার পর মামলাটি ধর্ষণের পর হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী খান মাহমুদ জানান, ‘সুমনের ছোট ভাইয়ের সাথে ফাতেমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তারা চাঁদপুরে থাকতো। ছোট ভাইয়ের সাথে বিয়ের কথা বলে সুমন ফাতেমাকে চাঁদপুরে নিয়ে যাচ্ছিল। তারা লঞ্চে একটা কেবিন ভাড়া করে। রাতে ফাতেমাকে ধর্ষণ করে। পরে হত্যা করে। লাশ বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দেয়। চাঁদপুরের হিলশা ঘাট থেকে কয়েকদিন পর ফাতেমার লাশ উদ্ধার হয়।
এদিকে ওই বছরের ৫ এপ্রিল মামলাটি তদন্ত করে সুমনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন যাত্রাবাড়ী থানার এসআই আলতাফ হোসেন সরকার। এরপর আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু হয়। মামলার বিচার চলাকালে আদালত ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। আসামির আত্মপক্ষ শুনানি, যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত আজ মামলার রায় দিলেন।
ফাতেমার মা রোকেয়া বেগম বলেন, ‘আমার চার ছেলে আর একমাত্র মেয়ে। মেয়েটাকে খুন করছে। ওর ফাঁসি হয়নি। আমি রায়ে অসন্তুষ্ট।’