‘ধর্ষণের মিথ্যা খবর প্রচারে ভেঙে পড়েছি’

4 hours ago 4
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলে রাজশাহীগামী যে বাসে ডাকাতি হয়, সেই বাসের এক নারী যাত্রী আক্ষেপ করে বলেছেন- ধর্ষিত হইনি, কেউ বিশ্বাস করছে না। মনে হচ্ছে, ধর্ষণ না হলেও সবাই আমাকে ধর্ষণ করায়ে দেবে। তিনি বলেন, কেউ বিশ্বাস করছে না যে আমার সঙ্গে এ রকম কিছু হয়নি। সবাই প্রচার করছে যে আমি ধর্ষিত হয়েছি। এখন সবাই আমাকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখছে। আমার কথা তো আর কেউ বিশ্বাস করে না। সবাই বলছে, হ্যাঁ, হয়েছে। না হলে কেন বলবে মিডিয়া। খুব বিপদে পড়েছি। ওই নারীর বাড়ি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায়। তিনি একটি কীর্তন দলের শিল্পী। ঘটনার রাতে কীর্তন দলের আরও পাঁচজন পুরুষের সঙ্গে বাসটিতে হেমায়েতপুর থেকে রাজশাহী আসছিলেন তিনি। বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ওই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত। গণমাধ্যমেও নানা সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে। সেখানে ইঙ্গিত করা হচ্ছে, মহাদেবপুরের ওই হিন্দু নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। বাসের আরেক নারী যাত্রীও গণমাধ্যমে এমন বক্তব্যও দিয়েছেন। এর পর থেকেই সামাজিকভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন গানের দলের ওই শিল্পী। ভুক্তভোগী ওই নারী আরও বলেন, ‘ওরা তো ছাড়ছে যে আমার সঙ্গে হইছে (ধর্ষণের ঘটনা)। ওরা তো ওটা প্রচার করছে। একটা মহিলা (বাসের যাত্রী) বলছে। ওই মহিলা তো আমার নামটাও বলছে। ওই মহিলা কি আমাকে দেখছিল? বাস্তবেই আমাকে দেখছিল কি আমি ধর্ষণ হলাম? ও তো ছিল আমার ছয় ফুট সামনে। সে কীভাবে আমাকে দেখতে পেল?’ তাহলে কেন এমন কথা আসছে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওটাই এখন আমার প্রশ্ন। কেন তিনি ওই কথা বললেন। উনি তো নিজের চোখে দেখতে পাননি। আমি কান্নাকাটি করেছি, ঠিক আছে। কিন্তু তাই বলে যে তিনি ধর্ষণের একটা কথা বলে দেবে আমার বিষয়ে, এটা তো সঠিক না। যেটা সঠিক না, ওটা বলবে কেন?’ তিনি বলতে থাকেন, আবার এমনও বলছে বাসে নাকি আমার স্বামী ছিল। আমার স্বামী তো এক বছর ধরে অসুস্থ। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। গণমাধ্যমকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ওই নারী বলেন, মিডিয়া যে এই রকম খবর ছাপাল, মিডিয়া কি একবারের জন্য আমার কাছে আসছিল? এখন পর্যন্ত আমার কাছে কোনো মিডিয়া আসেনি। আমার মুখ থেকে শুনল না, তারা কীভাবে এটা তুলে ধরল? ওই নারী পুলিশকে বলেছেন, ডাকাতরা তল্লাশির জন্য কয়েকবার শরীরে হাত দিয়েছে। জোর করে হাত থেকে চুরি ও পায়ের নূপুর খুলে নিয়েছে। ছোট ছোট চুড়ি হাত থেকে খোলার সময় ব্যথা পেয়ে তিনি চিৎকার করেছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নাটোর থেকে পুলিশ এসেছিল ২১ ফেব্রুয়ারি। এ ছাড়া গত পরশু পুলিশ এসেছিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে। যেটা সত্যি সেটাই বলেছি। তিনি আরও বলেন, আমি ইউটিউব তো দেখিনি। কোনো খবরও শুনিনি। যার কারণে আমি বুঝতেই পারিনি জলটা এতদূর গড়িয়েছে। গতকাল (বুধবার) আমি দেখেছি, দেখার পর তো আমার মাথায় কাজ করে না। টাকা-পয়সা-গহনা কেড়ে নেওয়ায় দুঃখ পাইনি, ধর্ষণের মিথ্যা খবর প্রচারে ভেঙে পড়েছি। ভুক্তভোগী নারী বলেন, খবর দেখার পর সব জায়গায় ফোন করেছি। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ফোন করেছি, নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় ফোন করেছি। আমাদের মহাদেবপুরেও জানিয়েছি বিষয়টা। কেন আমার সম্পর্কে এমন কথা বলা হচ্ছে, সেটা জানতে চেয়েছি। এখন সবাই আমাকে বলছে, এটা শুধু আপনার প্রশ্ন না। এটা সবারই প্রশ্ন। উল্লেখ্য, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী একটি বাসে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনাও ঘটে। এক নারী যাত্রী ধর্ষণের শিকার বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়। ডাকাতির ঘটনায় টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় একটি মামলা হয়। মামলায় পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
Read Entire Article