ধর্ষণের শিকার দাবি করা সেই তরুণীর বিষয়ে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্রলীগ নেতাদের ধর্ষণের শিকার হয়েছেন দাবি করা সেই তরুণীর বিষয়ে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সায়মা মাসুদ মোমো নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে এই বিষয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
পোস্টে সায়মা মাসুদ মোমো ওই তরুণীর সম্পর্কে একটি দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন। কালবেলার পাঠকদের জন্য স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-
‘আদ্রিনা মাহি এবং তার মিথ্যাচার সম্পর্কে কিছু ফ্যাক্ট চেক :
১. মাহি আমাকে জানায় যে সে তার ধর্ষণকারী কারও চেহারাই মনে করতে পারছে না, চিনতে পারবে না। সেইসঙ্গে ১০ তারিখ ধর্ষণকারী হিসেবে সে একজন উবার ড্রাইভারের কথা বললেও পরবর্তীতে তার কাছে উবার ড্রাইভারের নম্বর অথবা অ্যাপ থেকে রাইডের ডিটেইলস জানতে চাওয়ায় সে বক্তব্য চেঞ্জ করে এবং জানায় ধর্ষণকারী র্যান্ডম বাইক রাইডার ছিল। এটা একটা কনফিউশন ক্রিয়েটের জায়গা এবং খতিয়ে দেখার দাবি রাখে।
২. মাহি দাবি করে যে সে এআইইউবি’র শিক্ষার্থী। আমাকে জানায় সে সেখানে কম্পিউটার সাইন্সে পড়ে। গতকাল রাতে প্রাইভেটের বেশকিছু শিক্ষার্থী প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, মাহির কাছে তারা একাধিকবার মাহির আইডি কার্ড দেখতে চেয়েছে কিন্তু মাহি সেটা দেখাতে পারেনি। এমনকি তারা বিভিন্নভাবে খোঁজার চেষ্টা করে এবং এখনো পর্যন্ত ‘আদ্রিনা মাহি’ নামে কাউকে এআইইউবি’র স্টুডেন্ট হিসেবে খুঁজে পায়নি।
৩. মাহি যাদেরকে আন্দোলনের সহযোদ্ধা হিসেবে দাবি করে তাদেরই একজন জানায় যে, মাহিকে সে আন্দোলনের সময় চিনতোই না। বরঞ্চ মাহির সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয় আন্দোলনের পরে, অর্থাৎ ৫ আগস্টের পরে।
৪. একাধিক সূত্র মারফত জানতে পেরেছি, মাহি বিভিন্ন সময় মেয়েদেরকে বাসায় ডেকে নিত অথবা কোনো জায়গায় ‘এন্টারটেইনার’ হিসেবে মেয়েদেরকে যাওয়ার অফার করতো।
৫. তার বিয়ে হয়েছে ক্লেইম করার পরও সে হাজব্যান্ডের ছবি কাউকে দেখাতে নারাজ। এমনকি সে বিভিন্নজনের কাছে দাবি করেছে তার হাজব্যান্ড নাকি কোনো এক বড় নেতা (যদিও ঘটনার সত্যতা জানি না)
৬. মাহি প্রচণ্ড ধূর্ততার সঙ্গে সবকিছু করার চেষ্টা করেছে। যাদের সঙ্গে তার কথা হয়েছে, প্রায় অনেকের সঙ্গেই অনলাইনে কথা না বলে অফলাইনে ম্যাক্সিমাম কনভারসেশন করেছে যাতে তার কোনো ট্রেস না রাখা যায়।
৭. মাহির বক্তব্য অনুযায়ী ৪ আগস্ট দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে দিকে সে রিকশা নিয়ে বাসায় চলে যায় ধর্ষিত হবার পর। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের একজন আন্দোলনকারীর ফোনে ৪ তারিখ দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে আন্দোলন চলাকালীন মাহির আন্দোলনের স্থানে উপস্থিতির ছবি পাওয়া যায়।
৮. প্রেগন্যান্সির যথাযথ রিপোর্ট দেওয়া এবং ডাক্তারের কাছে যাওয়ার ব্যাপারে তার গড়িমসি ছিল। মূলত, তার আসল পরিচয়, উদ্দেশ্য, কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য সে এই মিথ্যা নাটক সাজিয়েছিল কিনা, নাকি শুধুই সিম্প্যাথি গেইন করতে চাওয়া তার উদ্দেশ্য ছিল, অথবা ঢাবিতে সিট পাওয়ার জন্য কি না, কিংবা অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল কিনা সেটা তদন্ত করে তাকে প্রশাসনিকভাবে জবাবদিহিতাপূর্বক উপযুক্ত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে, দেশে যখন আমার মা-বোনদের ধর্ষণ নিয়ে সবাই চিন্তিত, এমন ক্রিটিক্যাল একটা মোমেন্টে দাঁড়িয়ে মিডিয়ার সামনে এভাবে ‘সমন্বয়কদের কাছে বারবার জানিয়েও ধর্ষণের বিচার পাইনি’ বলে দেদারসে মিথ্যা অপপ্রচার করার মাধ্যমে মাহি ধর্ষণের মতো একটা বিষয়কে নরমালাইজ করার চেষ্টা করেছে। সোজা বাংলায় বলতে গেলে, ধর্ষণের মতো একটা ব্যাপারকে পুঁজি করে নিজে ফায়দা লুটতে চেয়েছে। বলতে বাধ্য হচ্ছি, মাহি আদৌ ধর্ষণের শিকার হয়েছিল কিনা, আদৌ প্রেগন্যান্ট হয়েছিল কিনা- এই বিষয়গুলোও এখন খতিয়ে দেখার দাবি রাখে।’
এর আগে, গত শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারীদের সম্মুখ ভূমিকা নিয়ে ছবি ও তথ্যচিত্রের আর্কাইভ প্রদর্শনী অনুষ্ঠানেওই তরুণী বলেন, গত ৪ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চাষাঢ়া গোলচত্বর থেকে ছাত্রলীগের নেতারা তাকে তুলে নিয়ে যায়। তারা ২০-২৫ জন ছিল। তারা তাকে টেনেহিঁচড়ে মারতে মারতে তোলারাম কলেজের পাশে তাদের একটি অফিসে নিয়ে যায়। তারা ফোন কেড়ে নেয়, অনেক বাজে কথা শোনায় এবং গালি দেয়। একপর্যায়ে সবাই অফিস থেকে চলে যায় শুধু দুজন থাকে। সে দুজন তাকে ধর্ষণ করে।
তিনি দাবি করেন, এই ঘটনা সমন্বয়ক থেকে শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রায় সবাই জানত। অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বিচার মেলেনি। কেউ গুরুত্ব সহকারে দেখেনি বিষয়টি। যে দুই লোক ধর্ষণ করেছে তারা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের কোনো শাস্তি হয়নি।