ভেজাল ‘ব্রি ধান-৩৯ জাতে’র ধানবীজ কিনে প্রতারণার শিকার হয়েছেন নাটোরের গুরুদাসপুরের কৃষক শফিকুল ইসলাম। মৌসুম শেষ হলেও তার ১০ বিঘার ধান এখন কাঁচা রয়ে গেছে। ধান পুরু না হয়ে ধীরে ধীরে শিষগুলো চিটা হয়ে যাচ্ছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।
উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের মাঝপাড়া বিলে কৃষক শফিকুলের ওই ধানের জমি। এ ঘটনায় তিনি প্রতিকার চেয়ে গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ওই বীজ ভান্ডারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
কৃষক শফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, গুরুদাসপুর পৌর শহরের চাঁচকৈড় বাজারের ‘রহমান বীজ ভান্ডার’ থেকে ব্রি ধান-৩৯ জাতের ধানবীজ কিনেছি। পাশের জমিগুলোর লাগানো একই জাতের ধান কাটা শেষের পথে। অথচ আমার ১০ বিঘার জমিতে ১২০ দিন মেয়াদি এই ধান পাকছে না। কিছু গাছে শিষ এলেও তা চিটা হয়ে যাচ্ছে। ব্রি ধান-৩৯ জাতের কথা বলে মিশ্রজাতের বীজ দিয়ে প্রতারণা করেন। এ জন্য আমি বীজ ভান্ডারের বিচার দাবি করছি।
কৃষক শফিকুলের বাবা মোজাহার আলী বলেন, ‘১০ বিঘা জমির জন্য বীজ ভান্ডার থেকে ব্রি ধান-৩৯ জাতের ৫২ কেজি বীজ কিনেছি। এর মধ্যে বিএডিসির ১০ কেজির দুই বস্তা ও রহমান বীজ ভান্ডারের নিজস্ব মোড়কের ১৬ প্যাকেট বীজ ছিল। বীজ বপন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত প্রতি বিঘায় অন্তত ১৩ হাজার টাকা করে ১০ বিঘায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ঠিকমতো ফলন হলে ১০ বিঘায় পেতাম ২০ মণ হারে অন্তত ২০০ মণ ধান। বর্তমান যে অবস্থা, ধান তো দূরে, কাটার খরচও ওঠা দায়।’
এদিকে ধান কাটতে না পেরে ওই ১০ বিঘায় রবিশস্য আবাদও করতে পারছি না। আমরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছি।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে রহমান বীজ ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রহমান সত্যতা স্বীকার করে কালবেলাকে বলেন, ‘কৃষক শফিকুলের কাছে বিএডিসির ব্রি ধান-৩৯ জাতের ৫২ কেজি ধানবীজ বিক্রি করেছি। তা ছাড়া আমার প্রতিষ্ঠানের নামে মোড়কীকরণ করে যে বীজ বিক্রি করেছি, সেগুলোও বিএডিসির। মূলত চলতি মৌসুমে বিএডিসির ব্রি ধান-৩৯ জাতের বীজে ভেজাল হওয়ায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এতে আমার কোনো হাত নেই।’
গুরুদাসপুর ইউএনও সালমা আক্তার বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখতে কৃষি অফিসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে কৃষি কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ বলেন, ‘ব্রি ধান-৩৯ জাতের ধানবীজ কিনে কৃষক শফিকুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মর্মে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।’
জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘বিএডিসির ধানবীজ রহমান বীজ ভান্ডারের নিজস্ব মোড়কে বিক্রির সুযোগ নেই। বীজ কিনে কৃষক প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এমন অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।’