ধানমন্ডি ৩২ নিয়ে ভারতের বিবৃতি
ভারতে বসে আওয়ামী লীগের নেতকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনার দেওয়া বিভিন্ন বক্তব্যে আগে থেকেই ক্ষুব্ধ ছিল ২৪-এর বিপ্লবী ছাত্র-জনতা। কিন্তু গেল বুধবার নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার ঘোষণায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে তারা। শেখ হাসিনার যাবতীয় কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে বুধবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভেঙে ফেলে তারা। এ ঘটনায় একটি বিবৃতি দিয়েছে ভারত।
শুক্রবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ভারত সরকার । তারা এটিকে দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেছে।
সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালকে উদ্ধৃত করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি দখলদার বাহিনী ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের বীরোচিত প্রতিরোধের মূর্ত প্রতীক ছিলেন, তার ঐতিহাসিক বাসভবনটি যেভাবে ৫ ফেব্রুয়ারি ধ্বংস করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘সেই স্বাধীনতার সংগ্রাম বাংলার পরিচিতি ও গর্বকে লালন করেছিল। আর যারাই সেই লড়াইকে মর্যাদা দেন, তারাই জানেন বাংলাদেশের জাতীয় চেতনার ক্ষেত্রে এই বাসভবনটির গুরুত্ব কতটা ছিল।’
এতে আরও বলা হয়, ‘এই হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা তীব্র নিন্দনীয়।’ ঢাকায় ভারতের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এর আগে বাংলাদেশ সরকার তাকে যে বার্তা দিয়েছে, সে ব্যাপারে দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
এর আগে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার পবন বাধেকে তলব করে বাংলাদেশ। ভারতে বসে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়া বন্ধ করার পদক্ষেপ নিতে তাকে অনুরোধ করা হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন দাবি করে বলেন, ভারত থেকে শেখ হাসিনার বক্তব্য-বিবৃতির কারণে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুর এবং আজ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যাতে বাংলাদেশের বিপক্ষে এ ধরনের বক্তব্য না দেন, তাকে বিরত রাখার জন্য ভারতকে লিখিতভাবে বলা হয়েছে এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
রাজধানীর ৩২ নম্বরে আজ ও গতকালের ভাঙচুরের ঘটনা তুলে ধরে এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, প্রথম কয়েক দিন একটু আইনশৃঙ্খলা সমস্যার পর আস্তে আস্তে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসছিল। আপনারা একটা জিনিস খেয়াল করবেন, এ ধরনের ঘটনা তো তখনো ঘটতে পারত, ঘটেনি কিন্তু।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে থেকে যেসব বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন, সেটাকে ছাত্র-জনতা ভালোভাবে নেয়নি। তিনি অবিরাম প্রোভোক (উসকানি) করছেন। তারই ফলে এ ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের বিশ্বাস। যদি তিনি এ ধরনের ঘটনা থেকে বিরত থাকতেন, তাহলে এ রকম ঘটনা হয়তো ঘটত না বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আপনারা জানেন যে সেনাবাহিনীও সেখানে উপস্থিত হয়েছিল এবং তারা কনটেইন করতে পেরেছিল, যাতে বাড়াবাড়ি এর চেয়ে বেশি কিছু না হয়। তারা যখন শুরু হয়ে গেছে, তখন সম্পূর্ণ থামাতে পারেনি। কিন্তু এটা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে বা আরও যাতে ক্ষতি না হয়, এটা তারা কনটেইন করতে পেরেছিল।
শেখ হাসিনা যাতে বাংলাদেশের বিপক্ষে এ ধরনের বক্তব্য না দেন, তাকে বিরত রাখার জন্য ভারতকে লিখিতভাবে বলা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।