নঈম নিজাম-ফরিদা ইয়াসমিনকে সম্মাননা দিলো ইন্দো-বাংলা প্রেস ক্লাব

4 months ago 44

বাংলাদেশের প্রথিতযশা দুই সাংবাদিককে সম্মাননা দিলো কলকাতার ইন্দো-বাংলা প্রেস ক্লাব। মঙ্গলবার (১৮ জুন) বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম ও বাংলাদেশের জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের (নরসিংদী) সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনকে এই সম্মান ও সংবর্ধনা জানানো হয়।

চিরাচরিত প্রথা মেনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে ফুল, উত্তরীয়, স্মারক, ক্লাবের পরিচয়পত্র ও মিষ্টি খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে সম্মান জানানো হয় নঈম নিজাম ও ফরিদা ইয়াসমিনকে। নঈম নিজামকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান ইন্দো-বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি কিংশুক চক্রবর্তী, উত্তরী দিয়ে সম্মান জানান প্রেস ক্লাবের সদস্য ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম বিভাগের প্রধান দেবোজ্যোতি চন্দ। ক্লাবের স্মারক তুলে দেন তপন রায়। ক্লাবের পরিচয়পত্র ও কলকাতার মিষ্টি তুলে দেন যথাক্রমে দেবজিৎ গাঙ্গুলী ও শাকিল আবেদিন।

একইভাবে ফরিদা ইয়াসমিনকে সম্মাননা জানান যথাক্রমে সম্পাদক শুভজিৎ পুততুন্ডু, এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়, প্রবীণ সাংবাদিক দীপক মুখার্জী, জ্যোতির্ময় দত্ত ও ভাস্কর মুখার্জী। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রেস ক্লাবের মুখপাত্র দীপক দেবনাথ ও কনভেনর ভাস্কর সরদার। এসময় ক্লাবের অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

নঈম নিজাম তার অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, সাংবাদিকতা একটা চ্যালেঞ্জিং পেশা। সেই চ্যালেঞ্জকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশি গণমাধ্যমের ভারতীয় প্রতিনিধিরা কলকাতায় এ ধরনের ক্লাব পরিচালনা করছেন। এটি অবশ্যই বড় বিষয়। ৭১ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করছে কলকাতা। সেই শহরের বুকে দুই দেশের সমন্বয়ে আপনারা একত্রিত হয়ে প্রেস ক্লাবটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, যা আমাদের কাছেও ভালো লাগে। যে কোনো সৃষ্টি একটা প্রজন্ম তৈরি করে, আর তার সুফল পায় পরবর্তী প্রজন্ম। আপনারা যে যাত্রা শুরু করেছেন, আগামীতে নিশ্চয় এর ভালো ফল আসবে। ইন্দ-বাংলা প্রেস ক্লাবের প্রতি আমার সবধরনের সমর্থন থাকবে।

প্রেস ক্লাবের আগাম সফলতা কামনা করে ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আপনারা একটা প্রেস ক্লাব গঠন করেছেন। এটি সবে যাত্রা শুর করলেও আমি বুঝতে পারছি যে আপনাদের এই উদ্যোগ আগামীতে মহীরুহ হয়ে উঠবে। কারণ বিন্দু বিন্দু থেকেই তো সিন্ধুর জন্ম হয়। এ ধরনের উদ্যোগ সবাই নিতে পারে না বা নেওয়ার সাহস থাকে না। কিন্তু আপনারা সাহস করে একটা উদ্যোগ নিয়েছেন যে সবাই একসঙ্গে থাকবেন। সাংবাদিকতায় নানারকম প্রতিকূলতা থাকে। সেখানে এমন একটা সংগঠন থাকলে যেকোনো প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠা যায়।

তার অভিমত, দুই দেশের সরকারের মধ্যে সম্পর্ক মাঝেমধ্যে অম্লমধুর হয়ে থাকে। কিন্তু দুই দেশের মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক সবসময়ই উষ্ণ। কারণ দুই বাংলার ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বলতে গেলে এক। এই মিলটা যাতে আরও ভালো থাকে, আরও সুন্দর থাকে, সেজন্য পিপল টু পিপল কন্টাক্ট খুব জরুরি। আর এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিহার্য।

বাংলাদেশের জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি আরও বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের রক্তের সম্পর্ক, যা শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে ভারতের দুজন সাংবাদিকও প্রাণ হারিয়েছেন। তাছাড়া সংকটময় ওই সময়ে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল এই দেশ। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম অঞ্চলের মানুষরা নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে দিয়ে শরনার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল, আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। ভারতের তৎকালীন সরকার অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও নৈতিক সমর্থন দিয়ে যেভাবে সহায়তা করেছিল, তার সবই পারস্পরিক সহযোগিতার অংশ। আর এই সহযোগিতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, প্রতিবেশীকে কখনো বদলানো যায় না। আর প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলে কোনো কিছুরই অগ্রগতি হয় না। সেক্ষেত্রে প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কটা ভালো রাখাটা খুব জরুরি। আমরা সবসময় সেই চেষ্টা করে থাকি। ভারত আমাদের প্রতিবেশী ও বন্ধুরাষ্ট্র। তাই দুই দেশের সম্পর্ক আরও ভালো রাখতে হবে। বাংলাদেশের ইতিবাচক দিকগুলি নিশ্চয় আপনারা তুলে ধরবেন।

তিনি আরও বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, আমাদের মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই স্বপ্ন পূরণে কাজ সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আমরাও চাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে উঠুক। এক্ষেত্রে আপনাদের সহযোগিতা অনস্বীকার্য। আমরা আপনাদের সঙ্গে থাকবো, আপনারাও আপনাদের পাশে থাকবেন। কারণ পারস্পরিক সহমর্মিতা ও সহযোগিতা সবকিছুকেই এগিয়ে নিতে পারে।

২০২২ সালে ১৪ মার্চ কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ইন্দো-বাংলা প্রেস ক্লাব। ওই বছরের ২৪ আগষ্ট একসঙ্গে পথ চলায় অঙ্গীকারবদ্ধ হন বাংলাদেশি গণমাধ্যমের ভারতীয় প্রতিনিধিরা। সে বছরের ২৯ অক্টোবর দুই বাংলার বিশিষ্টদের সামনে প্রথম প্রকাশ পায় এই ক্লাব। সে বছর কলকাতায় প্রথম সম্মান জানানো হয় বাংলাদেশের সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও বর্তমানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষকে। এরপর থেকে গত তিন বছরে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা ও দিল্লিসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ৬০ জন সদস্যকে নিয়ে এগিয়ে চলেছে এই প্রেস ক্লাব।

ডিডি/এসএএইচ

Read Entire Article