‘নগররাষ্ট্র বাদ দিলে বাংলাদেশই বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ’

2 hours ago 2

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেছেন, নগররাষ্ট্র বাদ দিলে বাংলাদেশই বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ।নামমাত্র জিডিপির বিচারে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রায় ১৩৫তম হলেও জনসংখ্যার দিক থেকে দেশটি অষ্টম স্থানে রয়েছে। বিশ্বের মাত্র সাতটি দেশে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি মানুষ বসবাস করে এবং এদের মধ্যে মাত্র দুই দেশে বাংলাদেশের তুলনায় তরুণ জনগোষ্ঠীর হার বেশি। আর কোনো দেশই এত ঘনবসতিপূর্ণ নয়।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ব্যাংককে অনুষ্ঠিত আইএলও এশিয়া-প্যাসিফিক কনফারেন্স অন লেবার অ্যান্ড এলডিসি ইস্যুজ–এ প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এসব তথ্য জানান।

মূল প্রবন্ধে লুৎফে সিদ্দিকী উল্লেখ করেন, বিপুল সংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠী একই সঙ্গে ডিজিটালি সংযুক্ত হলেও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের অভাব রয়েছে। এক বছর আগে তারা নাটকীয় এক আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের জন্য সংস্কার ও সুশাসনের নতুন যাত্রার সূচনা করেছিল। এরই মধ্যে বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণের ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত বলেন, এলডিসি মর্যাদার ফলে বাংলাদেশ রপ্তানি খাতে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পেয়েছে। বৈশ্বিকীকরণের যুগে এ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে তৈরি পোশাক শিল্প (আরএমজি) গড়ে উঠেছে, যা বাংলাদেশের মোট রপ্তানির বেশিরভাগ জুড়ে রয়েছে। পাশাপাশি দেশে ওষুধ খাতে পেটেন্ট ফি ছাড়াই জেনেরিক ওষুধ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক অর্থায়নও তুলনামূলক সস্তায় এসেছে।

লুৎফে সিদ্দিকী সতর্ক করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এলডিসি সুবিধার ওপর অতি-নির্ভরশীল হওয়ায় এলডিসি-পরবর্তী অর্থনীতিকে নতুনভাবে সাজানো একটি জটিল চ্যালেঞ্জ। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ‘৫ডি’ (ডি-গ্লোবালাইজেশন, ডিজিটালাইজেশন, ডেফিসিট, ডিকার্বনাইজেশন, ডেমোগ্রাফিকস)–এর প্রভাব এই চ্যালেঞ্জকে আরও কঠিন করে তুলছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি করণীয় হিসেবে কয়েকটি দিক তুলে ধরেন।

১. এলডিসি উত্তরণকে স্বীকার করে নিলেও যেন তা হঠাৎ ধাক্কা না হয়ে মসৃণ রূপান্তর হয়।
২. উত্তরণের সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে সময়বদ্ধ রোডম্যাপ তৈরি করা।
৩. রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনা ও নতুন পণ্য ও শিল্প গড়ে তোলা।
৪. বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে প্রশাসনিক ও অবকাঠামো সংস্কার করা, যার মধ্যে বন্দর, কাস্টমস, নৌপথ, বিমানবন্দর ও ডিজিটাল প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত।
৫. গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য বা অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি করা।
৬. দক্ষতা ও প্রশিক্ষণে জরুরি মনোযোগ দেওয়া।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত জানান, জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম প্রধান ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (এফটিএ)/ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (ইপিএ) চূড়ান্ত করার উদ্যোগ চলছে এবং একইসঙ্গে জাপানে ১ লাখ দক্ষ কর্মী পাঠানোর একটি কাঠামোবদ্ধ প্রক্রিয়াও গড়ে তোলা হচ্ছে।

লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশকে রপ্তানি বাজারে বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে হলে শ্রমমান উন্নত করার অঙ্গীকার রাখতে হবে। একইসঙ্গে শ্রম সংস্কার শুধু নৈতিক দায় নয় বরং বাজারে প্রবেশাধিকার বজায় রাখার জন্যও জরুরি।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত জানান, নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার মর্যাদা ও শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রথমবারের মতো জাতীয় পর্যায়ে শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে, যা সংবিধান, সংসদ ও বিচার বিভাগীয় সংস্কারের মতোই সমন্বিত ও ঐকমত্যভিত্তিক প্রক্রিয়ায় এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

শেষে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, আইএলওর সঙ্গে করা রোডম্যাপ অনুযায়ী বাংলাদেশ বেশিরভাগ অঙ্গীকার পূরণের পথে রয়েছে। ‘আমরা তিনটি আর– অধিকার, সম্পর্ক ও স্থিতিস্থাপকতা নীতিকে সামনে রেখে কাজ করছি। আমাদের জন্য শুভকামনা রাখবেন।’

এমইউ/এমআরএম/এএসএম

Read Entire Article