স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকা শহরের ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিভিন্ন সময় এ খাতে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ও করা হয়েছে। কিন্তু ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনায় কোনো কার্যকর সুফল মেলেনি।
মান্ধাতা আমলের মতো এখনো সেই হাতের ইশারায় সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করছে ট্রাফিক পুলিশ। অথচ শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে ১৭৮টি সিগন্যাল বাতি আছে। তারপরও গত ৩১ আগস্ট থেকে ফের নগরে সিগন্যাল বাতির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করেছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)।
এবার এ উদ্যোগ কতটা সফল হবে, তা নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুসা আহমেদ।
জাগো নিউজ: ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষামূলক কার্যক্রম কেমন চলছে?
নীলিমা আখতার: ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষামূলক কার্যক্রমে বেশকিছু সমস্যা আমরা চিহ্নিত করেছি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন পথচারীরা। প্রতিটি সিগন্যালে ট্রাফিক সংকেত রয়েছে। তারপরও তারা সড়কের মাঝপথ দিয়ে দৌড় দেন। তাদের ট্রাফিক আইন মানানো খুবই কষ্টকর। আবার কিছু যানবাহন সিগন্যাল অমান্য করছে। পরীক্ষামূলক কার্যক্রমে জনসচেতনতাকেই আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। জনগণকে এই সিগন্যাল ব্যবস্থাপনায় অভ্যস্ত করাটা জরুরি।
পরীক্ষামূলক কার্যক্রমে জনসচেতনতাকেই আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। জনগণকে এই সিগন্যাল ব্যবস্থাপনায় অভ্যস্ত করাটা জরুরি
- আরও পড়ুন
- নতুন ট্রাফিক সিগন্যালেও ত্রুটি, ভরসা সেই ‘হাতের ইশারা’
- অকার্যকর সিগন্যাল বাতি, সম্বল হাতের ইশারা
- ঢাকার ২৯ ইন্টারসেকশনে বসছে দেশীয় প্রযুক্তির সিগন্যাল বাতি
জাগো নিউজ: এবার ট্রাফিক সিগন্যাল বাতিগুলো দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলোতে কারিগরি কোনো ত্রুটি ধরা পড়ছে কি?
নীলিমা আখতার: ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনায় ডিটিসিএর সঙ্গে সিটি করপোরেশন, পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল যৌথভাবে কাজ করছে। এর মধ্যে লাইট তৈরির বিষয়গুলো দেখছে বুয়েট। এখন কারিগরি কিছু ত্রুটি ধরা পড়ছে। সেগুলো চিহ্নিত করে সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো ঠিক করে দিচ্ছেন বুয়েটের সংশ্লিষ্টরা।
তবে ট্রাফিক সিগন্যাল এলাকায় চারদিকে সড়ক বিভাজক খোলা থাকায় পথচারীদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সড়ক বিভাজকগুলোতে যাতে আমরা বেড়া দিয়ে দেই। কিন্তু হঠাৎ করে বেড়া দেওয়া তো অনেক খরচ। আমাদের বাজেটে সীমাবদ্ধতা আছে। তাই পরিবর্তনটা ওভার নাইট হবে না। এজন্য আমরা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করছি।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ডিএমপিরও কিছু উদ্যোগ আছে। ডিএমপি ট্রাফিক সিগন্যালগুলোতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগাতে চাচ্ছে। এর মাধ্যমে কোনো গাড়ি বা যানবাহন যদি সিগন্যাল অমান্য করে তার বিরুদ্ধে মামলা হবে। কিন্তু প্রশ্ন থাকে তখন মানুষের ক্ষেত্রে কী হবে
জাগো নিউজ: ডিটিসিএ ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনায় আগেও বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু কোনোবারেই সিগন্যাল ব্যবস্থাপনায় সুফল আসেনি। এতে নগরের মানুষ সরকারের কার্যক্রমের ওপর বারবার হতাশ হচ্ছেন। এবার ডিটিসিএ যে উদ্যোগ নিয়েছে তা কতটুকু সফল হবে বলে মনে করেন?
নীলিমা আখতার: আগে থেকে আর কী দাবি করবো সাকসেসফুল না হলে। চ্যালেঞ্জগুলো আপনিও জানেন, আমিও জানি। এটাই হলো কথা। তাই অতি উচ্চাশা না করে ধীরে ধীরে মানুষকে অভ্যস্ত করতে হবে।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ডিএমপিরও কিছু উদ্যোগ আছে। ডিএমপি ট্রাফিক সিগন্যালগুলোতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগাতে চাচ্ছে। এর মাধ্যমে কোনো গাড়ি বা যানবাহন যদি সিগন্যাল অমান্য করে তার বিরুদ্ধে মামলা হবে। কিন্তু প্রশ্ন থাকে তখন মানুষের ক্ষেত্রে কী হবে।
অনেক নারীও কিন্তু রাস্তার মাঝখান দিয়ে দৌড় দেয়। এক্ষেত্রে দেশের গণমাধ্যমগুলোকেও জনসচেতনতায় প্রচার করতে হবে। যাতে নগরবাসী ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বা সিগন্যাল ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করতে পারে।
এমএমএ/এএসএ/এমএফএ/এএসএম