নন্দকুজা নদী যেন পৌর ডাম্পিং স্টেশন

4 hours ago 3
খনন, অবৈধ দখল আর দেখভালের অভাবে নাটোরের গুরুদাসপুর প্রথম শ্রেণি পৌরসভার ডাম্পিং স্টেশনে পরিণত হয়েছে নন্দকুজা নদী। বছরের পর বছর অবাধে পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে সংগ্রহ করা বর্জ্য ফেলা হচ্ছে এই নদীর পাড়েই। এতে স্তূপাকারে আবর্জনার পাহাড় জমেছে। সঙ্গে অপচনশীল পদার্থ দিয়ে ভরাট হচ্ছে নদী।  পাশাপাশি বর্জ্যের দুর্গন্ধে নদীর পাড়ের এলাকায় পরিবেশ দূষণ ঘটছে মারাত্মকভাবে। জনস্বাস্থ্য, নন্দকুজা ও স্থানীয় পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপের দাবি স্থানীয়দের। পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি, স্থায়ী ভাগাড় তৈরির পরিকল্পনা চলছে। জানা যায়, ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পৌরসভা। আর গুরুদাসপুর উপজেলা ও পৌর শহরের দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে চলা নন্দকুজার উৎপত্তিস্থল রাজশাহীর চারঘাটের পদ্মা নদী। একসময় নদীটি ঘিরে পুরো উপজেলায় ছিল কর্মচাঞ্চল্য। মালপত্র পরিবহন ও চলাচলের অন্যতম মাধ্যম ছিল এই নদীপথ। তখন পৌর সদরের চাঁচকৈড় বাজার হয়ে ওঠে অন্যতম বাণিজ্যনগরী।  অথচ নানা প্রতিবন্ধকতা, দখল আর পৌরবর্জ্যে বর্তমানে নদীটি মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে। নদীর পাড়ে পৌর মুরগি বাজার, মাছের আড়ত, পৌর শৌচাগার নির্মাণ আর প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে নদীর বেশিরভাগ এলাকা। অন্যদিকে শহরের পয়ঃনিষ্কাশন নালার সবগুলো নদীতে এসে মিশেছে। এর মধ্যে পৌরসভার কোনো ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় সব বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নন্দকুজার পাড়ে। চার থেকে পাঁচ বছর ধরে ফেলা বর্জ্য জমে স্তূপে পরিণত হয়েছে। পচা দুর্গন্ধে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে আশপাশে। কিন্তু এগুলো দেখার যেন দেখার কেউ নেই।  ব্যবসায়ী এনামুল, মজিদ, বজলুসহ কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি কালবেলাকে জানান, এক সময় এই নন্দকুজা ছিল গুরুদাসপুর উপজেলার প্রাণভৌমরা। নদীটিকে কেন্দ্র করে চাঁচকৈড় বাজারে গড়ে ওঠে বেশকিছু শিল্প-কলকারখানা। চলনবিল অঞ্চলের মানুষের কাছেও একমাত্র বাণিজ্যিক নগরী হয়ে ওঠে এই পৌরসভা। বর্তমানে প্রথম শ্রেণির পৌরসভার স্বীকৃতি পেলেও ময়লা-আর্বজনা ফেলার কোনো ডাম্পিং স্টেশন নেই। ফেলা হচ্ছে নদীর পাড়ে। চাঁচকৈড় এলাকার ধানহাটায় দুর্গন্ধে টেকা দায়। পরিবেশ রক্ষার্থে অবিলম্বে নদী খনন ও ময়লা অপসারণের দাবি জানান তারা।  বিলচলন শহীদ সামসুলজ্জোহা সরকারি অনার্স কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতা, দখল-দূষণের এই নদী মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এটিকে বাঁচাতে জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া উচিত।       উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার শারমীন জাহান লুনা বলেন, নদীর পাড়ে ময়লা ফেলানোর ফলে পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত দুধরনের সমস্যা হতে পারে। ডায়রিয়া-পাকস্থলী সংক্রামণসহ বায়ু ও পানিদূষণজনিত বিভিন্ন রোগের প্রার্দুভাবও দেখা দিতে পারে।  উপজেলা নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান মজনু কালবেলাকে বলেন, নদীর পাড়ে ময়লা ফেলানোর মহোৎসব চলছে। এটি বন্ধে প্রশাসনের পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানাই। পাশাপাশি নন্দকুজাকে বাঁচাতে পৌরবাসীসহ কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করি।  পৌর প্রশাসক ও ইউএনও ফাহমিদা আফরোজ বলেন পৌরসভার  জন্য ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণে স্থান নির্ধারণ করে একটি প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। অচিরেই সমস্যার সমাধান হবে বলেও আশাব্যক্ত করেন তিনি। 
Read Entire Article