নবান্ন উৎসবের আমেজ মাগুরার ঘরে ঘরে

নবান্ন উৎসবকে সামনে রেখে মাঠের ধান কাটার ধুম পড়েছে। নতুন ধান কেটে তা বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। উৎসবের আমেজ শুধু মাঠে নয় কৃষাণীর উঠোন, রান্নাঘরজুড়ে। পিঠা-পুলির আয়োজনে ব্যস্ত তারা। উঠোনে শুকানো হচ্ছে ধান। সেই ধান থেকে হবে চাল, তারপর টেঁকিতে করা হবে সেই চালের গুঁড়া। যা দিয়ে আগামীকাল বুধবার থেকে মাগুরার ঘরে ঘরে তৈরি করা হবে গ্রাম বাংলার নবান্ন উৎসবের নানান রকম পিঠা-পুলি,পায়েস, চালের গুঁড়ার রুটি। ট্যাঙ্গাখালী বাজারের স্থানীয় কৃষক ও ভ্যানচালক কাসেম মল্লিক বলেন, ‘নবান্ন উৎসব হলো নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। সাধারণত বাংলা অগ্রহায়ণ মাসে অর্থাৎ হেমন্তকালে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। নবান্ন উৎসব হারিয়ে গেলেও নতুন ধান উঠলে বাজারে বিক্রির ধুম পড়ে যায় গুড়, পাটালি, চিনির। বাজার থেকে এসব কিনে বাড়িতে নতুন চালের ভাত, পিঠা এবং নতুন খাবারের আয়োজন করা হবে। এই উৎসব ছোটবেলা থেকে আঞ্চলিকভাবে করতে দেখেছি কিন্তু এখন সেটা সময়ের অতীত। পুরোনো স্মৃতি কিছুটা ধরে রাখতেই প্রতিবছর ঘরোয়া ভাবে ছোট আয়োজন করে থাকি। কাল বাড়িতে ছোট করে নবান্ন

নবান্ন উৎসবের আমেজ মাগুরার ঘরে ঘরে

নবান্ন উৎসবকে সামনে রেখে মাঠের ধান কাটার ধুম পড়েছে। নতুন ধান কেটে তা বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। উৎসবের আমেজ শুধু মাঠে নয় কৃষাণীর উঠোন, রান্নাঘরজুড়ে। পিঠা-পুলির আয়োজনে ব্যস্ত তারা। উঠোনে শুকানো হচ্ছে ধান। সেই ধান থেকে হবে চাল, তারপর টেঁকিতে করা হবে সেই চালের গুঁড়া। যা দিয়ে আগামীকাল বুধবার থেকে মাগুরার ঘরে ঘরে তৈরি করা হবে গ্রাম বাংলার নবান্ন উৎসবের নানান রকম পিঠা-পুলি,পায়েস, চালের গুঁড়ার রুটি।

ট্যাঙ্গাখালী বাজারের স্থানীয় কৃষক ও ভ্যানচালক কাসেম মল্লিক বলেন, ‘নবান্ন উৎসব হলো নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। সাধারণত বাংলা অগ্রহায়ণ মাসে অর্থাৎ হেমন্তকালে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। নবান্ন উৎসব হারিয়ে গেলেও নতুন ধান উঠলে বাজারে বিক্রির ধুম পড়ে যায় গুড়, পাটালি, চিনির। বাজার থেকে এসব কিনে বাড়িতে নতুন চালের ভাত, পিঠা এবং নতুন খাবারের আয়োজন করা হবে। এই উৎসব ছোটবেলা থেকে আঞ্চলিকভাবে করতে দেখেছি কিন্তু এখন সেটা সময়ের অতীত। পুরোনো স্মৃতি কিছুটা ধরে রাখতেই প্রতিবছর ঘরোয়া ভাবে ছোট আয়োজন করে থাকি। কাল বাড়িতে ছোট করে নবান্ন উৎসবের আয়োজন হবে।’

শিকদার ওয়ালিউজ্জামান কবি, সাহিত্যিক ও ইতিহাস গবেষক বলেন,‘মাগুরার নবান্ন উৎসব হলো নতুন ধান ঘরে তোলার আনন্দ উদযাপন, যা সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে পালিত হয় এবং এর মধ্যে নতুন পিঠা-পুলি তৈরি ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এটি ফসল কাটার মৌসুমের সমাপ্তি চিহ্নিত করে এবং প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। এই উৎসবে গ্রামীণ জনপদে আনন্দ-বিনোদনের ধুম পড়ে যায় এবং শহরের জীবনে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, যেমন জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ও শিশু একাডেমি আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। তার মধ্যে যেমন ঘুড়ি তৈরি, পিঠা প্রদর্শনী এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় যাতে নতুন প্রজন্ম নবান্ন উৎসব সম্পর্কে জানতে পারে।’

নবান্ন উৎসবের আমেজ মাগুরার ঘরে ঘরে

ঐতিহ্যবাহী কৃষি উৎসব এটি প্রাচীন কৃষি সংস্কৃতির অংশ, যা নতুন ফসলের আগমনকে চিহ্নিত করে। বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য নবান্ন উৎসব যা আমাদের আনন্দ এবং নতুন শুরুর প্রতীক, যেখানে নতুন ধানের পিঠা-পুলি তৈরি করা হয়।

প্রাবন্ধিক তরুন বৈদ্য বলেন, ‘আধুনিক জীবনযাত্রা নবান্ন উৎসবে ধান কাটা থেকে শুরু করে পিঠা প্রদর্শনী এবং ঘুড়ি তৈরি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উৎসবটি উদযাপন করা হতো সেটা হারাতে বসেছে। নবান্ন এটি প্রাচীন কৃষি সংস্কৃতির অংশ, যা নতুন ফসলের আগমনকে চিহ্নিত করে। উৎসবটি আনন্দ এবং নতুন শুরুর প্রতীক, যেখানে নতুন ধানের চাল হয়। ছোটবেলার সেই স্মৃতি মনে পড়লে আবেগ কাজ করে মনের মধ্যে। অতীতে পৌষসংক্রান্তির দিনও গৃহদেবতাকে নবান্ন নিবেদন করার প্রথা ছিল। বিশ্বাস করা হয়ে থাকে, নতুন ধান উৎপাদনের সময় পিতৃপুরুষ অন্ন প্রার্থনা করে থাকেন। এ কারণেই পার্বণ কৃত্য অনুযায়ী নবান্নে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানও করা হয়ে থাকে কোথাও কোথাও। তবে এসব প্রাচীন প্রথা এখন আর খুব একটা দেখা যায় না।’

নবান্নের এই উৎসব ব্যক্তি, পরিবার, স্থান, কাল বা ধর্মের সীমানা দ্বারা আবদ্ধ না হয়েও এর সবগুলোকেই ধারণ করে। অগ্রহায়ণ মাসে নতুন ফসল ঘরে তোলা উপলক্ষে কৃষকেরা এই উৎসব পালন করে থাকেন। সে সময় কোনো কোনো অঞ্চলে ফসল কাটার আগে বিজোড়সংখ্যক ধানের ছড়া কেটে নিয়ে ঘরের চালে বেঁধে রাখা হয় এবং বাকি অংশ চাল করে পায়েস রান্না করা হয়।

নবান্ন উৎসবের আমেজ মাগুরার ঘরে ঘরে

জেলা কালচারাল অফিসার পার্থ প্রতিম দাশ বলেন,‘বাংলার মানুষের জীবনে অবিচ্ছেদ্য আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে ‘অগ্রহায়ণ মাস’ ও ‘নবান্ন’। অগ্রহায়ণ শব্দের অর্থ বর্ষ শুরুর মাস। আর অগ্রহায়ণের প্রথম দিনটিই বাংলাদেশে নবান্ন যাপনের দিন হিসেবে পরিচিত। দেশের প্রাচীনতম উৎসবগুলোর একটি নবান্ন উৎসব। বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী অগ্রহায়ণ অষ্টম মাস হিসেবে বিবেচিত হলেও হেমন্ত ঋতুর দ্বিতীয় এ মাসের প্রথম দিনটিই বাংলাদেশের নবান্ন। বাংলার ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব উদযাপন করার জন্য মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ করে নতুন চালের পিঠা ও পায়েস রান্না করে ধুমধামের সঙ্গে ভূরিভোজের আয়োজন করা হয়। গ্রামের বধূরা অপেক্ষা করেন বাপের বাড়িতে নাইওরে গিয়ে নবান্ন উদযাপনের জন্য। চারদিকে পিঠা, পায়েস, মুড়ি-মুড়কি আর নতুন চালের ভাতের সুগন্ধে ভরে ওঠে মন।’

একটা সময় নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে গ্রামে, গঞ্জে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো যেমন খুশি তেমন সাজো, বিস্কুট দৌড়, পিঠা প্রদর্শনী, এবং ঘুড়ি তৈরি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উৎসবটি উদযাপন করা হয়। কিন্তু কালের বিবর্তনে নবান্ন উৎসবের সেই আমেজ, সেই ধারা বর্তমানে অতীত। আমরা যেন আবারো ফিরে পাই পুরোনো ধারার পিঠা-পুলির নবান্ন উৎসব।

আরও পড়ুন
যে হাটে সংসারের গল্প বিক্রি হয় রঙিন পসরা সাজিয়ে
‘এমএ পাস চা ওয়ালা’র সাফল্যের গল্প বললেন সহিদুল

কেএসকে/জেআইএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow