নবান্ন: স্মৃতিতে বাঁচে বাঙালির সোনালি উৎসব

মাঠজুড়ে সোনালি ধানের দোলা, বাতাসে ভাসছে নতুন ধানের গন্ধ। ক্যালেন্ডারের পাতায় অগ্রহায়ণ মানেই একসময় গ্রামবাংলায় ছিল উৎসবের আমেজ। কিন্তু সেই আমেজ এখন কেবলই স্মৃতি। আজকের প্রজন্মের কাছে ‘নবান্ন’ শব্দটি শুধুই পাঠ্যবইয়ের পাতা কিংবা টেলিভিশনের পর্দায় সীমাবদ্ধ। মাঠে নতুন ধান উঠছে ঠিকই, কৃষকের চোখেমুখে হাসিও আছে, কিন্তু নেই সেই প্রাণচাঞ্চল্য আর নবান্ন উৎসবের চিরায়ত অপেক্ষা। কালের বিবর্তন, আধুনিকতার যান্ত্রিকতা এবং ধর্মীয় কিছু ব্যাখ্যার বেড়াজালে বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য নবান্ন আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলা, সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রামে এখন আমন ধান কাটার ধুম। হেমন্তের শেষে শীতের আগমনী বার্তার মধ্যেই কৃষক ব্যস্ত সোনালি ফসল ঘরে তুলতে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের ঘরে আশার আলো ফিরলেও, নেই উৎসবের সেই পুরোনো রং। একসময় ধান কাটা শেষ হওয়ামাত্রই গ্রামজুড়ে শুরু হতো পিঠা-পায়েসের আয়োজন। আত্মীয়-স্বজনের পদচারণায় মুখর হতো গৃহস্থের উঠোন। কিন্তু এখন সেসব দৃশ্য শুধুই কল্পনা। গ্রামের মাঠে সোনালি ধান হাওয়ায় দুলছে, কৃষকের গোলা ভরছে ফসলে। কিন্তু নবান্নের সেই সার্বজনীন উৎসবের উচ্ছ্বাস আর

নবান্ন: স্মৃতিতে বাঁচে বাঙালির সোনালি উৎসব

মাঠজুড়ে সোনালি ধানের দোলা, বাতাসে ভাসছে নতুন ধানের গন্ধ। ক্যালেন্ডারের পাতায় অগ্রহায়ণ মানেই একসময় গ্রামবাংলায় ছিল উৎসবের আমেজ। কিন্তু সেই আমেজ এখন কেবলই স্মৃতি। আজকের প্রজন্মের কাছে ‘নবান্ন’ শব্দটি শুধুই পাঠ্যবইয়ের পাতা কিংবা টেলিভিশনের পর্দায় সীমাবদ্ধ।

মাঠে নতুন ধান উঠছে ঠিকই, কৃষকের চোখেমুখে হাসিও আছে, কিন্তু নেই সেই প্রাণচাঞ্চল্য আর নবান্ন উৎসবের চিরায়ত অপেক্ষা। কালের বিবর্তন, আধুনিকতার যান্ত্রিকতা এবং ধর্মীয় কিছু ব্যাখ্যার বেড়াজালে বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য নবান্ন আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।

লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলা, সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রামে এখন আমন ধান কাটার ধুম। হেমন্তের শেষে শীতের আগমনী বার্তার মধ্যেই কৃষক ব্যস্ত সোনালি ফসল ঘরে তুলতে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের ঘরে আশার আলো ফিরলেও, নেই উৎসবের সেই পুরোনো রং। একসময় ধান কাটা শেষ হওয়ামাত্রই গ্রামজুড়ে শুরু হতো পিঠা-পায়েসের আয়োজন। আত্মীয়-স্বজনের পদচারণায় মুখর হতো গৃহস্থের উঠোন। কিন্তু এখন সেসব দৃশ্য শুধুই কল্পনা।

নবান্ন: স্মৃতিতে বাঁচে বাঙালির সোনালি উৎসব

গ্রামের মাঠে সোনালি ধান হাওয়ায় দুলছে, কৃষকের গোলা ভরছে ফসলে। কিন্তু নবান্নের সেই সার্বজনীন উৎসবের উচ্ছ্বাস আর নেই। জীবনযাত্রার পরিবর্তন, ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা আর যান্ত্রিক ব্যস্ততায় বাঙালির শেকড়ের এই চিরন্তন ঐতিহ্য আজ ইতিহাসের পাতায় আশ্রয় নিচ্ছে। কৃষকরা বলছেন, ধান আছে, চাল আছে, কিন্তু ‘আগের সেই আনন্দ আর নাই’।

গ্রামের প্রবীণদের কণ্ঠে এখন শুধুই দীর্ঘশ্বাস। হাতীবান্ধার ৮৬ বছর বয়সী কৃষক আজিজার রহমান স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে অভাব ছিল, কিন্তু নতুন ধান কাটার আনন্দ ছিল ভরপুর। ধান ঘরে তোলার পর পিঠা-পোলাও বানাতাম, হুজুরকে ডাকতাম, সবাই মিলে খেতাম। এখন আবাদ বাড়ছে, কিন্তু আনন্দ কমছে। এখনকার বাচ্চারা নবান্ন মানেই না।’

আরেক কৃষক ৬৫ বছর বয়সী মজিবার রহমান আক্ষেপ করে বলেন, ‘নতুন ধানের ভাত রান্নার সেই রেওয়াজ আর নেই। তার কথায়, আগে নতুন ধান এনে চাল বানিয়ে প্রথম ভাত হুজুরকে খাওয়াতাম, নিজেরা খেতাম, দোয়া-খায়ের করতাম। এখন অনেকেই বলে এই আয়োজন নাকি ‘বেদাত’। কাল ধান কাটলাম, শুকিয়ে আজই খাওয়া শুরু, সেই নিয়ম-রেওয়াজ আর আমাদের মাঝে নাই।’

নবান্ন: স্মৃতিতে বাঁচে বাঙালির সোনালি উৎসব

শুধু উৎসব নয়, নবান্নকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সামাজিক বন্ধন ছিল, তাও শিথিল হয়ে গেছে। অতীতের স্মৃতিচারণ করে আমিনা বেগম বলেন, ‘আগে মানুষ ঐতিহ্যকে মানত, পরস্পরকে দাম দিত। নতুন চালের ভাত রেঁধে মাজারের দুয়ারে রাখতাম, মিলাদ পড়াতাম। এখন মানুষের ভেতর ঈমান-আচরণ কমে গেছে। সময় বদলাইছে, ঐতিহ্যও হারাইয়া যাচ্ছে।’

আরও পড়ুন
যে হাটে সংসারের গল্প বিক্রি হয় রঙিন পসরা সাজিয়ে
‘এমএ পাস চা ওয়ালা’র সাফল্যের গল্প বললেন সহিদুল

কেএসকে/এমএস

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow