নবান্নে শতবর্ষী মাছের মেলায় বিক্রি ২ কোটি টাকা

নবান্ন উৎসব উপলক্ষে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার উথলীতে বসেছিল মাছের মেলা। মেলায় দেড় হাজার মণের বেশি মাছ কেনাবেচা হয়েছে। এক কেজি থেকে শুরু করে ২৫ কেজি ওজনের রুই, কাতলা, বিগহেড, গ্লাসকার্প, সিলভারকার্পসহ হরেক রকমের মাছ বিক্রি হয় মেলায়। তবে গত বছরের তুলনায় এবার মাছের আমদানি ও দাম বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। সেই তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা কম। বিশালাকৃতির রুই-কাতলা, ও বিগহেড মাছগুলো সাতশ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও মাঝারি আকারের মাছ ৭০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।  এছাড়া ২০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা দরে বিগহেড ও সিলভার কার্প মাছ বেচাকেনা হয়। শত বছরের প্রাচীন উথলী মাছের মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের ২০ গ্রাম স্বজনদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। সনাতনী পঞ্জিকানুসারে মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) পহেলা অগ্রহায়ণ হওয়ায় এদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নবান্ন উৎসব পালন করে। এই উৎসবকে কেন্দ্র করেই প্রতি বছর মাছের মেলা বসে উথলী হাটে। নবান্ন উপলক্ষে উথলী গ্রাম ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রথবাড়ি, নারায়ণপুর, ধোন্দাকোলা, সাদুল্লাপুর, বেড়াবালা, শিবগঞ্জ, আকনপাড়া, গরিবপুর, দেবীপুর, গুজিয়া, মেদেনীপাড়া, বাকশন, রহবল, মোকামতলাসহ

নবান্নে শতবর্ষী মাছের মেলায় বিক্রি ২ কোটি টাকা

নবান্ন উৎসব উপলক্ষে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার উথলীতে বসেছিল মাছের মেলা। মেলায় দেড় হাজার মণের বেশি মাছ কেনাবেচা হয়েছে। এক কেজি থেকে শুরু করে ২৫ কেজি ওজনের রুই, কাতলা, বিগহেড, গ্লাসকার্প, সিলভারকার্পসহ হরেক রকমের মাছ বিক্রি হয় মেলায়। তবে গত বছরের তুলনায় এবার মাছের আমদানি ও দাম বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। সেই তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা কম। বিশালাকৃতির রুই-কাতলা, ও বিগহেড মাছগুলো সাতশ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও মাঝারি আকারের মাছ ৭০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। 

এছাড়া ২০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা দরে বিগহেড ও সিলভার কার্প মাছ বেচাকেনা হয়। শত বছরের প্রাচীন উথলী মাছের মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের ২০ গ্রাম স্বজনদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।

সনাতনী পঞ্জিকানুসারে মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) পহেলা অগ্রহায়ণ হওয়ায় এদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নবান্ন উৎসব পালন করে। এই উৎসবকে কেন্দ্র করেই প্রতি বছর মাছের মেলা বসে উথলী হাটে। নবান্ন উপলক্ষে উথলী গ্রাম ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রথবাড়ি, নারায়ণপুর, ধোন্দাকোলা, সাদুল্লাপুর, বেড়াবালা, শিবগঞ্জ, আকনপাড়া, গরিবপুর, দেবীপুর, গুজিয়া, মেদেনীপাড়া, বাকশন, রহবল, মোকামতলাসহ ২০ গ্রামে ছিল উৎসবের আয়োজন। প্রতিটি বাড়িতেই মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয়স্বজনদের নিমন্ত্রণ করা হয়। 

নবান্ন উপলক্ষে উথলী হাটে মাছের মেলা বসলেও জমি থেকে নতুন তোলা অন্যান্য শাকসবজির পসরাও সাজানো হয় মেলা চত্বরে। এই মেলায় নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়াও মিষ্টি আলু ও কেশর (ফল) প্রতি কেজি ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ছিল নতুন শিম থেকে শুরু করে হরেক প্রকার সবজি।

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার নেপালতলী থেকে মেলায় মাছ বিক্রি করতে এসেছিলেন ব্যবসায়ী শ্রী চন্দ্র মন্ডল। তিনি জানান, গত বছরের তুলনায় এবার দাম কিছুটা বেশি হলেও বেচাকেনা হয়েছে আশানুরূপ। প্রতি বছরই তিনি এই মেলায় মাছ বিক্রি করেন তিনি। এবার তিনি ২৫ কেজি ওজনের একটি গ্লাসকার্প মাছ বিক্রি করেছেন ১২শ টাকা দরে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। ১৮ কেজি ওজনের গ্লাসকার্প মাছের দাম চাইছেন ৭শ টাকা করে ১২ হাজার ৬শ টাকা। মেলায় এবার তিনি ২৫ মণ মাছ এনেছেন বিক্রির জন্য। 

শিবগঞ্জ উপজেলার দোপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী অজিত চন্দ্র মাঝি মেলায় দোকান দিয়েছেন। তিনি বলেন, গত বছর মেলায় যত ক্রেতা ছিল এবার তেমনটি নেই। এবার মাছের আমদানি বেশি। তিনি বিক্রির জন্য রুই কাতলা বিগহেড মিলে সাত লাখ টাকা মাছ এনেছেন। তিনি ১৬ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ ১৮শ টাকা কেজি দরে দাম হেঁকেছেন ২৮ হাজার টাকা। দুপুরে পর্যন্ত দাম বলেছে ১৫ হাজার টাকা। 

মাছ বিক্রেতা ধামাহার গ্রামের আব্দুল বাসেদ বলেন, মেলায় ছোট-বড় মিলে শতাধিক মাছের দোকান বসেছে। প্রত্যেক বিক্রেতা ৫ থেকে ১০ মণ করে মাছ বিক্রি করেছেন। মেলার এসব বিক্রেতার কাছে মাছ সরবরাহের জন্য সেখানে ২০টি আড়ত খোলা হয়। সেসব আড়ত পাইকারি দরে মাছ কিনে অধিকাংশ দোকানি মেলায় খুচরা বিক্রি করেন।

মেলায় আড়ত খুলে বসা গাইবান্ধার মৎস্য আড়তের স্বত্বাধিকারী বিশু মন্ডল বলেন, অধিকাংশ আড়তদার পিকআপভ্যান ও ভটভটিতে করে মাছ এনে নিমিষেই পাইকারি বিক্রি করে দিয়েছেন। পুরো মেলার ২০ জন আড়তদার মিলে কোটি টাকার ওপরে মাছ বিক্রি করেছেন।

মেলায় মাছ কিনতে আসা শিবগঞ্জ পৌরসভার বানাইল মহল্লা বাসিন্দা আবদুর রউফ রুবেল বলেন, উথলীর নবান্ন মেলায় বিক্রির জন্য আশপাশের এলাকার পুকুরগুলোতে সৌখিন চাষিরা মাছ মজুদ করে রাখেন। এলাকার কে কত বড় মাছ মেলায় তুলতে পারে যেন তারই প্রতিযোগিতা চলে চাষিদের মধ্যে। এছাড়া আড়তদাররা তো আছেই। এলাকার লোকজনও প্রায় প্রতিযোগিতা করে তুলনামূলক বড় মাছ কিনে বাড়িতে নিয়ে যায়। মূলত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নবান্ন উৎসব করলেও আশপাশের গ্রামের সকল সম্প্রদায়ের মানুষই কেনাকাটা করে।

উথলী গ্রামের বাসিন্দা ও শিবগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, প্রায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মেলাটি যেমন মাছের জন্য বিখ্যাত, তেমনি মেলার দিন নতুন শাক-সবজিতেও ভরপুর থাকে। এ কারণে আশপাশের লোকজন মেলায় ছুটে আসেন। 

তিনি আরও বলেন, শুধু যে মাছ আর সবজিই নয়, মেলার আবহের জন্য সেখানে নাগরদোলা, শিশু-কিশোরদের খেলনার দোকান বসেছে। সেই সঙ্গে মিষ্টান্ন ও দইয়ের একটি বড় বাজারও বসেছে মেলা চত্বরে।

উথলী হাটের ইজারাদার বুলবুল ইসলাম জানান, এবার মেলায় দেড় হাজার মণের বেশি মাছ কেনাবেচা হয়েছে যার আর্থিক মূল্য দুই কোটি টাকার মতো হতে পারে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, মেলার বিষয়টি এতটাই প্রচার পেয়েছে যে আশপাশের ২০ গ্রামের মানুষই শুধু নয় বরং বগুড়া-জয়পুরহাট শহর থেকেও অনেকে মাছ কেনার জন্য মেলায় যান। 

এ বিষয়ে শিবগঞ্জ থানার ওসি শাহীনুজ্জামান শাহীন বলেন, নবান্নের মেলা এই এলাকার একটি বিশেষ ঐতিহ্য। গ্রামে গ্রামে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। মেলায় কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা যেন না হয় সে জন্য পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।


 

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow