নভেম্বর মাসে একদিনও ‘ভালো’ মানের বায়ু পায়নি রাজধানীবাসী

1 month ago 21

শুষ্ক মৌসুম শুরু না হতেই নগরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে ধুলোর দুর্ভোগ। সেই সঙ্গে প্রতিনিয়ত দূষিত বায়ুতে শ্বাস নিতে হচ্ছে নগরবাসীকে। চলতি বছরের নভেম্বর মাসে ঢাকার মানুষ একদিনও ভালো বা নির্মল মানের বাতাস পায়নি।

বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত একটি গবেষক দলের প্রকাশিত গবেষণায় এসব তথ্য জানা গেছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসের মধ্যে ১ দিনের বায়ুর মান ছিল মাঝারি প্রকৃতির, ৪ দিনের বায়ুর মান ছিল সতর্কতামূলক, ১২ দিনের বায়ুমান ছিল অস্বাস্থ্যকর এবং ১৩ দিনের বায়ুর মান ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর।

ঢাকায় আমেরিকান দূতাবাস থেকে প্রাপ্ত ২০১৬ থেকে ২০২৪ সালের অর্থাৎ ঢাকার গত ৯ বছরের বায়ুর মান সূচক বা একিউআই এর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। তারা জানিয়েছে, ২০১৬ থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৮ বছরের নভেম্বর মাসের প্রাপ্ত ২৫৬ দিনের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, গত ৯ বছরের নভেম্বর মাসের মোট ২৫৬ দিনের মধ্যে ১৩৮ দিন ছিল অস্বাস্থ্যকর এবং ৬৪ দিন ছিল খুব অস্বাস্থ্যকর।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আরও দেখা যায় যে, গত ৯ বছরের নভেম্বর মাসের মোট ২৫৬ দিনের মধ্যে ঢাকার মানুষ মোট ১ দিন ভালো বা নির্মল বায়ুতে নিঃশ্বাস নিতে সক্ষম হয়েছিল।

ক্যাপসের গবেষণায় সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আরও দেখা যায় যে, বিগত ৯ বছরের নভেম্বর মাসের মধ্যে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাস বায়ুদূষণের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে।

ঢাকায় বায়ুর মান সূচক বা একিউআই পূর্ববর্তী আট বছরের (২০১৬-২০২৩) নভেম্বর মাসের গড় মানের (১৭৬.৬৬) তুলনায় ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসের গড় মান শতকরা ১০.৩৭ ভাগ বেড়ে গেছে এবং ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসের বায়ুমান সূচক শতকরা ১১.০৫ ভাগ বেড়ে গেছে।

গত ৯ বছরের মধ্যে ২০১৬ সালে ঢাকার নভেম্বর মাসের বায়ুর মান সূচক গড়ে ১৬৯ ছিল, ২০১৭ সালে ১৭৮ ছিল, ২০১৮ সালে ১৯৭ ছিল, ২০১৯ সালে ১৫৯ ছিল, ২০২০ সালে ১৬৩ ছিল ২০২১ সালে ১৯৪.৮ ছিল, ২০২২ সালে ১৭৬ ছিল এবং ২০২৩ সালে ১৭৫.৬ ছিল। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসের বায়ুমান সূচক ২০২৩ সালের চেয়ে বেড়ে গিয়ে ১৯৫ এ এসে দাঁড়িয়েছে।

ক্যাপসের গবেষণা বলছে, ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য সমন্বয়হীন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণকাজ ৩০ শতাংশ দায়ী। ঢাকার বায়ুদূষণে শিল্পায়নের প্রভাব ও আশপাশের ইট-ভাটার পাশাপাশি নির্মাণ স্থান হলো দূষণের প্রধান উৎস। এছাড়া নির্মাণসামগ্রী আনা-নেওয়ার সময় বড় বড় মালবাহী গাড়িতে ছাউনি না থাকায় ছড়াচ্ছে ধুলা।

ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, গত ৮ বছরের চেয়ে গড়ে এই বছরে ১০ ভাগেরও বেশি বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পেয়েছে যা একটা বড় শঙ্কার বিষয়। এছাডাও ৯ বছরের নভেম্বর মাসের মধ্যে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাস বায়ুদূষণের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে।

তিনি বলেন, ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথম সর্বোচ্চ উৎস নির্মাণকাজ, দ্বিতীয় কারণ হলো শিল্প কারখানা, তৃতীয় সর্বোচ্চ হলো ফিটনেসবিহীন যানবাহন। বর্তমানে শঙ্কা হলো নির্মাণবিধি না মেনে বড় বড় মেগা প্রজেক্ট, রাস্তা কাটাকাটির কারণে ধুলাবালি বেশি হচ্ছে। সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।

আরএএস/এসএনআর/এমএস

Read Entire Article