কুড়িগ্রামের চিলমারী-রৌমারী নৌরুটে ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্য সংকট কাটছেই না। সারা বছর ড্রেজিংয়ের কথা বলা হলেও কাজের কাজ হচ্ছে না কিছুই। অথচ ড্রেজিংয়ের নামে ঠিকই গচ্চা যাচ্ছে সরকারের টাকা। এ অবস্থায় বন্ধ রয়েছে চিলমারী-রৌমারী নৌরুটে ফেরি চলাচল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিলমারীর রমনা ঘাট থেকে রৌমারীর ফলুয়ার চর ঘাটের দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার। এ ২২ কিলোমিটার নৌপথ পাড়ি দিতে সংগ্রাম করতে হয় এ অঞ্চলের মানুষদের। কখনো চর হেঁটে, কখনোবা নৌপথে। দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান ঘটিয়ে ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর চিলমারী-রৌমারী নৌরুটে ফেরি চলাচল শুরু হয়। ফেরি চলাচলের ফলে এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারসহ জনভোগান্তি কিছুটা কমলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। নাব্য সংকটের অজুহাত দেখিয়ে বছরের বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকছে ফেরি চলাচল। ফলে বাড়তি ভাড়াসহ নানা ভোগান্তির মধ্যে নৌকায় পারাপার করতে হচ্ছে দুই পাড়ের মানুষদের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চিলমারী-রৌমারী নৌরুটে দারুণ সম্ভাবনায় ফেরি সার্ভিস। ফেরির মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে চাঙা হবে এ অঞ্চল। তবে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক করা সম্ভব হচ্ছে না।
ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় প্রায় প্রতিমাসে ১২ লাখ ৩০ হাজার টাকা গচ্চা দিচ্ছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। বন্ধ থাকায় ফেরির ইঞ্জিনও ক্ষতির মুখে পড়ছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ ঘাটের দুই পাড়ে হাই ওয়াটার এবং লো ওয়াটার ঘাট নেই। স্থায়ীভাবে ড্রেজিং ব্যবস্থা না থাকায় বারবার ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নাইট নেভিগেশন (বাতি) ব্যবস্থাও চালু নেই। এ কারণে রাতের বেলা ফেরি চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
কথা হয় আলম মিয়া, শাহজামাল হোসেন, তোফাজ্জল হোসেনসহ নৌকার কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে। তাদের ভাষ্য, ‘নৌকায় বড় সিন্ডিকেট। একটা মোটরসাইকেল তুলতে নেয় ৬০ টাকা, নামাতে ৬০ টাকা। মোটরসাইকেলের ভাড়া ১০০ টাকা। এসবের পাশাপাশি জনপ্রতি নেওয়া হয় ১০০ টাকা। এত টাকা ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করা আমাদের পক্ষে খুব কষ্টের। ফেরি থাকলে সেটা ১০০ টাকার মধ্যেই থাকতো।’
রংপুরের বাসচালক মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ‘চিলমারী ফেরিঘাটটি যদি ফকিরেরহাটে স্থানান্তর করা হয়, তাহলে দূরত্ব কমে যাবে। বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের অনেক পরিবহন মালিক এই রুটে বাস পারাপার করতে আগ্রহী।’
ভূরুঙ্গামারীর সোনাহাট স্থলবন্দরের ট্রাকচালক হাসান আলী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘গতবছর বন্যার আগে নেভিগেশন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু বন্যার সময় বাতি তুলে ফেলা হয়। পরবর্তী সময়ে আর স্থাপন করা হয়নি। প্রতিদিন বিকেল সাড়ে ৩টার পর ফেরিগুলো লোড নেওয়া হয় না। নেভিগেশন ব্যবস্থা থাকলে রাতে গাড়ি পারাপারের সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে যাবে।’
জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসি চিলমারীর ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) প্রফুল্ল চৌহান বলেন, ২৩ ডিসেম্বর থেকে ফেরি কদম ও কুঞ্জলতা বন্ধ রয়েছে। এতে বাড়তি বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে পরিবহন সংশ্লিষ্ট ও যাত্রীদের। দ্রুত ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হলে এ ভোগান্তি নিরসন করা সম্ভব হবে।
বিআইডব্লিউটিএর দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, পাঁচটি ড্রেজারের মধ্যে তিনটি দিয়ে খননকাজ অব্যাহত রয়েছে। একদিকে খনন করলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে। কবে নাগাদ ফেরি চালু হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
এসআর/জেআইএম