নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে দখলদারদের হাত থেকে প্রায় ৬০ কোটি টাকার ২৩ একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার নির্দেশনায় জমিটি উদ্ধার করে ১ নম্বর খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে কথা বলে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার বিশনন্দী ফেরিঘাট এলাকার নারায়ণগঞ্জ-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের পাশে প্রায় ২৩ একর জমি প্রায় ৭০ বছর ধরে বেদখল অবস্থায় ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের মালিকরা ভারতে চলে গেলে অব্যবস্থাপনার সুযোগে স্থানীয় শতাধিক পরিবার ওই জমিতে চাষাবাদ শুরু করে।
পরবর্তীতে ২০২০ সালে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর লোকজন কৃষকদের কাছ থেকে জমি দখলে নিয়ে অবৈধ বালুর ব্যবসা শুরু করেন। সবশেষ গত বছরের ৫ আগস্ট বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরাও জমি দখলে নেন। এ নিয়ে এলাকায় ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দেয়।
এমন খবর পাওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা আড়াইহাজার উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন, যেন এক ইঞ্চি জমিও আর বেদখল না হয়। সেইসঙ্গে জমিটি মালিকবিহীন হিসেবে খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেন।
আড়াইহাজার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নঈম উদ্দীন বলেন, সব দাবিদারকে কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছিল। গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরে শুনানিতে যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, সবাই ভুয়া মালিক। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন আকারে দাখিল করেছি। জমিটির বাজারমূল্য আনুমানিক ৬০ কোটি টাকা হবে।
পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসকে মো. মামুনুর রশীদ দ্রুত এ সংক্রান্ত ফাইল জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠান। সেইসঙ্গে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) নথিতে স্বাক্ষর করে জমিটি ১ নম্বর খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করার আদেশ দেন।
আরও পড়ুন-
ঈশ্বরদীতে রাশিয়ান নাগরিকের মরদেহ উদ্ধার
গাজীপুরে চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে যুবক নিহত
উপকূলে ৬ হাজার মানুষ পেলো বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিয়া বলেন, এই জমিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি দৃষ্টিনন্দন ইকোপার্ক গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে ভবিষ্যতে জমিটি আর বেদখল হবে না। পাশাপাশি স্থানীয়রা পর্যটন সুবিধা থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।
স্থানীয় বিশনন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আব্দুল হামিদ বলেন, আমার দাদা-বাবা এ জমিতে চাষ করতেন। কিন্তু ২০২০ সালে সাবেক এমপি নজরুল ইসলামের লোকজন আমাদের কাছ থেকে জমি বেদখল করে নেয়। সরকার যদি ইকোপার্ক করে, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। শুধু চাই, আর যেন প্রভাবশালীরা দখল করতে না পারে।
বিশনন্দী ফেরিঘাট জামে মসজিদ ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. মতিউর রহমান বলেন, এখানে দীর্ঘদিন আমরা শতাধিক পরিবার ভোগদখল করে আসছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগের সময় জমি আমাদের কাছে থেকে বেদখল হয়। সরকার যদি এখন নিজের নামে জমি নিয়ে থাকে, তাতে কোনো আপত্তি নেই। তবে যেন আর দখলদারি না হয়।
মোবাশ্বির শ্রাবণ/এফএ/এমএস