নারীর জীবনের একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে তার মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল। এই সাইকেলটি মূলত নারীর শরীরে সন্তানধারণের সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে এর প্রভাব ছড়িয়ে আছে নারীর পুরোটা জীবন জুড়ে।
নারীর শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের ওঠা নামা দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয় এই সাইকেল। আর শরীরে এই একটি হরমোনের পরিমাণের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে নারীর মেজাজ, শক্তি, এনার্জি, সন্তানধারণ, শরীরের গঠন, ত্বকের স্বাস্থ্য, এমনকি হাড়ের শক্তিও।
অর্থাৎ, ইস্ট্রোজেন শুধু একটি হরমোন নয়, বরং নারীর শরীরের এক অদৃশ্য পরিচালক। কৈশোর থেকে শুরু করে মেনোপজ পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ধাপে এই হরমোনের প্রভাব আছে। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক ইস্ট্রোজেন সম্পর্কে।
ইস্ট্রোজেন কীভাবে কাজ করে?
ইস্ট্রোজেন মূলত নারীর ডিম্বাশয়ে তৈরি হয়। এছাড়া সামান্য পরিমাণে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি ও চর্বির কোষ থেকেও এটি নিঃসৃত হয়। এর তিনটি ধরন রয়েছে — ইস্ট্রাডিওল, ইস্ট্রোন ও ইস্ট্রিওল। এরা মিলেই নারীর প্রজনন ক্ষমতা, ঋতুচক্র, গর্ভধারণ ও মানসিক স্থিতি বজায় রাখে।

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইস্ট্রোজেন শরীরে চারশ’র বেশি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে। এটি শুধু প্রজনন নয়— চুল, ত্বক, হৃদ্যন্ত্র, হাড়ের স্বাস্থ্য, এমনকি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাও প্রভাবিত করে।
ইস্ট্রোজেনের ঘাটতি হলে কী হয়?
যখন ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যায় - যেমন মেনোপজের সময় বা অতিরিক্ত স্ট্রেসে - তখন নানা পরিবর্তন দেখা দেয়। যেমন -
>> হঠাৎ ঘাম বা হট ফ্ল্যাশ
>> অনিদ্রা, মন খারাপ বা বিরক্তি
>> ত্বক ও চুলের শুষ্কতা
>> হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া
>> যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ জানিয়েছে, মেনোপজের পর ইস্ট্রোজেন কমে গেলে নারীদের অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ভাঙার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
ইস্ট্রোজেন বেড়ে গেলে কী হয়?
অন্যদিকে, হরমোনের মাত্রা বেশি হলে ওজন বেড়ে যাওয়া, মাথাব্যথা, স্তনে টান লাগা, ঋতুচক্র অনিয়ম ও মানসিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। মায়ো ক্লিনিক জানিয়েছে, অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন থাকলে জরায়ুর টিউমার বা ফাইব্রয়েড হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে।

ইস্ট্রোজেনের ভারসাম্য রাখার উপায়
অর্থাৎ, শরীরে ইস্ট্রোজেন বেশি হলেও যেমন বিপদ, কম হলেও তেমন বিপদ। তাই ভারসাম্য বজায় রাখা খুব জরুরি। এই ভারসাম্য বজায় রাখতে -
>> সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন, বিশেষ করে ফল, সবজি, মাছ ও পূর্ণ শস্যজাত খাবার।
>> পর্যাপ্ত সময় ঘুমান ও নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
>> অতিরিক্ত মানসিক চাপ কমান, কারণ স্ট্রেস ইস্ট্রোজেনের ছন্দ নষ্ট করে।
>> চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া হরমোন সাপ্লিমেন্ট নেবেন না।
সূত্র: হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল, মায়ো ক্লিনিক, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (যুক্তরাষ্ট্র), আমেরিকান কলেজ অব অবসটেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টস (এসিএওজি)
এএমপি/জেআইএম

2 hours ago
3








English (US) ·