নারীসহ সিলেটের সাবেক আলোচিত কাউন্সিলর লায়েক গ্রেপ্তার
সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আলোচিত-সমালোচিত সাবেক কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ লায়েককে এক নারীসহ গ্রেপ্তার করেছে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ।
শুক্রবার (২২ অক্টোবর) গভীর রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
লায়েকের বিরুদ্ধে সিলেটের বিভিন্ন থানায় ১৩টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। শনিবার তাদের দুজনকে ঢাকা থেকে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় নিয়ে আসা হয়। রোববার তাদের আদালতে হাজির করা হবে।
তিনি সিলেট মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং নগরীর মুন্সিপাড়া এলাকার ১৯১ নম্বর বাসার মৃত আব্দুর রশীদের ছেলে। লায়েকের সাথে আটক হওয়া নারীর নাম সুবর্ণা খান সুমি (২৫)। তিনি নগরীর মুন্সীপাড়া এলাকার ইউসুফ খানের মেয়ে। আটকের পর সুমি নিজেকে লায়েকের স্ত্রী হিসেবে দাবি করেন। তবে সুমির এ দাবি নাকচ করে দিয়েছেন লায়েকের স্ত্রী নাসিমা আক্তার রুমি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা, নাশকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে সিলেটের কোতোয়ালি মডেল থানাসহ বিভিন্ন থানায় সাবেক কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ লায়েকের বিরুদ্ধে ১৩ মামলা রয়েছে। ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার গভীর রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে ‘পরকীয়া প্রেমিকা’ সুবর্ণা খান সুমিসহ সাবেক কাউন্সিলর লায়েককে গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার সিলেটে নিয়ে আসার পর অসুস্থতা বোধ করলে লায়েককে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। চিকিৎসা শেষে বর্তমানে তাকে কোতোয়ালি থানায় রাখা হয়েছে। রোববার তাদের আদালতে সোপর্দ করা হবে।
এদিকে সাবেক কাউন্সিলর লায়েকের সাথে আটক হওয়া নারীকে নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজাল। আটকের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সুবর্ণা খান সুমি নিজেকে কাউন্সিলর লায়েকের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে দাবি করেন। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেননি।
এ ব্যাপারে কথা হয় লায়েকের স্ত্রী নাসিমা আক্তার রুমির সাথে কালবেলার। তিনি শনিবার রাতে জানান, আমি আবুল কালাম আজাদ লায়েকের একমাত্র স্ত্রী। আমাদের ৩টি সন্তান রয়েছে। আমার স্বামীকে গ্রেপ্তারের খবর পেয়েছি। কিন্তু তার সাথে থাকা ওই মেয়ে আমার স্বামীর স্ত্রী হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। আমি তাকে চিনি না। তবে ফেসবুকে তার একটি ফেইক আইডি রয়েছে সুবর্ণা খান সুমি নামে।
নারীসহ লায়েককে গ্রেপ্তারের বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত ১৩ মামলার আসামি সাবেক কাউন্সিলর লায়েককে গ্রেপ্তার করেছি আমরা। তার সাথে আটককৃত নারী নিজেকে কাউন্সিলর লায়েকের স্ত্রী দাবি করছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রোববার তাদের আদালতে হাজির করা হবে।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন কারণে একাধিকবার সমালোচিত হয়েছেন আবুল কালাম আজাদ লায়েক। ২০২০ সালের ১ এপ্রিল করোনাকালে রাতের আধারে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সিলেট সিটি করপোরেশনের খাদ্য ফান্ডের ১২৫ বস্তা চাল জোর করে নিজ বাসায় নিয়ে যান কাউন্সিলর লায়েক। বিষয়টি জানাজানি হলে সিসিক কর্তৃপক্ষ ৩ এপ্রিল লায়েকের বাসা থেকে চাল উদ্ধার করে। ২০২১ সালের ২৩ এপ্রিল লায়েকের বাসা ও কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। ওই বছরের ৮ জুন সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে স্থানীয় সাংবাদিক সোয়েব বাসিত জানান, মুন্সীপাড়ার মসজিদ ও ক্লাব কমিটি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে কাউন্সিলর লায়েক নিজেই তার বাসা ও অফিস ভাঙচুর করিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে ১৩ জুন পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন লায়েক। সেই সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলে দাবি করেন তিনি।
২০২২ সালের ২২ অক্টোবর উত্তরাধীকার সনদ প্রদানের জন্য এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠে লায়েকের বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত অডিও ও ভিডিও ক্লিপ সে সময় ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এছাড়াও জনসাধারণ এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে চরম দুর্ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে কাউন্সিলর লায়েকের বিরুদ্ধে। ৩ নং ওয়ার্ডে তিনি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন লায়েক। অবশেষে শুক্রবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন তিনি। তার গ্রেপ্তারের খবরে স্বস্তি ফিরে এসেছে মুন্সীপাড়ায়। এলাকার বাসিন্দারা উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন তার গ্রেপ্তারে।