নাহিদের ৬ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের প্রেস ব্রিফিং যেমন ছিল

3 hours ago 5

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ১টা ১৭ মিনিট। মোবাইলফোনের হোয়াটসঅ্যাপে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার খুদেবার্তায় জানালেন, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত বৈঠক চলছে। দুপুর আড়াইটায় বাসভবনের বাইরে মিডিয়ার জন্য নির্ধারিত স্থানে প্রেস ব্রিফিং হবে। খুদে বার্তা পেয়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ইলেকট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমের কর্মীরা দ্রুত সেখানে ছুটে যান।

ব্যতিক্রম ছাড়া সাধারণত প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ব্রিফিং রোববার মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিকেল বা সন্ধ্যায় হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে প্রেস ব্রিফিং আহ্বান ও উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ায় গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে আজ কি ধরনের ব্রিফিং হবে তা নিয়ে টানা-ঘোষা চলছিল।

তবে গত কয়েকদিন ধরে তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, তার এবং টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ঘোষিত নতুন রাজনৈতিক দলে যোগদানের জন্য পদত্যাগ করবেন এমনটি জানাই ছিল। এ কারণে গণমাধ্যম কর্মীদের আলোচনা ও গুঞ্জন চলছিল যে তবে নাহিদ ইসলাম আজই প্রধান উপদেষ্টার কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই নানা ভাবে নিশ্চিত তথ্য আছে যে নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন।

এসময় গণমাধ্যম কর্মীরা বিশেষ করে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভিডিওগ্রাফাররা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের গেটের দিকে ক্যামেরা তাক করে রেকর্ডিং করতে শুরু করেন। রিপোর্টাররা লাইভ সম্প্রচার করার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন।

দুপুর আড়াইটায় ব্রিফিং শুরু হওয়ার কথা থাকলেও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে (এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, সিনিয়র সহকারী প্রেস সেক্রেটারি ফয়েজ আহমদ ও সহকারী প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি সুচিস্মিতা তিথি) কিছুটা বিলম্বে উপস্থিত হন সদ্য পদত্যাগ পত্র জমা দেওয়া নাহিদ ইসলাম।

প্রেস ব্রিফিংয়ের শুরুতে শফিকুল আলম জানান, খুব সংক্ষেপে নাহিদ বক্তব্য দেবেন। সাদা শার্ট পরিহিত নাহিদকে এসময় কিছুটা ক্লান্ত দেখা যায়।

প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশ্যে ৩ মিনিট ১৩ সেকেন্ড বক্তব্য দেন। বক্তব্যে তিনি বলেন-
আজ দুপুর ১টার সময় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক ছিল। এ বৈঠকে আমি আমার একটা ব্যক্তিগত বিষয়ে আলোচনা করেছি এবং আলোচনা সাপেক্ষে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর আমার পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছি।

আমার যে দুটি মন্ত্রণালয় ছিল তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি, এ দুটি মন্ত্রণালয় থেকে ইস্তফা দিয়েছি। এছাড়াও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনসহ সরকারের যেসব কমিটিতে ছিলাম সব কমিটি থেকে একই সঙ্গে ইস্তফা আমার হচ্ছে।

মূলত একটি গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে ৮ আগস্ট আমরা গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে প্রথমে দুজন ও পরে আরও একজনসহ তিন জন অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে দায়িত্ব নেই। তখন দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সেই সময় আমাদের দায়িত্ব গ্রহণ করাটা যৌক্তিক মনে হয়েছিল।

গত ছয় সাড়ে ছয় মাস অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে। হয়তো আমরা আশানুরূপ ফলাফল এখনো পাইনি। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে যে সরকার একটা স্টেবিলিটিতে এসেছে। ব্যক্তিগতভাবে সরকারের বাইরে দেশের বর্তমান যে পরিস্থিতি সেই পরিস্থিতিতে একটি রাজনৈতিক শক্তির উত্থানের জন্য আমার রাজপথে থাকা প্রয়োজন, ছাত্র-জনতার কাতারে থাকা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, আমরা যে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা করি, সেই আকাঙ্ক্ষার জন্য, গণ অভ্যুত্থানে যে ছাত্র-জনতা অংশগ্রহণ করেছে সেই শক্তিকে সংযত করতে আমি মনে করেছি সরকারের থেকে আমার সরকারের বাইরে রাজপথে ভূমিকা বেশি হবে। বাইরে যারা আমাদের সহযোদ্ধা রয়েছেন তারাও এটি চান। সেই প্রেক্ষিতে মূলত আমি আজ পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছি।

গত ছয় মাসে আমরা, আমি আমার জায়গা থেকে কাজ করে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। দুটি মন্ত্রণালয়ের বাইরে ও অনেক অতিরিক্ত দায়িত্ব আমাকে পালন করতে হয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি এবং মন্ত্রণালয়েরগুলোতেও কাজ করেছি। সেই কাজের ফলাফল জনগণ হয়ত সামনে পাবে।

নাহিদ বলেন, ছয় মাস খুব কম সময়। আমি আমার চেষ্টা করেছি ফলাফল জনগণ মূল্যায়ন করবে। আজ থেকে মূলত আমি সরকারের কোনো দায়িত্ব নেই।

নাহিদের প্রারম্ভিক বক্তব্যের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়ে দেন-তাদের কাছ থেকে মাত্র তিনটি প্রশ্ন নেওয়া হবে।

এসময় একজন গণমাধ্যম কর্মী জানতে চান, এই পদক্ষেপের ফলে তথ্য উপদেষ্টার শূন্যতা কীভাবে পূরণ হবে? এ প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, আমার পরে কে দায়িত্ব নেবে সেটা ক্যাবিনেটের পরবর্তী সভায় কেবিনেটই ঠিক করবে। আমি আমার জায়গা থেকে মনে করেছি আমার বাইরে প্রয়োজন। এখনো গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন হয়নি। বিচার ও সংস্কারের যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে একটি সরকার গঠিত হয়েছিল সেই সরকারে এখনো দুজন ছাত্র প্রতিনিধি হয়ে রয়েছেন, তারা মনে করেছেন তারা সরকারের থেকেই জনগণের সেবা করবে। তারা যখন রাজনীতি করার প্রয়োজন বোধ করবে তখন হয়তো সরকারের পথ থেকে সরে আসবে।

নতুন দলে অংশগ্রহণের জন্যই কি পদত্যাগ করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, হ্যাঁ, নতুন যে রাজনৈতিক শক্তি ও দল গঠন হচ্ছে সেখানে অংশগ্রহণের আমার অভিপ্রায় রয়েছে। জনগণের সঙ্গে মিশে, আবারও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং আমাদের যে কোনো অভ্যুত্থান এর যে প্রতিশ্রুতি সেটা বাস্তবায়নে মাঠে থেকে কাজ করার লক্ষ্যে আমি সরকার থেকে পদত্যাগ করেছি।

নতুন দলে তিনি কি দায়িত্ব পাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, এটি জানার জন্য ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যেদিন দল ঘোষণা হবে সেদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম গণমাধ্যম কর্মীদের কাছ থেকে তিনটি প্রশ্ন নেবেন বললেও শেষে তিনি নারী গণমাধ্যম কর্মীদের কাছ থেকে আরও একটি প্রশ্ন নেবেন বলে জানান।

এসময় একজন নারী নাহিদ ইসলামের উপদেষ্টা পরিষদের দায়িত্ব পালনের সফলতা ও ব্যর্থতা সম্পর্কে জানতে চাইলে নাহিদ বলেন, আমাদেরতো অনেক সীমাবদ্ধতা ছিলই। আমরা সেই সীমাবদ্ধতা কাটানোর সব সময় চেষ্টা করেছি।

কি ধরনের সীমাবদ্ধতা ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ছিল, আমরা এসে এই ব্যুরোক্রেসিকে যেভাবে পেয়েছি, গণঅভ্যুত্থানের পর এখানে পুলিশের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি হয়েছে, একই সঙ্গে এখানে জুলাইয়ের গণহত্যকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের বিষয়টা, সে বিষয়ে আমাদের কিছুটা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা কাজ করেছি। জনপ্রশাসন কমিটির একটি দায়িত্বে দুই সপ্তাহ ছিলাম। দুই সপ্তাহের মিটিংয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যারা ২০১৮ সালে ডিসি ছিল এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের সরানোর ব্যবস্থা। এ ধরনের কিছু উদ্যোগ আমরা নিয়েছি এবং আশা করবো যে অন্তর্বর্তী সরকার সামনের দিনগুলোতে জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা গণঅভ্যুত্থানে যে আকাঙ্ক্ষা সে আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে তারা সচেষ্ট হবে এবং দেশে যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিরসনে তারা সফলতা দেখাতে পারবে।

এমআইএইচএস/এএসএম

Read Entire Article