নিজ দেশের নাগরিকদের ওপর বিমান হামলা, মিয়ানমারে নিহত ১২

5 hours ago 5

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী যোদ্ধাদের দখলে থাকা একটি গ্রামে বিমান হামলা চালিয়েছে জান্তা বাহিনী। বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে চালানো ওই হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের উদ্বৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে। 

খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার বিকেলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয় থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার (৪০ মাইল) উত্তরে লেতপানহ্লা গ্রামে হামলা চালানো হয়। বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে বিমান থেকে বোমা ফেলা হয়।  

স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্রামের সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি লক্ষ্য করে এই বোমা হামলা চালানো হয়েছে। সিঙ্গু অঞ্চলের এই গ্রামটি পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) এর অভ্যুত্থানবিরোধী গেরিলাদের দখলে রয়েছে। চার বছর আগে সেনাবাহিনী দেশটির বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করার পর তারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ শুরু করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, ‘জনবহুল এলাকায় বোমা ফেলার কারণে অনেক মানুষ নিহত হয়েছে। এটা এমন সময় ঘটেছে, যখন লোকজন বাজারে যাচ্ছিল।’ শনিবার তিনি বলেন, ‘আমরা একটি তালিকা তৈরি করছি। এতে নিহত ১২ জনের নাম নিবন্ধন করেছি।’ 

২০২১ সালের এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে, যা দেশটিকে এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়। বিশ্লেষকরা বলেছেন, বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে জান্তা বাহিনী ক্রমবর্ধমানভাবে বিমান হামলা চালাচ্ছে। 

সামরিক জান্তার শাসন শুরু হওয়ার পর থেকেই মিয়ানমারে অশান্তি শুরু হয়। রাজধানীসহ অন্যান্য শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ-প্রতিবাদে জড়ো হয় হাজার হাজার মানুষ। সেসব বিক্ষোভ কঠোরভাবে দমন করে সেনাবাহিনী। জান্তা বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয় শত শত মানুষের। তবে এখানেই তা থেমে যায়নি।

বহু জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত মিয়ানমারে আগে থেকেই জাতিগত উত্তেজনা চলছিল। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইনের সংখ্যাগরিষ্ঠ রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি অন্যান্য প্রদেশেও জাতিগত সংখ্যালঘুরা বার্মিজ শাসনের অধীনে কয়েক দশক ধরে বৈষম্যের শিকার হয়েছে। কোনো কোনো প্রদেশে সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহও দেখা গিয়েছিল। তেমন একটি প্রেক্ষাপটে জান্তার ক্ষমতা দখল এবং নির্বিচারে গুলি এসব বিদ্রোহীদের দিকেই এগিয়ে দেয় মানুষকে।

মানুষ দলে দলে বিদ্রোহীগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে। জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নেয় তারা। মিয়ানমারে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। দেড় বছরের গৃহযুদ্ধে ইতোমধ্যে অনেকগুলো শহরে জান্তা বাহিনীর পতন ঘটেছে। দেশের ৬০ শতাংশের বেশি এলাকা দখল করে নিয়েছে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো। বিশেষ করে বাংলাদেশ লাগোয়া রাখাইনসহ সীমান্তবর্তী প্রদেশগুলো এখন অনেকটা জান্তার সেনামুক্ত। 

রাখাইনে মাত্র ৩টি জায়গা জান্তার নিয়ন্ত্রণে আছে। রাজ্যের রাজধানী শহর সিত্তে, বন্দরনগনরী কিয়াউকফিউ এবং বঙ্গপসাগরীয় দ্বীপাঞ্চল মানাউং জান্তা বাহিনী ধরে রেখেছে। বাকি ১৪টি শহর দখল করে নিয়েছে আরাকান আর্মি। এছাড়া রাখাইনের বিস্তির্ণ পাহাড়ি গ্রামাঞ্চল বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে।  

Read Entire Article