নিজেকে গর্ভবতী দাবী আটক সেই তন্বীর, চাঞ্চল্যকর তথ্য জানাল পুলিশ

খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির নেতা মো. মোতালেব শিকদারকে গুলির ঘটনায় তনিমা ওরফে তন্বী নামে এক নারীকে আটক করেছে খুলনা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এ ঘটনায় মোতালেবের স্ত্রী রহিমা আক্তার ফাহিমা থানায় মামলা করেছেন। খুলনা মহানগর ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৈমুর হোসেন জানান, সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে তন্বীকে আটক করা হয়। তিনি বলেন, “তদন্তের স্বার্থে আপাতত বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়। আটক নারীকে সিনিয়র অফিসাররা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” কে এই তন্বী, ঘটনা ও প্রাথমিক তথ্যপুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, তনিমা জাতীয় যুবশক্তির খুলনা জেলা শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব। গত ৪ অক্টোবর যুবশক্তির খুলনা জেলা কমিটির অনুমোদিত তালিকায় তিনি ১ নম্বর যুগ্ম সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পান। গুলির সময় তিনি ওই বাসাতেই উপস্থিত ছিলেন। তনিমা বিবাহিত এবং জিজ্ঞাসাবাদে তার স্বামীর নাম তানভির শেখ বলে জানিয়েছেন। তিনি নিজেকে গর্ভবতী বলেও দাবি করেছেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মোতালেব শিকদারকে গুলি করা বাসা থেকে মাদকদ্রব্য ও এক

নিজেকে গর্ভবতী দাবী আটক সেই তন্বীর,  চাঞ্চল্যকর তথ্য জানাল পুলিশ

খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির নেতা মো. মোতালেব শিকদারকে গুলির ঘটনায় তনিমা ওরফে তন্বী নামে এক নারীকে আটক করেছে খুলনা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এ ঘটনায় মোতালেবের স্ত্রী রহিমা আক্তার ফাহিমা থানায় মামলা করেছেন।

খুলনা মহানগর ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৈমুর হোসেন জানান, সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে তন্বীকে আটক করা হয়। তিনি বলেন, “তদন্তের স্বার্থে আপাতত বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়। আটক নারীকে সিনিয়র অফিসাররা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কে এই তন্বী, ঘটনা ও প্রাথমিক তথ্য
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, তনিমা জাতীয় যুবশক্তির খুলনা জেলা শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব। গত ৪ অক্টোবর যুবশক্তির খুলনা জেলা কমিটির অনুমোদিত তালিকায় তিনি ১ নম্বর যুগ্ম সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পান। গুলির সময় তিনি ওই বাসাতেই উপস্থিত ছিলেন। তনিমা বিবাহিত এবং জিজ্ঞাসাবাদে তার স্বামীর নাম তানভির শেখ বলে জানিয়েছেন। তিনি নিজেকে গর্ভবতী বলেও দাবি করেছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মোতালেব শিকদারকে গুলি করা বাসা থেকে মাদকদ্রব্য ও এক নারীর ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। তনিমা ও অজ্ঞাত এক যুবক স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে গত নভেম্বরে ওই বাসাটি ভাড়া নেন। সেখানে মোতালেবের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। ঘটনার পরপরই তনিমা ও তার কথিত স্বামী আত্মগোপনে যান। পরে অভিযান চালিয়ে তনিমাকে আটক করা হয়।

গুলির ঘটনা
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সোনাডাঙ্গার সবুজবাগ এলাকায় একটি বাসার ভেতরে মো. মোতালেব শিকদারকে গুলি করা হয়। আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে মাথার সিটি স্ক্যানের জন্য একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, গুলিটি কানের পাশের চামড়ায় আঘাত করেছে এবং গুরুতর ক্ষতি হয়নি। অস্ত্রোপচারের পর তাকে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়েছে এবং বর্তমানে শারীরিক অবস্থা ভালো।

প্রাথমিকভাবে ঘটনা সোনাডাঙ্গা গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে রাস্তায় ঘটেছে বলে তথ্য দেওয়া হলেও তদন্তে জানা যায়, ‘মুক্তা হাউজ ১০৯’ নামের বাসার নিচতলার একটি ফ্ল্যাটের ভেতরেই মোতালেবকে গুলি করা হয়। পুলিশের মতে, প্রাথমিকভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তদন্তকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল।

উদ্ধারকৃত আলামত ও ঘটনার বিশ্লেষণ
তল্লাশিকালে বাসা থেকে পাঁচটি বিদেশি মদের খালি বোতল, এক রাউন্ড পিস্তলের গুলির খোসা, ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম এবং অনৈতিক কার্যকলাপের আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঘটনার আগের রাতে সাড়ে ১২টার দিকে মোতালেব শিকদারসহ তিনজন ব্যক্তি বাসাটিতে প্রবেশ করেন। সেখানে তন্বীও উপস্থিত ছিলেন। পুলিশের ধারণা, তাদের মধ্যে কোনো অন্তর্কোন্দল থেকেই গুলির ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. তাজুল ইসলাম বলেন, “এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে মাদক ব্যবহারের সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। মূল ঘটনা উদঘাটনে তদন্ত চলমান রয়েছে।”

সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “বাসার ভেতরেই তাকে গুলি করা হয়। শুরুতে তিনি পুলিশকে বিভ্রান্ত করেছিলেন। তবে বর্তমানে শঙ্কামুক্ত।”

স্থানীয়দের ও পরিবারের বক্তব্য
মুক্তা হাউজের মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নাহার জানান, তন্বী এক মাস আগে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসাটি ভাড়া নেন। নিজেকে এনজিওকর্মী হিসেবে পরিচয় দিতেন। তার বাসায় একাধিক পুরুষের যাতায়াত ছিল। অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে তাকে বাসা ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।

মোতালেব শিকদারের স্ত্রী ফাহিমা তাসনিম ঝুমুর জানান, তারা অন্য একটি ভাড়া বাসায় থাকেন এবং ঘটনার বাসাটি তাদের নয়। রোববার রাতে মোতালেব বাসায় ফেরেননি। সোমবার সকালে গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পান।

তদন্তের অবস্থা
পুলিশ সূত্র জানায়, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তদন্তে উঠে এসেছে, তন্বী একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী এবং কয়েক মাস ধরে তার সঙ্গে মোতালেবের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow