অনার্স ভর্তির ক্ষেত্রে বিবিএ প্রোগ্রামটি বেশ গুরুত্ব পায় শিক্ষার্থীদের কাছে। নাম করা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ভর্তির সময় বিবিএর জন্য আবেদন করেন বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী। কিন্তু পড়ার জন্য শিক্ষার্থীরা বিবিএ কেন বেছে নিচ্ছেন? এ বিষয়ে পড়লে কী কী সুযোগ সুবিধা? এ নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. খায়রুল ইসলাম।
জাগো নিউজ: একজন শিক্ষার্থী বিবিএ পড়তে এত আগ্রহী কেন?
মো. খায়রুল ইসলাম: দিনশেষে জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি আমরা মূলত একটি ভালো পেশাজীবন চাই। বিজ্ঞান এবং সামাজিকবিজ্ঞানের কিছু বিভাগ আছে, চাকরির বাজারে যেগুলোর ভালো চাহিদা আছে। সেরকম ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে পড়ে, বিশেষ করে বিবিএ ও এমবিএ প্রোগ্রামে, কর্মসংস্থানের ভালো সুযোগ আছে। এ কারণেই আমি মনে করি, আমরা যখন ভর্তিপরীক্ষা নিই, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী এ বিভাগে ভর্তি হতে চান।
জাগো নিউজ: একসময় বিবিএর একটা ক্রেজ ছিল। এখনও কি এই প্রোগ্রাম নিয়ে পড়া লাভজনক?
মো. খায়রুল ইসলাম: ব্যবসা এমন একটি সাবজেক্ট যা বিভিন্ন পরিস্থিতির সাপেক্ষে পরিবর্তনশীল, ব্যবসায় শিক্ষা কোনো স্ট্যাটিক বিষয় না। দেশের অর্থনীতি, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ইত্যাদির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয় বলে এটি অনেক ফ্লেক্সিবল ও চ্যালেঞ্জিং। অনেক শিক্ষার্থী ভাবেন যে, এই বিভাগে ভর্তি হয়ে কর্পোরেটে আমি আমার ক্যারিয়ার তৈরি করবো। তবে কাঠামোর বাইরে গিয়ে তারা যদি কোনো পটেনশিয়ালিটি (সম্ভাবনাময়তা) দেখাতে পারে, তাহলে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষাটাও এই বিভাগ থেকে পাবেন তারা। আমার মতে, এসব কারণেই এখনও তরুণরা ব্যবসায় প্রশাসনে বিবিএ-এমবিএ করতে আগ্রহী।
জাগো নিউজ: যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কীভাবে সিলেবাস হালনাগাদ করা হয়?
মো. খায়রুল ইসলাম: আমাদের বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে প্রজন্মের বৈচিত্র আছে। অনেক সিনিয়র যেমন আছেন, তেমনই একদম নতুন, তরুণ প্রজন্মের ফ্যাকাল্টিও আছেন। অধ্যাপক থেকে প্রভাষক পর্যন্ত সবগুলো পদে আমাদের উপযুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন। সিলেবাস তৈরির সময় আমরা অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদেরও ডেকে থাকি। নতুন আইডিয়া, সমসাময়িক বিষয়গুলো সিলেবাসে সংযুক্ত করতে তারা আমাদের সাহায্য করেন। সবগুলো প্রোগ্রামের সিলেবাসের ক্ষেত্রেই এটা করা হয়। ফলে আমি এই বিভাগে পড়াকে বেশ সময়পোযোগী একটা সিদ্ধান্ত বলবো।
জাগো নিউজ: এ বিভাগের কারিকুলাম শিক্ষার্থীদের কর্মজীবন ও সার্বিক বিকাশে কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে?
মো. খায়রুল ইসলাম: শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা এখন ওবিই পদ্ধতিতে কারিকুলাম তৈরি করছি। ওবিই হলো আউটকাম বেজড এডুকেশন। আমরা ক্লাসেও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করি যে, তারা দেশে ও দেশের বাইরে কীভাবে কাজ করে নিজেদের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করতে পারে। এ কারণে আমাদের বিভাগের অনেক শিক্ষার্থী দেশ-বিদেশের কর্মক্ষেত্রে বেশ ভালো পদে কাজ করছে। কারিকুলামে নতুন যে সাবজেক্টগুলো আমরা ছাত্রাবস্থায় নিজেরা পড়িনি, কিন্তু শিক্ষক হিসেবে পড়াই, সেগুলোকে চাকরির বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সাজাতে হয় আমাদের। যেহেতু আমাদের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির একটি বৈচিত্রময় ফ্যাকাল্টি আছে, তাই নতুন নতুন এই বিষয়গুলো আমরা আগ্রহের সঙ্গে কারিকুলামে সংযুক্ত করতে পারি। আমরা চাই, আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন কর্পোরেটের চাহিদা অনুযায়ী তৈরি হয়েই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারে।
- আরও পড়ুন:
বিবিএ পড়া কি এখন যৌক্তিক
পরিবেশবিজ্ঞান পড়া কেনো যুগোপযোগী - শিক্ষার্থীদের গুরুত্বের সঙ্গে গবেষণা শেখানো হয়
- লোক প্রশাসন পড়ার সুবিধা-অসুবিধা
জাগো নিউজ: পড়াশোনা শেষে ইন্টার্নশিপ ও চাকরির ব্যাপারে কি বিভাগ কোনো সহযোগিতা করে?
মো. খায়রুল ইসলাম: বিভাগের যে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আছে, সেখানে সাবেক শিক্ষার্থীদের খোঁজ পাওয়া যায়। তারা একটা ডেটাবেজ তৈরি করেছেন। ফলে চলমান শিক্ষাবর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের ইন্টার্নশিপের জন্য আমরা সাবেকদের কাছ থেকে যথেষ্ট সহায়তা পাই। কর্মজীবনে আমাদের শিক্ষার্থীদের এগিয়ে দিতে আমরা সর্বদা চেষ্টা করে যাচ্ছি। সেইসঙ্গে সাবেক শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে আমাদের পাশে থাকছে। তাই চাকরি ও উদ্যোক্তা হওয়া, উভয় ক্ষেত্রেই আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা দেখছি।
জাগো নিউজ: আপনার বিভাগ কি যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে?
মো. খায়রুল ইসলাম: বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম তো চলমান একটি প্রক্রিয়া। এটার কোন শেষ নাই। প্রতি সেমিস্টারে নতুন শিক্ষার্থী আসছে। আমাদের ক্যাপাসিটি, ক্যাপাবিলিটি ও রিসোর্স দিয়ে তাদের যতটা এগিয়ে নেওয়া সম্ভব, আমরা সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা মনে করি যে, প্রতিনিয়ত আমাদের আরো বেশি কিছু করা দরকার, যাতে দেশের এবং সমাজের উন্নতিতে আরো শক্তিশালী ভূমিকা আমাদের ছাত্ররা রাখতে পারে।
জাগো নিউজ: শিক্ষার্থীরা পাশ করার পর ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ আছে কোন কোন সেক্টরে?
মো. খায়রুল ইসলাম: ব্যবসা প্রশাসন বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করলে চাকরিজীবনে বেশকিছু সেক্টরে কাজ করার সুযোগ আছে। আপনি চাইলে বিসিএসও দিতে পারবেন, কলেজ ক্যাডারে যেতে পারবেন, প্রশাসন ক্যাডারে যেতে পারবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারবেন, বিভিন্ন ব্যাংকে ভালো পজিশনে যেতে পারবেন। আপনি বাংলাদেশ ব্যাংকেও যেতে পারবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশে বড় একটি কর্পোরেট ক্ষেত্র আছে, যারা দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। সেখানেও চাকরির প্রচুর সুযোগ আছে। কর্পোরেটের কোথায় অ্যাকাউন্ট মানেজার বা ফাইন্যান্স ম্যানেজার লাগে না? সব সেক্টরেই বিবিএর শিক্ষার্থীর চাহিদা আছে। এমপ্লয়ারের চাহিদা অনুযায়ী নিজেদের প্রস্তুত করলে আমাদের শিক্ষার্থীদের কাজের অভাব নেই, সরকারি-বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই। আমি অন্য কোন বিভাগের সঙ্গে তুলনা করতে চাচ্ছি না, কিন্তু আমি নিজে ব্যবসার শিক্ষার্থী হিসেবে আমার মনে হয়েছে যে, পাস করে বের হয়ে আমি অনেক ধরণের সুযোগ পেয়েছিলাম।
জাগো নিউজ: আপনাদের গ্র্যাজুয়েটরা বিদেশি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারেন?
মো. খায়রুল ইসলাম: অবশ্যই। বাইরে যেমন পড়তে যাওয়ার ভালো সুযোগ আছে, তেমনি আমাদের অ্যালামনাইরা নামকরা বিদেশি কোম্পানিতে আছেন। যেমন, ব্যাট, নেসলে প্রভৃতি। বিভিন্ন কর্পোরেটে তারা ইন্টার্নশিপও করেন। আমাদের কারিকুলামে ইন্টার্নশিপ ও গবেষণা থাকায় শিক্ষার্থীরা সরাসরি বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যেতে পারছে সহজে। এসব কারণেই এখন যারা উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান, তারা ব্যবসা প্রশাসনের বিবিএ প্রোগ্রামটি নির্বাচন করতে পারেন। অন্য বিভাগ থেকে যারা অনার্স শেষ করেছেন, তারাও এমবিএ করলে চাকরির ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা পেতে পারেন।
আরও পড়ুন:
- শিক্ষার্থীদের গুরুত্বের সঙ্গে গবেষণা শেখানো হয়
জুলাই বিপ্লব যুক্ত হবে রাবির ইসলামের ইতিহাস কারিকুলামে
বায়োটেক পোশাকশিল্পকেও ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম
এএমপি/আরএমডি/জেআইএম