নিজের শক্তি-দুর্বলতা না জানলে হাজার কোচেও উন্নতি হবে না: বাশার

21 hours ago 9

‘এ কী হতচ্ছাড়া অবস্থা বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের! ব্যাটাররা কি ব্যাটিং ভুলে গেলেন? কাকে কিভাবে খেলবেন, কার বলে কোনদিকে খেলে রান করবেন; এসব কৌশল কি আমাদের ব্যাটাররা ভুলে গেছেন? নাকি আসলে তাদের সামর্থ্যেই ঘাটতি-কমতি আছে প্রচুর? তবে কি টেকনিক, স্কিলেই যত দুর্বলতা টাইগার ব্যাটারদের?’ গোটা দেশের ক্রিকেট অনুরাগীর মুখে মুখে এসব প্রশ্ন।

বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে মহাদুশ্চিন্তায় ভক্ত ও সমর্থকরা। টাইগার ভক্তদের মধ্যে যে অংশটি সচেতন, তারা ব্যাটিংয়ের সমস্যা চিহ্নিত করার পাশাপাশি তার সমাধান খুঁজতেই বেশি আগ্রহী।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির পরবর্তী সময়ের প্রথম সফল ব্যাটার হাবিবুল বাশার সুমন জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে অনুজপ্রতিম পারভেজ ইমন, সাইফ হাসান, তাওহিদ হৃদয়, জাকের আলী, শামীম পাটোয়ারী, নুরুল হাসান সোহানদের বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের ভালো খেলার কৌশল না, পথ বাতলে দিয়েছেন বর্তমানে দেশের ক্রিকেটের গেম ডেভেলপমেন্ট প্রধান।

কী সেই পরামর্শ? তাহলে শুনুন। অনেক কথার ভিড়ে দেশের ক্রিকেটের সবসময়ের অন্যতম কুশলী ব্যাটার বর্তমান প্রজন্মকে খেলা নিয়ে আরও অনেক বেশি চিন্তা করার পরামর্শ দিয়েছেন। হাবিবুল বাশার সুমনের কথার সারমর্ম হলো, অর্থনৈতিক-অবকাঠামোগত এবং আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কোনোই কথা বলার বা অভিযোগ তোলার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী দেশের জাতীয় দলে খেলা ক্রিকেটাররা সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন। তাদের সুযোগ-সুবিধায় ঘাটতি নেই। এক ঝাঁক নামী, হাই-প্রোফাইল বিদেশি কোচ আছেন। প্র্যাকটিস মাঠ, উইকেট ও প্রয়োজনীয় উপকরণ সবই বেশ আধুনিক। তাই অজুহাতের কোনোই সুযোগ নেই।

বাশার বলেন, ‘আমি সমস্যা নিয়ে কথা বলব না। আমার ফোকাস মূলত একদিকে। ব্যাটারদের এখন একটাই কাজ, নিজের খেলাটা বোঝা। সব ব্যাটারের উইক পয়েন্ট থাকে। সব ব্যাটারেরই আবার প্লাস পয়েন্টও থাকে। এক কথায়, দুনিয়ার সব ব্যাটারের দুর্বলতা, ঘাটতি ও কমতির পাশাপাশি অনেক ভালো দিক থাকে। উইক পয়েন্ট আর স্ট্রং পয়েন্ট দুটোই থাকে সবার। বিরাট কোহলির মতো বিশ্বসেরা ব্যাটারেরও দুর্বলতা আছে। তারও দুর্বল দিক আছে, আবার স্ট্রং পয়েন্ট তো আছেই- যার ফিরিস্তি দিয়ে শেষ করা কঠিন। তবে দুর্বলতাও কিন্তু আছে।’

‘এখন আসল কথা হলো, সেই-ই তত ভালো ও দক্ষ ব্যাটার যে নিজের দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতা ও ঘাটতিগুলো জানে বোঝে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হলো প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ। এখানে আপনি যদি নিজের ভুল, দুর্বলতা, ঘাটতি ও কমতি চিহ্নিত করে সমাধানের যথাযথ ও কার্যকর উদ্যোগ না নেন, তাহলে প্রতিনিয়তই পিছিয়ে পড়বেন। খেলা নিয়ে শুধু পড়ে থাকলে চলবে না। আধুনিক ক্রিকেটে ভিডিও অ্যানালিস্ট, কম্পিউটার অ্যানালিস্ট কাজ করেন। তারা একজন ব্যাটারের ভালো-মন্দ, ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে কাজ করেন। সবার ব্যাটিংয়ের আদ্যোপান্ত এখন সব দলের অ্যানালিস্টদের খুব ভালো জানা। এখন সবাই সবার উইক পয়েন্ট ও স্ট্রং জোন বের করে ফেলে। তাই আপনাকে প্রতিনিয়ত নিজের খেলাটার উন্নতির চেষ্টা করতে হবে।’

এর বাইরে হাবিবুল বাশার মনে করেন, খেলার প্যাটার্নটা বোঝাও খুব দরকার। এ প্রসঙ্গে তার কথা, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আপনাকে সবসময় মাথায় রাখতে হবে, আপনি মাঠে নামলেই কিছু ভালো বোলার পাবেন, আবার কিছু গ্রেট বোলারও থাকবে। আপনাকে তাদের বলেই রান করতে হবে। তাদেরকেই সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। ওই সব হাই-কোয়ালিটি বোলারদের বলে ভালো খেলার পাশাপাশি স্কোরিং শট বাড়াতে হবে। কোচেরা থাকেন সাহায্য করার জন্য। কিন্তু আসল কাজটা করতে হবে ক্রিকেটারদেরই। সে কিভাবে সাকসেস হতে পারে, এটা নিজেকেই খুঁজে বের করতে হবে। নিজেকে জানতে ও বুঝতে হবে। এটা যদি কেউ না বুঝতে পারে, তা যদি কেউ না জানে, তাহলে হাজার কোচ দিয়েও কোচিং করালেও কোনো উন্নতি হবে না। সাফল্য ধরা দেবে না।’

এআরবি/এমএমআর

Read Entire Article