নিরবে নিভৃতে পার হলো সরিষাবাড়ী হানাদার মুক্ত দিবস

নিরবে নিভৃতে পার হলো ১২ ডিসেম্বর সরিষাবাড়ী থানা শত্রুমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ১২ ডিসেম্বর সরিষাবাড়ীবাসীর কাছে অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল ও স্মরণীয় দিন। এই দিনে মিত্রবাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে তৎকালীন জামালপুর মহকুমার সরিষাবাড়ী থানা শত্রুমুক্ত করতে সক্ষম হন। অতীতের মতো হানাদারমুক্ত দিবস দায়সারা ভাবে পালিত হওয়ায় স্থানীয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা গেছে। বাউসী পপুলার মোড় এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা স্মরণীতে জাতীয় ও মুক্তিযোদ্ধা পতাকা উত্তোলন না করেই ‘সরিষাবাড়ী উপজেলা কমান্ড’ এর নামে আবর্জনাযুক্ত স্মরণীর পাদদেশে শুধুমাত্র একটি পুষ্পস্তবক দিয়েই দিবসটি পালন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি 'খুবই দুঃখজনক' বলে মন্তব্য করে মুক্তিযোদ্ধারাদের প্রতি অবমাননা ও অশ্রদ্ধার শামিল বলে সচেতন নাগরিক মহল মনে করেন।উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ১১নং সেক্টরের মহেন্দ্রগঞ্জ সাব সেক্টর এবং সেক্টর হেডকোয়ার্টার ক্লোজ করার পর সেকেন্ড সেক্টর কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার এম. হামিদুল্লাহ খান যুদ্ধকালীন কমান্ডার সুবেদার নূ

নিরবে নিভৃতে পার হলো সরিষাবাড়ী হানাদার মুক্ত দিবস

নিরবে নিভৃতে পার হলো ১২ ডিসেম্বর সরিষাবাড়ী থানা শত্রুমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ১২ ডিসেম্বর সরিষাবাড়ীবাসীর কাছে অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল ও স্মরণীয় দিন। এই দিনে মিত্রবাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে তৎকালীন জামালপুর মহকুমার সরিষাবাড়ী থানা শত্রুমুক্ত করতে সক্ষম হন।

অতীতের মতো হানাদারমুক্ত দিবস দায়সারা ভাবে পালিত হওয়ায় স্থানীয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা গেছে। বাউসী পপুলার মোড় এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা স্মরণীতে জাতীয় ও মুক্তিযোদ্ধা পতাকা উত্তোলন না করেই ‘সরিষাবাড়ী উপজেলা কমান্ড’ এর নামে আবর্জনাযুক্ত স্মরণীর পাদদেশে শুধুমাত্র একটি পুষ্পস্তবক দিয়েই দিবসটি পালন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি 'খুবই দুঃখজনক' বলে মন্তব্য করে মুক্তিযোদ্ধারাদের প্রতি অবমাননা ও অশ্রদ্ধার শামিল বলে সচেতন নাগরিক মহল মনে করেন।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ১১নং সেক্টরের মহেন্দ্রগঞ্জ সাব সেক্টর এবং সেক্টর হেডকোয়ার্টার ক্লোজ করার পর সেকেন্ড সেক্টর কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার এম. হামিদুল্লাহ খান যুদ্ধকালীন কমান্ডার সুবেদার নূরুল ইসলামকে সরিষাবাড়ী দখলের নির্দেশ দেন। নূরুল কোম্পানি ও নাজিম কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা সন্ধ্যায় সাতপোয়া ইউনিয়নের চর জামিরা গ্রামে পৌঁছান। পরদিন পূর্ব থেকে অবস্থানরত রশিদ কোম্পানি, লুৎফর রহমান লোদা কোম্পানি, ফজলুর রহমান কোম্পানি মিলে এলাকার রাজাকার ও আলবদরদের অস্ত্রসহ আটক করে থানায় নিয়ে যান। ৮ ডিসেম্বর যুদ্ধকালীন কমান্ডার নূরুল ইসলাম, তৎকালীন এমপি আঃ মালেক, ইউপি চেয়ারম্যান আঃ মজিদ এর নেতৃত্বে সরিষাবাড়ী থানায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। পুরো সরিষাবাড়ী রাজাকার মুক্ত করার একপর্যায়ে ৪নং আওনা ইউনিয়নের জগন্নাথগঞ্জ ঘাট এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর প্রতিরোধের মুখে পড়েন। আত্মবিশ্বাসী মুক্তিবাহিনীর হামলা আর প্রবল প্রতিরোধের মুখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পিছু হটে এবং ১৪৬ জন পাক সেনা জগন্নাথগঞ্জ ঘাট এলাকায় অবস্থান নেয়। ১১ ডিসেম্বর রাতেই নাজিম কোম্পানি, আনিস কোম্পানি, রশিদ কোম্পানি, নূরুল কোম্পানি, লুৎফর কোম্পানি ও ফজলু কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর সহায়তায় জগন্নাথগঞ্জ ঘাটে যৌথ অভিযান চালান।

সারারাতের অভিযান ও সম্মুখ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা সকল পাক সেনাদের পাকড়াও করতে সক্ষম হন। পরদিন ১২ ডিসেম্বর ভোরে মিত্রবাহিনীর হাতে তাদের হস্তান্তর করা হয়। ওইদিনই এলাকার রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গদের সহায়তায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা ঐতিহাসিক গণময়দানে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে সরিষাবাড়ী থানা শত্রুমুক্ত ঘোষণা করেন। সরিষাবাড়ীর আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হতে থাকে বিজয়ের গান। উল্লাসে মেতে ওঠে মুক্তিকামী মানুষ।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow