নির্বাচনী প্রচারণায় মাইকিং, শব্দদূষণ থেকে বাঁচতে সিইসিকে চিঠি

1 week ago 9

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার মাইক থেকে বিকট শব্দে প্রার্থীর পক্ষে প্রচার বাজছে। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে হাসপাতালের রোগীও রেহাই পাচ্ছেন না। নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিলে মোট ১৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ হিসাবে ১৭ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ২৫২টি মাইক চলছে দুপুর ২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত।

এ পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী শব্দ দূষণ প্রতিরোধে বিশেষ করে নির্বাচনী প্রচার মাইকিংয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছেন ঝিনাইদহের ‘শব্দদূষণ প্রতিরোধ আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠনের কর্মী এস এম রবি। রোববার (৫ মে) তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আওয়ালের কাছে এই চিঠি ডাকযোগে পাঠান।

চিঠিতে তিনি লিখেছেন-

‘জনাব কাজী হাবিবুল আওয়াল (সিইসি),
আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক, আমি এস.এম রবি, দেশের বোবা মানুষের পক্ষ থেকে আপনার নিকট এই পত্র লিখছি। গেলো ২৫ এপ্রিল আমার ফোনে, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এসএমএস দিয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে শব্দ সচেতনতা দিবস সম্পর্কে। তার মানে শব্দ যে একটি দূষণ এটি সরকার জানে এবং দিবসটি সরকার পালন করে। আপনিও সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ তাই আপনি এ বিষয়ে অবগত আছেন বলে বিশ্বাস রাখি। হয়তো সেই কারণেই নির্বাচনী প্রচারে মাইকিং শব্দমাত্রা ৬০ ডেসিবেল নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ব্রিটিশ ভারতের প্রথম নির্বাচনে মাইকিং ব্যবহার হয়েছে কিনা এ বিষয়ে জানার জন্য চেষ্টা করলাম কিন্তু কোনো সঠিক তথ্য পেলাম না। ঠিক কোন নির্বাচনে প্রথম মাইকিংয়ের ব্যবহার শুরু হয় সেটিও পেলাম না। না জেনেই বলছি উন্নত বিশ্বের কোন দেশের নির্বাচনী প্রচারণায় এমন মাইকিং ব্যবহার হয় বলে আমার বিশ্বাস হয় না। আপনি হয়তো এতক্ষণে বুঝে ফেলেছেন আমি আপনাকে কিজন্য এই পত্র লিখছি।

আপনার সম্পর্কে গুগোল করে আপনার বৈচিত্রময় জীবন সম্পর্কে জানতে পারলাম। একটি ভালো পরিবার থেকে উঠে এসেছেন আপনি, এই কমিশন থেকে বিদায় নেওয়ার পর আর কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়ার সুযোগ হয়তো আপনার নাও হতে পারে। তাই আপনার ক্ষমতা বলে আপনি আমাদের একটু বাঁচান। আপনাদের নির্ধারণ করে দেওয়া ৬০ ডেসিবেল শব্দমাত্রা এখন পর্যন্ত একজন প্রার্থীও মানেনি। প্রচারে প্রসার এমন একটি প্রবাদ আমাদের দেশের মানুষের মুখেমুখে আছে। তাই যে যেভাবে পারছে সে সেভাবে শব্দমাত্রা তীব্রতর করে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিলে মোট ১৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ছোট্ট একটি পৌরসভায় গাদাগাদি করে মানুষের বসবাস। অথচ এই পুরো এলাকার মধ্যে ১৪টি মাইক বেলা ২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চিৎকার করতে করতে মানুষের কলিজায় আঘাত করছে। শিশু, বৃদ্ধা, গর্ভবতী, হার্টের রোগীরা সহ্য করতে পারছে না। প্রত্যেক ইউনিয়নে চলছে ১৪টি মাইক। সেই হিসাবে ১৭ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ২৫২টি মাইক চলছে। আমি ও বোবা মানুষ যারা সকলেই এই রাষ্ট্রের মালিক অথচ তারা এই অসভ্যতা সহ্য করে যাচ্ছে, কিন্তু কথা না বলে বোবা থাকছে। আমার আকুতি, আপনি আমাদের বাঁচান। এই গরমে এমনিই দম আটকে আসছে। তারপর কলিজায় আঘাত করছে এই দূষণ। আমার প্রশ্ন, যেটি দূষণ সেটি কেন এখনো অনুমতির মধ্যে রেখেছেন। এটা কি প্রচারণা? নাকি ক্ষমতার শাব্দিক প্রকাশ?

আমি এই পত্রের মাধ্যমে আপনার কাছে অনুরোধ করছি। নির্বাচনী প্রচারণা থেকে মাইকিং বন্ধ করে দিন। সবকিছু ইউরোপ, আমেরিকা থেকে দেখে শিখতে হবে কেন। আমরা এমন কিছু করি যেটা দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে। পৃথিবী জেনে যাক শব্দদূষণ সৃষ্টি করাই বাংলাদেশ নির্বাচনী ব্যবস্থা থেকে মাইকিং নিষিদ্ধ করেছে।’

এ বিষয়ে শব্দদূষণ প্রতিরোধ আন্দোলন সংগঠনের কর্মী এস এম রবি বলেন, ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে পরিমাণ মাইক বাজছে তাতে বসবাস করা কষ্ট হয়ে পড়েছে। এই শব্দ দূষণের জন্য প্রতিনিয়ত মানুষ কানের সমস্যাসহ নানা রোগে ভুগছেন। এজন্য সবার পক্ষ থেকে আমার এই চিঠি পাঠানো।

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এফএ/জেআইএম

Read Entire Article